Ajker Patrika

পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা, তবু দায়িত্বের বোঝা

  • কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এখনো কাটেনি।
  • মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সর্বোচ্চ চার উইংয়ের দায়িত্ব এক কর্মকর্তার।
  • সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত অনুমোদিত পদ ৩৬৯৬টি।
  • সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পদে আছেন ৬৪৯০ কর্মকর্তা।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ১৬
পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তা, তবু দায়িত্বের বোঝা

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমের মূল দায়িত্ব জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগে। এর অতিরিক্ত হিসেবে তাঁকে প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ, কমিটি ও অর্থনৈতিক অনুবিভাগ এবং অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরও সামলাতে হচ্ছে। এই বিভাগের নিচের স্তরের অনেক কর্মকর্তাকেও একাধিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

শুধু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে একজন কর্মকর্তাকে। অথচ জনপ্রশাসনে পদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আট মাসের বেশি সময় পরও জনপ্রশাসনে এমন অবস্থা। কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় জটিলতা এখনো কাটেনি। ফলে প্রশাসনে কাজেও গতিসঞ্চার হয়নি।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, অনুমোদিত পদের থেকে বেশি কর্মকর্তা থাকার পরও একজনকে একাধিক উইংয়ের দায়িত্বে রাখা শীর্ষ আমলাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এতে জনসেবা বিঘ্নিত হবে, প্রশাসনের কাজও ব্যাহত হবে। কারণ, একজন কর্মকর্তার পক্ষে একাধিক উইং সামলানো সম্ভব নয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যেসব উইংয়ের শীর্ষ পদে যুগ্ম সচিবদের পদায়নের কথা ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগ পদে এখন অতিরিক্ত সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। গত ২০ মার্চ যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে উইং প্রধান হিসেবে পদায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একজন কর্মকর্তার একাধিক দায়িত্ব থাকলে প্রশাসনে কাজ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জনসেবা বিঘ্নিত হবে বলে মত সাবেক আমলাদের। তাঁরা বলছেন, কাউকে দীর্ঘদিন একাধিক দায়িত্বে রাখা ঠিক নয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন জ্যেষ্ঠ সচিবের ১০টি, সচিবের ৭৯টি, অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি, যুগ্ম সচিবের ৫০২টি, উপসচিবের ১ হাজার ৭৫০টি এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিবের ১ হাজার ১৪৩টি পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ জন জ্যেষ্ঠ সচিব, ৬৯ সচিব, ৩৭৮ অতিরিক্ত সচিব, ১ হাজার ৩৬ যুগ্ম সচিব, ১ হাজার ৪০৩ উপসচিব এবং ৩ হাজার ৫৯০ জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব কাজ করছেন।

সহকারী সচিব থেকে জ্যেষ্ঠ সচিব পর্যন্ত অনুমোদিত পদ ৩ হাজার ৬৯৬টি। এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৬ হাজার ৪৯০ জন। অর্থাৎ পদের থেকে ২ হাজার ৭৯৪ জন বেশি কর্মকর্তা থাকলেও একজন কর্মকর্তাকে একাধিক উইংয়ের দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

এ এন এম মঈনুল ইসলাম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব। এই দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তাঁকে বিধি অনুবিভাগের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। আইন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোজাফফর আহমেদকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সংস্কার ও গবেষণা অনুবিভাগের দায়িত্বে রাখা হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের মূল দায়িত্ব সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে হলেও অতিরিক্ত হিসেবে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের দায়িত্বও সামলাতে হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খান একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগ এবং প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। এই বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবু নঈম আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগ এবং অগ্নি অনুবিভাগের দায়িত্বের পাশাপাশি নিরাপত্তা ও বহিরাগমন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আবদুল কাদের শেখকে প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ এবং আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খান একই সঙ্গে প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ, মেডিকেল অনুবিভাগ এবং উন্নয়ন অনুবিভাগের দায়িত্বে আছেন। অতিরিক্ত সচিব ড. নাসিম আহমেদকে আইন ও শৃঙ্খলা অনুবিভাগ এবং আনসার ও সীমান্ত অনুবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুবিভাগ এবং জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন শাহ্ আসিফ রহমান। মো. আবুল হাসান মৃধাকে একই সঙ্গে পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএস অনুবিভাগ এবং পশ্চিম ইউরোপ ও ইইউ অনুবিভাগের মহাপরিচালকের দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের মো. মাহমুদ হাসান অধিগ্রহণ ও খাসজমি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব। অতিরিক্ত হিসেবে প্রশাসন অনুবিভাগের দায়িত্বও তাঁর। এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরীকে উন্নয়ন অনুবিভাগ এবং ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরম্যান্স অনুবিভাগের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুল ইসলামকে প্রশাসন অনুবিভাগ এবং সমন্বয় অনুবিভাগের দায়িত্ব দেওয়া আছে। এ ছাড়া এখন তিনি এই মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এসে প্রশাসনে বদলি ও পদায়ন করে। জটিলতা দেখা দিলে পরে বেশ কিছু বদলির আদেশ বাতিল করা হয়। সরকারের চারজন উপদেষ্টা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তাঁদের মতামত না নিয়ে তাঁদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন না করার নির্দেশনা দেন। এতে জটিলতায় পড়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কয়েক শ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এবং বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।

এদিকে জনপ্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি, শৃঙ্খলা ও নিয়োগের ক্ষেত্রে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে সরকার। এসব কমিটির অনুমোদন ছাড়া বদলি-পদায়নের পথ বন্ধ হওয়ায় ওই সব দপ্তরে অনেক পদ ফাঁকা রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টাদের পছন্দ না হলে অনেক দপ্তরে কর্মকর্তাদের পদায়ন করা যায় না। ফলে অনেকের ঘাড়ে একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব পড়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই মন্ত্রণালয়ে আসার জন্য অনেক কর্মকর্তা নানাভাবে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু যাঁরা নিজে থেকে আসতে চান তাঁদের কাউকেই নেওয়া হবে না। তাঁরা যোগ্য কর্মকর্তা খুঁজছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১ হাজার ১০০ প্রকল্প চলছিল। এসব প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রকল্প বিবেচনায় রেখে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদের অতিরিক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিবের পদে থাকা অতিরিক্ত সচিবেরা অবসরে গেলে সেখানে যুগ্ম সচিবদের পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া যাঁদের নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে অন্য উইংয়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, সেখানেও নতুন কর্মকর্তাদের শিগগির পদায়ন করা হবে।

যুগ্ম সচিব, উপসচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবদের অনেককেও একাধিক উইংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে একাধিক দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, মন্ত্রণালয় দায়িত্ব দিলে কর্মকর্তাদের তা ম্যানেজ করে নিতে হয়। একাধিক দায়িত্বে থাকলে কাজে একটু সমস্যা হবে, এটিই স্বাভাবিক।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং উপসচিব পুলে যুক্ত হওয়া কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে গভর্নমেন্ট ইমপ্লয়ি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পোর্টালের মাধ্যমে কোন দপ্তরে কোন যোগ্যতার কর্মকর্তা প্রয়োজন, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানা যায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থার সহায়তা না নিয়ে উপদেষ্টাদের পছন্দের ভিত্তিতে কর্মকর্তাদের বদলি করা হচ্ছে।

উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত পছন্দে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন করা হলে প্রশাসনে সুশাসনের জন্য বড় অন্তরায় হবে বলে মনে করেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া।

অবশ্য উপদেষ্টা কমিটির কারণে জনপ্রশাসনে বদলি ও পদায়নপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে না বলে দাবি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হকের। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তাঁরা আমাদের কিছু মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেন। সেটি অনুসরণ করে আমরা কাজ করি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইংয়ে অতিরিক্ত সচিব নাকি যুগ্ম সচিব দেওয়া হবে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আমরা বিভিন্ন উইংয়ে এখন যুগ্ম সচিবদের পদায়ন করব।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, অল্প দিনের জন্য কাউকে অতিরিক্ত হিসেবে অন্য দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, তবে এটা রেগুলার প্র্যাকটিস হতে পারে না। কাউকে তিন-চারটি দায়িত্ব দিয়ে রাখলে তিনি ঠিকমতো কাজ করতে পারবেন না, এটা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দলীয় ট্যাগিং দেওয়া এখনো বন্ধ হয়নি। সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। একই সঙ্গে তাঁকে সুরক্ষাও দিতে হবে।

আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, উপদেষ্টাদের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এরপর তাঁদের বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হচ্ছে। নিয়মিত কাজ তো কমিটি দিয়ে হয় না।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল, এর কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে।

ঘটনার তিন মাস পর আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল, পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তাঁর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন। এই পুরো তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তার মধ্যে এক্সপার্ট আছেন, আই উইটনেস আছেন, ভিকটিমস আছেন। সবার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উনারা ১৬৮টি তথ্য উদ্‌ঘাটন করেছেন এবং তার মধ্যে তাঁরা ৩৩টি রিকমেন্ডেশন করেছেন। প্রতিবেদনে অনেকগুলো ফাইন্ডিংসে অনেকগুলো রিকমেন্ডেশন এসেছে।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানবন্দর ও আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ও ফোমের মতো উপকরণ থাকা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের পথে যে অংশ পড়ে (ফানেল), তার মধ্যে নির্মিত কাঠামোর উচ্চতার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই ওঠানামার পথ বা ফানেলের আশপাশে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী হাসপাতাল, স্কুল বা বেশি জনসমাগম হয় এমন স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৬ জন নিহত হয়, এর অধিকাংশই শিক্ষার্থী। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন।

এ ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত, কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৭
সাবধান! ৯৯৯ ক্লোন করে বিকাশ-নগদের পিন চাচ্ছে প্রতারকেরা

সম্প্রতি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ব্যবহার করে বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর ও ব্যাংকের কার্ডসংক্রান্ত তথ্য জানতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর প্রধান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মহিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কখনোই কোনো নাগরিকের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংক কার্ডের পিন নম্বর জানতে চায় না। নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী জরুরি মুহূর্তে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সসেবা দেওয়া হয়।

আজ সকাল ১০টার দিকে এ ধরনের দুটি প্রতারণার ঘটনা ঘটে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আরপুর বাগানপাড়া এলাকার এক বাসিন্দাকে প্রতারকেরা ৯৯৯ নম্বর ক্লোন করে ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের তথ্য জানতে চায়। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করেন। পরে ৯৯৯ থেকে স্থানীয় থানার সঙ্গে ভুক্তভোগীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় এবং ঘটনাটি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

আরও এক ঘটনায় এক ব্যক্তিকে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয় এবং বিকাশ অ্যাকাউন্টের তথ্য দাবি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যাংকের কার্ডের পিন নম্বর কোনো অবস্থায় কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এ ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকা ও তাদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানা বা ৯৯৯ নম্বরে জানাতে জনগণকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা বানানো সেই ইউএনও ওএসডি

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

নিজের চাচা-চাচিকে বাবা-মা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেনকে ওএসডি করেছে সরকার। আজ বুধবার তাঁকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কামাল হোসেন তাঁর পিতা-মাতা মো. আবুল কাশেম ও মোছা. হাবীয়া খাতুনের পরিবর্তে নিজের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব ও চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা দেখিয়ে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা নিতে জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১-এর সম্মিলিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কামাল হোসেনের প্রকৃত মা-বাবা কারা, তা নিশ্চিত হতে গত মঙ্গলবার ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিন ইউএনও কামাল হোসেনকে ওএসডি করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই বিপ্লবীরা নতুন সংবিধান চাইলে সেটাই হতো সংবিধান: অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে বলত, “আমরা ৭২-এর সংবিধান চাই না, আমরা নতুন সংবিধান রচনা করতে চাই”—তাহলে সেটাই হতো সংবিধান। কিন্তু তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে হবে না। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানিতে আজ বুধবার এসব কথা বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বিভাগে অষ্টম দিনের মতো এ বিষয়ে শুনানি হয়।

এদিন আরও শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আনীক আর হক এবং বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। খায়রুল হক সাহেবরা হুকুম নড়ায়ে দিয়েছেন সংক্ষিপ্ত রায় এবং পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্য দিয়ে; যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড। সংবিধান একটা অরগানিক ডকুমেন্ট। এটা বিভিন্ন রকমভাবে উপস্থাপিত হয়। কোরআন কিংবা বাইবেল—কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান পরিবর্তনযোগ্য। আজকে সংবিধানের অ্যামেন্ডমেন্টে (সংশোধন) যদি বলে দেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে গেলাম, সেটাই যে অ্যাবসোলিউট (যথাযথ) হবে—তাও না। এটাও জনগণের চাহিদা অনুসারে হবে। জনগণ যদি মনে করে, এটাতে তার ভোটাধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না, জনগণ ইচ্ছা করলে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারবে।’

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ওই (তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল) রায় থাকা উচিত না। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায়টা লেখা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। এই রায় দুটি গ্রাউন্ডে বাতিল হবে। সাতজন মিলে ঘোষণা করলেন, আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। সেখানে উনারা ডেভিয়েট (বিচ্যুত) করে পূর্ণাঙ্গ যে রায় দিলেন, তা ওপেন ঘোষণা রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ঘোষিত রায় পরিবর্তন করার জন্য রিভিউ করতে হবে। রিভিউ যেকোনো পক্ষ করতে পারে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও করতে পারেন। খায়রুল হক সেই পথে না গিয়ে যে পথে হেঁটেছেন, তা আইনের ব্যত্যয়। রিভিউ না করে উনি রায় পরিবর্তন করেছেন। এটা দণ্ডবিধির ২১৯ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জানতেন, এ ধরনের পরিবর্তন করা আইনে সম্ভব নয়। তারপরও উনি সেটা করেছেন।’

আসাদুজ্জামান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশে আসার পরে যেভাবে দেশের গণতন্ত্র উন্নত হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলোপের পরে সেই সুযোগ হয়নি। এই ব্যবস্থা বাতিল করার পর হত্যা, গুম, রাতের বেলায় ভোট দেওয়া, মিথ্যা মামলায় মানুষকে কারাগারে পাঠানো—এ ধরনের রাজনীতি শুরু হয়। ৭০ লাখের মতো মানুষ গায়েবি মামলায় আসামি হয়। সেই কারণে এটা ২১৯ ধারার অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত