Ajker Patrika

স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: সম্পাদক পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: সম্পাদক পরিষদ

আজ ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে বা বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ’ বা ‘ডিজিটাল নজরদারিতে সাংবাদিকতা’। ডিজিটাল নজরদারি এবং আক্রমণের মুখে সাংবাদিকতা আজকের দিনে বিশ্বজুড়ে যে হুমকি মোকাবিলা করছে সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এর মধ্যে যেটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে তা হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে এবং অনেকে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। শুধু সাংবাদিক নন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের অ্যাকটিভিস্ট, শিল্পী, লেখকেরাও এ আইনে মামলার মুখোমুখি হয়েছেন। শুরু থেকেই সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিকেরা এ আইনের বিষয়ে উদ্বেগ, আপত্তি জানিয়েছেন।’ 

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহ্ফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রীও বলেছেন, এ আইনের বিভিন্ন রকম অপব্যবহার হয়েছে এবং তিনি আইনটি সংশোধনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মন্ত্রীর বক্তব্য সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগকে যথার্থ বলে প্রমাণ করেছে।’ 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা ও হুমকি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের তৈরি করা ২০২১ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বিশ্বে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫২তম। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস সাংবাদিকদের কাজ করার স্বাধীন ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের যে অঙ্গীকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরে, সম্পাদক পরিষদ তার সঙ্গী। একই সঙ্গে, এ পরিষদ বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা কাজের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমে যে আক্রমণ ও বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’ 

সাংবাদিকতায় ডিজিটাল যুগের সুযোগ ও ঝুঁকি বিষয়ে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউনেসকোর ডিরেক্টর জেনারেল অড্রে অ্যাজোলে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বলেছেন, ডিজিটাল যুগের সুযোগ ও ঝুঁকি বিষয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের রক্ষা করবে এমন একটি ডিজিটাল ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরির জন্য। ইউনেসকোর ‘থ্রেটস দ্যাট সাইলেন্স: ট্রেন্ডস ইন দ্য সেফটি অব জার্নালিজম’ শীর্ষক পেপার থেকে দেখা যায়, দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল নজরদারি ও হ্যাকিং সাংবাদিকতাকে বিপদগ্রস্ত করছে। ডিজিটাল নজরদারি সাংবাদিকের সংগ্রহ করা তথ্যকে প্রকাশ করে দিতে পারে। এতে তাঁর সোর্সের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এমন নজরদারি সাংবাদিকের ব্যক্তিগত তথ্যকে উন্মুক্ত করে দিতে পারে, যা তাঁর নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে। এ পেপারে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে অনলাইনে নিগ্রহ, নজরদারি, হ্যাকিংয়ের মতো ডিজিটাল অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সাংবাদিকের নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাধীনতা বিঘ্নিত করা হচ্ছে। রাষ্ট্র এবং নন-স্টেট প্রতিষ্ঠান উভয়ই সাংবাদিকদের চাপে ফেলতে এসব ডিজিটাল কৌশল ব্যবহার করছে। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের ওপর ডিজিটাল হুমকির ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক ডিজিটাল নজরদারির পরিধি বৃদ্ধি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। কোভিড মহামারিকাল থেকে সাংবাদিকতায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। এ কারণে ডিজিটাল হুমকি থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’ 

এ বছর ২ থেকে ৫ মে উরুগুয়ের পুন্টা ডেল এস্টে শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে গ্লোবাল কনফারেন্স। ‘জার্নালিজম আন্ডার ডিজিটাল সিজ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে এ সম্মেলনে ডিজিটাল যুগে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যের অধিকার ও গোপনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নীতিনির্ধারক, সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট, ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর নীতিনির্ধারক, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ, আইনজীবীরা ডিজিটাল দুনিয়ায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের কাজের সক্ষমতা ও জনগণের আস্থা বিষয়ে আলোচনা করবেন সেখানে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত