Ajker Patrika

রোহিঙ্গাদের চাওয়া অর্থ ও কর্মসংস্থান

তাসনিম মহসিন
রোহিঙ্গাদের চাওয়া অর্থ ও কর্মসংস্থান

ঢাকা: দেখো, আমাদের রোহিঙ্গাতে (রাখাইনে) নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এখানে নিয়ে এসেছে। এখন যেতে দিচ্ছে না। আমাদের আটকে রেখেছে, নির্যাতন করছে। এর বিচার চাই। একটি ভিডিওতে এমনটাই জানাচ্ছিলেন ভাসানচরে থাকা এক রোহিঙ্গা।

গত সোমবার ভাসানচর পরিদর্শনে যায় বাংলাদেশে সফরে আসা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার। আর তাঁরা ভাসানচরে গেলে সেখানকার রোহিঙ্গারা একত্রে জড়ো হয়ে আন্দোলন করতে থাকে। আন্দোলনরত রোহিঙ্গাদের ছত্রভঙ্গ করতে সেখানে লাঠি চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হঠাৎ করে রোহিঙ্গারা যে আন্দোলন করবে তার কোন আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছিল না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে।

জাতিসংঘের সূত্র বলছে, বাংলাদেশ সফররত ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনার রউফ মাজাও ও গিলিয়ান ট্রিগস ভাসানচর গেলে দ্বীপটিতে থাকা রোহিঙ্গারা একত্র হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। আন্দোলনের সময়ে রেশন, মাসিক ভাতা, কর্মসংস্থান, উন্নত চিকিৎসা, ভাসানচরে আটকে রাখাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ করে রোহিঙ্গারা।

পশ্চিমা কূটনৈতিকের কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আটকে রাখার অভিযোগে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ স্থায়ী কর্মসংস্থান ও অর্থ চায়। সেই সঙ্গে খাবার কমে আসা এবং খাবারের মান নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে দ্বীপটিতে থাকা নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ভাসানচরের জন্য সরকারের বাজেট চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। আর ২০২১ সালের জাতিসংঘের ঘোষিত যৌথ সারাদান পরিকল্পনায় (জেআরপি) অর্থায়নের জন্য যুক্ত করা হয়নি। ফলে এক প্রকার অনিশ্চয়তায় পড়েছে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা। আগামী ২০২২ সালের আগে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া জেআরপিতে ভাসানচরের অর্থায়নের বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে না। আর বাংলাদেশের সরকারের আগামী বাজেটে ভাসানচরের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ থাকবে কি না, তাও নিশ্চিত নয়। সব মিলিয়ে দ্বীপটিতে নিজেদের বন্দী হিসেবে বিবেচনা করছে রোহিঙ্গারা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কক্সবাজারের থেকে উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকলেও রোহিঙ্গারা ভাসানচরে থাকতে চায় না। ভাসানচরে থাকলে আয়ের সুযোগ থাকে না রোহিঙ্গাদের। কক্সবাজারে থাকলে সেখানে দিন মজুর বা আশপাশের এলাকাতে কাজ করে আয় করতে পারে রোহিঙ্গারা। আর এ রোহিঙ্গাদের একটি শ্রেণি রয়েছে যারা মানব ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন উপায়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে চায় তারা।

ঢাকায় পশ্চিমা এক দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এত দিন ভাসানচরের ব্যয় বহন করছিল বাংলাদেশ সরকার। আসছে বাজেটে নতুন বরাদ্দ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। আর ভাসানচর নিজের অর্থে চালানোতে আগ্রহী না বাংলাদেশ। এখানে বাংলাদেশ চায় জাতিসংঘ ভাসানচরের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। ফলে সার্বিক বিবেচনায় খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে একটি অসন্তোষ শোনা যাচ্ছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গা একত্রে থেকে আন্দোলন-বিক্ষোভ করার সাহস পায় না। সেখানে ১৮ হাজারের সাহস পাওয়ার কথা না। এর আগে রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচরে পরিদর্শনে গিয়েছিল। সেখানে কোন রকম বিক্ষোভ করেনি তারা। কিন্তু করেছে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামনে। যার অর্থ দাঁড়ায়, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে জাতিসংঘকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্ররোচনা করছে। পুরো বিষয়টি নিজেদের পক্ষে আনতে হতাশা ও উন্মাদনা দেখানো চেষ্টা করেছে রোহিঙ্গারা। এখন রোহিঙ্গারা স্বপ্রণোদিত হয়ে কাজটি করেছে কিনা তা প্রশ্নের বিষয়।

হঠাৎ করে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারা স্থায়ী চাকরির সুযোগ চায়। এটা তো আমাদের পক্ষে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। কক্সবাজারে আমাদের পুরো বিষয়টি গোছাতে সময় লেগেছে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। আর ভাসানচরে সরকার একাই কাজ করছে এবং যথেষ্ট করেছে। মশারি থেকে শুরু করে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ভাসানচরে আমাদের পক্ষ থেকে অব্যবস্থাপনা নেই। মানুষের তো চাহিদার শেষ নেই। রোহিঙ্গাদেরও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
খাদ্যের সংকট বা মান নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্সবাজারে যে খাবার দেওয়া হয়, তার থেকে একটু বেশিই দেওয়া হয় ভাসানচরে। আর আগামী ৪ থেকে ৫ মাসের মজুত রয়েছে আমাদের কাছে।

ভাসানচরে কর্মরত গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতিসংঘের পুরো সফর সূচীটিই নির্ধারিত ছিল। ভাসানচর পরিদর্শনে তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও মত বিনিময় করত।

কিন্তু যে মাজিদের (দল প্রধান) ঠিক করা হয়েছিল শুধু তাদের কথা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। ফলে তারা একত্র হয়ে তাদের কথা জানাতে চেয়েছিল। রোহিঙ্গারা যে এভাবে বিক্ষোভ করবে তার আগাম কোন তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।

এদিকে ভাসানচরের এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সফররত ইউএনএইচসিআরের দুই সহকারী হাইকমিশনারসহ প্রতিনিধি দল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল, এর কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে।

ঘটনার তিন মাস পর আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল, পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তাঁর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন। এই পুরো তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তার মধ্যে এক্সপার্ট আছেন, আই উইটনেস আছেন, ভিকটিমস আছেন। সবার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উনারা ১৬৮টি তথ্য উদ্‌ঘাটন করেছেন এবং তার মধ্যে তাঁরা ৩৩টি রিকমেন্ডেশন করেছেন। প্রতিবেদনে অনেকগুলো ফাইন্ডিংসে অনেকগুলো রিকমেন্ডেশন এসেছে।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানবন্দর ও আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ও ফোমের মতো উপকরণ থাকা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের পথে যে অংশ পড়ে (ফানেল), তার মধ্যে নির্মিত কাঠামোর উচ্চতার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই ওঠানামার পথ বা ফানেলের আশপাশে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী হাসপাতাল, স্কুল বা বেশি জনসমাগম হয় এমন স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৬ জন নিহত হয়, এর অধিকাংশই শিক্ষার্থী। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন।

এ ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত, কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর ও ব্যাংকের কার্ডসংক্রান্ত তথ্য জানতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মহিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কখনোই কোনো নাগরিকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বর জানতে চায় না। নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সসেবা দেওয়া হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে এ ধরনের দুটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আরপুর বাগানপাড়া এলাকার এক বাসিন্দাকে প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায়। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে ৯৯৯ থেকে স্থানীয় থানার সঙ্গে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় এবং ঘটনাটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

আরও এক ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয় এবং বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য দাবি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর কোনো অবস্থায় কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকা ও তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা বা ৯৯৯ নম্বরে জানাতে জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত