Ajker Patrika

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ স্থগিত করল চীন

  • চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ স্থগিত: রাষ্ট্রদূত।
  • রাখাইনে মানবিক করিডর প্রক্রিয়ায় চীন যুক্ত নয়।
  • তিস্তা প্রকল্পে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত।
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের দেশটিতে ফেরত পাঠাতে একটি ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের সূচনা করেছিল চীন। চীন এ উদ্যোগ স্থগিত করেছে। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এ কথা জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে চীন কয়েক দফা বৈঠক করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে ২০২৩ সালে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এরপর এ উদ্যোগটি স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ওপর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

স্থানীয় কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ১ হাজার ৮২ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা কমপক্ষে দুই দফা গেছেন। কিন্তু পরে আর বিষয়টি এগোয়নি।

রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি আছে। দুই দেশ এ চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রসর হলে প্রয়োজনে চীন সহায়তা দেবে।

মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে চীন ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু করেছে এমনটি জানিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব আছে।

রোহিঙ্গা বিষয়ে কক্সবাজারে ক্যাম্পে যুক্ত পশ্চিমা দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন অংশীজনের ভূমিকার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, এই অংশীজনদের অনেকে চায় না রোহিঙ্গারা ফেরত যাক।

ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীন, আসিয়ান ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিত উপায়ে চেষ্টা করতে হবে।

চীনের উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে ব্যবহার করা যায় কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে উন্নয়ন ও সংস্কার একসঙ্গে হতে হবে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, উন্নয়নের পশ্চিমা মডেলের প্রতি অনেকের ঝোঁক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের দরকার উন্নয়নের নিজস্ব মডেল তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া।

জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর করিডরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নয়।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিন্ন নদী তিস্তার বাংলাদেশ অংশে একটি প্রকল্পে নিজের দেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে ইয়াও ওয়েন জানান, চীন তিস্তা প্রকল্পে কাজ করার জন্য তৈরি আছে। এখন এটি বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত—কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

বিজ চেয়ারম্যান এ এফ এম গওসোল আযম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ও সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশীদ ও বিজ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিসসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত