Ajker Patrika

জিন্নাহর মুখের ওপর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২২, ২১: ২১
জিন্নাহর মুখের ওপর রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে প্রতিবাদ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার প্রক্রিয়া চলছিল। বঙ্গবন্ধু শাহাদতবরণের পর তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম আজ মন খুলে আঁকতে পারছে, মনের ভাষা প্রকাশ করছে ছবি এঁকে। নতুন প্রজন্ম যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে, বীরের জাতি হিসেবে। 

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে স্মারকগ্রন্থ ‘অনশ্বর পিতা’র মোড়ক উন্মোচন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘রঙ তুলিতে আঁকি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ’-শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। 

শনিবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘খুব কাছ থেকে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। তখন আমি ডিগ্রি ফাইনাল বর্ষের ছাত্র। আমি উদ্গ্রীব থাকতাম কখন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন।’ 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় প্রস্তুত থাকতেন। বারবার জেলেও গেছেন। দিনক্ষণ হিসেব করে কারা কর্তৃপক্ষ পরে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু ৩০৫৩ দিন জেলেই কাটিয়েছেন। কারাগারে বসেই তিনি অনেক ইতিহাস লিখে গিয়েছেন। আবার জেল থেকে বাইরে বের হলেই প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কারাগারের রোজনামচা লিখে গেছেন। সিক্রেট ডকুমেন্টসে তারই প্রমাণ পাচ্ছি। এসবিতে রক্ষিত ছিল সে সিক্রেট ডকুমেন্টস।’ 

ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আজমের মুখের ওপর ভাষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করেছিলেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৪৮ সালে কায়েদে আজম যখন ঘোষণা করেন উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা, তখন তাঁর মুখের ওপর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, নো নো বাংলা হবে রাষ্ট্রভাষা। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার দৃশ্য তিনি মানতে পারেননি। তখন থেকেই তাঁর শুরু জেলে যাওয়া-আসা।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সত্যকে উপলব্ধি করতেন। আমাদের স্বাধীন হতেই হবে, পাকিস্তান নামক দেশ হওয়ার পর থেকেই সেটি তিনি লালন করা শুরু করেন। কারণ, এক শোষক থেকে আরেক শোষকের হাতে আমরা পড়ে গিয়েছিলাম। পাকিস্তান মানে শোষণের ইতিহাস। তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছিলাম।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মার্চের ৩ তারিখে আমরা পতাকা উড়িয়ে জানিয়েছিলাম আমরা স্বাধীন দেশ চাই কিন্তু নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছিল না। তাই তিনি ছাত্রনেতাদের বলতেন, তোমরা তৈরি থাকো, যুদ্ধ ছাড়া আমাদের গতি নাই। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। তবে তিনি আলোচনার পথ বন্ধ রাখেননি। অপেক্ষা করলেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেছেন, রক্তের ওপর পা দিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারব না। ২৫ মার্চ পর্যন্ত কিছু হচ্ছিল না। আলোচকেরা চলে যাচ্ছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। পায়ের স্যান্ডেল খুলে ছুড়ে মেরে প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই অপারেশন সার্চলাইট শুরু হলো। সবকিছু তছনছ করে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে। আমরা তেজগাঁওয়ে গাছ কেটে রাস্তা আটকালাম। সেখানেই প্রথম বাধা পেল তারা জয় বাংলা স্লোগানের মাধ্যমে।’ 

রাজারবাগের পুলিশও বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু রাজারবাগ নয়, সারা দেশেই সহযোগিতা করেছিল। তখন থেকে শুরু লড়াই, মুক্তিযুদ্ধ। সে লড়াইয়ে আমরা ৯ মাসে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে আজ হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্মরণ করি। স্মরণ করি বঙ্গমাতাকে। ছাত্রদের ১১ দফার আন্দোলনে যখন বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গমাতা তার আগে বলেছিলেন, তোমরা জোরালো আন্দোলন করো—যাতে গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু মুক্ত বঙ্গবন্ধু হিসেবে যেতে পারে।’ 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. বেনজীর আহমেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) ড. মইনুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম, র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃষ্ণপদ রায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত