Ajker Patrika

খাগড়াছড়ির সহিংসতা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
খাগড়াছড়ির সহিংসতা নিয়ে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতায় তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়েছে। রোববার রাতে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২০২৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালক মামুন হত্যাকে কেন্দ্র করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) মূল ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন নিহত হন এবং বেশ কিছু এলাকাবাসী আহত হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ঘটনার এক বছর পূর্তিতে ইউপিডিএফ এবং এর সহযোগী সংগঠনসমূহ চলতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ মিছিল আয়োজন করে এবং অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর চেষ্টা চালায়।

আইএসপিআর জানায়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগে ইউপিডিএফ (মূল) কর্তৃক দাবিকৃত সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং রিমান্ডে নেয়। ঘটনাটি বিচারাধীন রয়েছে। তবে এ ঘটনার পরও ইউপিডিএফ-এর অঙ্গসংগঠন পিসিপি’র নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের ডাক দেন। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ-এর ডাকে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়। একই সময়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ব্লগার ও পার্বত্য অঞ্চলের কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।

২৬ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ কর্মী উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সামাজিক মাধ্যমে দেশি-বিদেশি ব্লগার ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রচারণার প্রভাবে খাগড়াছড়ি জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবরোধ চলাকালে একপর্যায়ে ইউপিডিএফ-এর প্ররোচনায় স্থানীয়রা টহলরত সেনাদলের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে তিনজন সেনা সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য, সংযম ও মানবিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এবং বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।

২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা আবারও দাঙ্গার চেষ্টা চালায়। তারা বিভিন্ন স্থানে বাঙালি ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালায়, ভাঙচুর করে, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করে এবং রাস্তা অবরোধসহ নাশকতা চালিয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকার আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটায়। দুপুর নাগাদ সামগ্রিক পরিস্থিতি পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। অবস্থা বিবেচনায় জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সারারাত ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিশ্রম করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবশ্যম্ভাবী দাঙ্গা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। তবে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গসংগঠন ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় লিপ্ত হয়।

এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে সেনাবাহিনীর ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন অফিসারসহ সেনাবাহিনীর ১০ জন সদস্য আহত হন। একই সময়ে রামগড় এলাকায় বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকজন বিজিবি সদস্য আহত হন।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সংঘর্ষ চলাকালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিমের একটি উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪-৫ দফা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে পাহাড়ি ও বাঙালি সাধারণ মানুষসহ সেনাসদস্যরা গুলিবিদ্ধ হন। পরে সেনাবাহিনীর টহল দল দ্রুত সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দেয়। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সশস্ত্র দলটি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোফায়েল আহমেদ হাসপাতালে

শিশুকে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখেন স্কুলশিক্ষক চাচি: পুলিশ

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

হাজি সেলিমের আজিমপুরের বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, ৬টি বিলাসবহুল গাড়ি উদ্ধার

ধর্ষণ মামলার আসামি এএসপি, তদন্তে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নারীর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত