Ajker Patrika

রাজাকার-আলবদরদের তালিকা: আশ্বাস আর কমিটিতেই ঘুরপাক

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩: ০৯
রাজাকার-আলবদরদের তালিকা: আশ্বাস আর কমিটিতেই ঘুরপাক

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দায়িত্ব নিয়েই সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, একাত্তরের রাজাকার-আলবদরসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা করা হবে। সে অনুযায়ী ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করলেও সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করা হয়। নতুন করে তালিকা তৈরি করতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করে এর এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে জামুকাকে। প্রায় দেড় বছর আগে আইনগত কর্তৃত্ব পাওয়ার পরও জামুকা কাজ শুরুই করেনি। তারা তাকিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দিকে। এই কমিটি আড়াই বছর আগে নিজ দায়িত্বে রাজাকারের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। এ জন্য কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি উপকমিটি কাজ করছে। সেই উপকমিটিও তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে সরকারের চলতি মেয়াদে এই তালিকা হচ্ছে না।

সরকারের এই মেয়াদে যে রাজাকারের তালিকা হচ্ছে না, তা স্পষ্ট মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হকের কথায়। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে আমাদের মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি উপকমিটি কাজ করছে। এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের পর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কে আসবেন জানি না; তবে যাঁরাই দায়িত্ব পাবেন, নিশ্চয়ই তাঁরা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবেন।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সব জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে একাত্তরে রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত রাজাকারের তালিকা চাওয়া হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাদের তালিকা চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিসিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফায় ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করে। এতে কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ব্যক্তির নাম ছিল। আবার কুখ্যাত অনেক রাজাকারের নাম ছিল না। এ ধরনের নানা ভুল ও অসংগতি থাকায় দুই দিনের মাথায় তালিকাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তখন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছিলেন, আগামী ২৬ মার্চ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ হবেই।

সে সময়সীমাও পার হয়ে গেছে আট মাস আগে; কিন্তু তালিকা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘রাজাকারের তালিকার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি সম্প্রতি এই মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছি। শুনেছি, রাজাকারের তালিকার বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওনার সঙ্গে কথা বললেই অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।’

জানা যায়, রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি উপকমিটি গঠন করা হয় ২০২০ সালের ৯ আগস্ট। উপকমিটিতে ছিলেন রফিকুল ইসলাম, রাজিউদ্দিন আহমেদ, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। কমিটি কার্যকর না হওয়ায় ২০২২ সালের এপ্রিলে আগের উপকমিটি বাতিল করে শাজাহান খানকে আহ্বায়ক রেখে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও আওয়ামী লীগের এ বি তাজুল ইসলামকে সদস্য করে নতুন উপকমিটি করা হয়। এই কমিটি নতুন করে তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘বিভিন্ন জেলার অন্তত ১৫০ উপজেলার রাজাকারের তালিকা পেয়েছি। যেহেতু বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, তাই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে একবারেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সমালোচনা হলে একবারেই হবে, তবে এই মেয়াদে সম্ভব নয়। আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর এই তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

দলিলপত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মে মাসে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয় এবং জুন মাসে এসংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। সেপ্টেম্বরে রাজাকার বাহিনীকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এর আগে এপ্রিলেই জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামসহ পাকিস্তানপন্থী কয়েকটি দলের লোক দিয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। শান্তি কমিটির নেতা ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজাকার বাহিনীর জন্য লোক সংগ্রহ করতে। শান্তি কমিটির নেতারা রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিল। তবে রাজাকার বাহিনী তৈরির পেছনে ছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ওই সব বেতনভুক্ত রাজাকার এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দালাল আইনের মামলায় যারা আসামি হয়েছিল, তাদের নিয়েই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

এই তালিকার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে জামুকার মহাপরিচালক ড. মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল বলেন, ‘জামুকা আইন সংশোধন করে রাজাকারের তালিকা করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হলেও বাস্তবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে জামুকার সদস্য শাজাহান খানের নেতৃত্বে সংসদীয় উপকমিটি। তাঁরাই এর অগ্রগতির বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারবেন।’

দ্রুত রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ করতে হলে আলবদর ও রাজাকার যারা একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের তালিকা করা জরুরি। এটি অনেক আগেই করা উচিত ছিল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও তা আমরা করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যেমন রাষ্ট্রের কাছে থাকা উচিত, তেমনি যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, তাদের তালিকাও থাকা জরুরি। আশা করব নির্বাচনে পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার গঠিত হবে এবং তারা দ্রুত রাজাকারের একটি নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত