র‍্যাবকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার ঠেকাতে হচ্ছে নতুন আইন

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অতীতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ইউনিট র‍্যাব নিজেদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে নতুন উদ্যোগের কথা জানিয়েছে। পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এ দেওয়া উপস্থাপনায় বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান জানান, র‍্যাব সদস্যদের দায়িত্ব পালনে কোনো অন্যায় বা একক সিদ্ধান্তে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ ঠেকাতে গঠিত হয়েছে মানবাধিকার সেল ও অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল। একই সঙ্গে র‍্যাবকে কঠোরভাবে আইনি কাঠামোয় আনতে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘র‍্যাব আইন ২০২৪ (খসড়া)’।

গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫। দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে সকাল থেকে একে একে উপস্থাপনা দেয় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট—সিআইডি, র‍্যাব, পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, হাইওয়ে পুলিশ, এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ, নৌ পুলিশ ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ। প্রতিটি ইউনিট তাদের কার্যক্রম ও সাফল্যের পাশাপাশি সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে। বিশেষ করে মামলার তদন্ত, অভিযানের ব্যয় এবং অজ্ঞাতনামা লাশের ব্যবস্থাপনায় কোনো সরকারি বরাদ্দ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউনিটগুলো।

দ্বিতীয় দিনে র‍্যাবের উপস্থাপনায় বাহিনীটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করেন মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। র‍্যাবের পক্ষ থেকে দেওয়া উপস্থাপনায় তিনি বলেন, এই বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা যেন নিয়ন্ত্রণহীন না হয়ে ওঠেন, সে জন্য মানবাধিকার সেল এবং অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাব আইন ২০২৪ (খসড়া) প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন, যার মাধ্যমে বাহিনীটিকে কার্যকরভাবে আইনের আওতায় আনতে চায় সরকার। এতে র‍্যাব আর কারও খুশিমতো ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ পাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মামলার তদন্তে নির্ধারিত বাজেট এতটাই অপ্রতুল যে অনেক সময় নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের।

তদন্তপ্রক্রিয়া এবং অজ্ঞাতনামা লাশের ব্যবস্থাপনার পেছনে বরাদ্দ না থাকায় পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। গতকালের উপস্থাপনায় সেই দাবিগুলো আবারও জোরালোভাবে উঠে এসেছে।

সিআইডির উপস্থাপনা দিয়ে গতকাল দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক গাজী জসীম উপস্থাপনা করেন। এতে জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সিআইডি বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অপরাধ তদন্তে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের অজানা সম্পদ খুঁজে বের করার কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকার সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। এস আলম, বেক্সিমকো, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ বড় বড় করপোরেট হাউসের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।

সিআইডির প্রধান বলেন, এসব সাফল্যের মধ্যে রয়েছে তীব্র সংকট। যানবাহনের অভাব, নিজস্ব স্থাপনার ঘাটতি, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও টুলসের অভাব এবং বদলির অনিশ্চয়তা অনেক সময় কাজের গতিকে শ্লথ করে। মাঠপর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব না থাকায়ও তদন্ত বিলম্বিত হয়।

হাইওয়ে পুলিশের উপস্থাপনায় মহাসড়কে নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তারা উল্লেখ করে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহাসড়ক নিয়ে প্রচারিত অনেক তথ্য গুজবভিত্তিক। তবে মহাসড়কে নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয় তারা।

অন্য ইউনিটগুলোও যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো, অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাধীন সাইবার ইউনিট গঠন, পুলিশ মেডিকেল কলেজ স্থাপন, নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি এবং অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের দাবি তোলে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন দাবি ও সংকট নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।