Ajker Patrika

দুই-তৃতীয়াংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে মাত্রাতিরিক্ত লবণ, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দুই-তৃতীয়াংশ প্রক্রিয়াজাত খাবারে মাত্রাতিরিক্ত লবণ, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি: গবেষণা

দেশের নামীদামি সব প্রক্রিয়াজাত খাবারে ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ। এসব প্যাকেট জাত খাদ্যপণ্যের দুই-তৃতীয়াংশে লবণের আধিক্য পাওয়া গেছে। যা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ জন্য লবণের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণের দাবি তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ভোক্তাদের সচেতনতা জরুরি বলেও মত দেন তাঁরা। 

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের করা ‘অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কনটেন্ট অ্যান্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রোসেসড প্যাকেজড ফুডস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। 

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন হার্ট ফাউন্ডেশনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সমন্বয়ক ডা. আহমেদ খাইরুল আবরার। 

গবেষণায় প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে সর্বোচ্চ ৭৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণকে নিরাপদ মাত্রা বিবেচনায় নিয়ে দেখা গেছে, বাজারে বহুল প্রচলিত ৬১ শতাংশ বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনি ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত প্যাকেট খাবারে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। আর ৩৪ শতাংশ খাবারে নিরাপদ মাত্রার দ্বিগুণ অর্থাৎ লবণের মাত্রা বেশি ১.৫০ গ্রাম। 

তবে যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যে এমন মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া গেছে, তাদের নাম জানানো হয়নি। 

গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বহুল প্রচলিত চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ ও ঝালমুড়ির কোনোটিতেই নির্ধারিত মাত্রার লবণ পাওয়া যায়নি, বরং এগুলোতে দ্বিগুণের বেশি লবণ রয়েছে। একইভাবে আচার ও চাটনির ৮৩ শতাংশ, চিপসের ৬৩ শতাংশ এবং ডাল বুট ভাজার ৬০ শতাংশে দ্বিগুণ লবণ। তবে চিপস, ডাল-বুটের একটিতেও নির্ধারিত মাত্রার লবণ নেই। 

এ সময় ডা. আহমেদ খাইরুল আবরার বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারে কতটুকু লবণ ব্যবহার করা যাবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এতে করে উৎপাদকেরা পণ্যে ইচ্ছেমতো লবণ যোগ করেন। যদিও মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধান মালা-২০১৭ অনুসারে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিদ্যমান লবণের পরিমাণ মোড়কের লেবেলে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু গবেষণায় ৪৪ ভাগ খাবারে মোড়কে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে বেশি লবণ পাওয়া গেছে। 

গবেষণায় এও দেখা গেছে, দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষই এ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে। গড়ে একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ১৫ বার অর্থাৎ দিনে ২ বারের বেশি এসব খাবার গ্রহণ করেন। আর অত্যধিক লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। আর এসব রোগ প্রতিরোধ করতে হলে প্রক্রিয়াজাত খাবারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে লবণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি খাদ্যপণ্যের মোড়কে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ করাও নিশ্চিত করতে হবে যাতে একজন ভোক্তা সহজেই বুঝতে পারেন খাবারটি স্বাস্থ্যকর নাকি অস্বাস্থ্যকর। 

এ সময় বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যেখানে মোড়কজাত খাবার নিয়ে ২০১৭ সালে হওয়া আইনের বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। কারণ হিসেবে বলা কয়, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খাবারের মোড়কের সম্মুখভাগে লেবেলিং (ফ্রন্ট অব প্যাক লেবেলিং) প্রচলন করা হলে ভোক্তারা সহজে খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে তা কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্তে নিতে পারবেন। এ ছাড়া মোড়কে থাকা পণ্যের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখসহ পুষ্টিগুণ ও ব্যবহৃত উপাদানের পরিমাণ স্পষ্ট ও পাঠযোগ্য করে লিখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বড় আকারের লেখা এবং চিহ্ন দেখে ভোক্তা যাতে সহজেই বুঝতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। 

অনুষ্ঠানে হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের জীবনযাত্রায় প্রচুর পরিমাণ প্রক্রিয়াজাত খাবারের সম্পর্ক রয়েছে, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লবণ। এর অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ কারণে সরকার সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের মধ্যে বিষয়টি তুলে ধরার চিন্তা নিয়েই এই গবেষণা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত