Ajker Patrika

শুধু পাঁচ দিন নয়, ৩৬৫ দিনই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে: পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা। ছবি : আজকের পত্রিকা
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা। ছবি : আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেছেন, পূজার শুধু পাঁচ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে হবে না, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ গড়তে ৩৬৫ দিনের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে।

আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে বাসুদেব ধর এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ।

পূজার নিরাপত্তা নিয়ে পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সম্প্রীতি সমাবেশ ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সব সময় সম্প্রীতির কথা বলছে।’

পাড়া-মহল্লায় সম্প্রীতি সমাবেশ ও মসজিদে সম্প্রীতির বাণী পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, ‘পূজার মধ্যে আমরা কোনো হামলা দেখতে চাই না। এর আগে প্রতিমা বানানোর সময় হামলা হয়েছে, মন্দির ভাঙচুর হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে যে ধর্মবিদ্বেষী কার্যক্রম চলে আসছে, তা এখনো চলমান। এসব ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকার কথা আশ্বস্ত করেছে। আমাদের মূল কনসার্ন হচ্ছে কোথাও দুর্বৃত্তদের দ্বারা হামলা হলে তাদের ধরা হচ্ছে কি না, বিচার হচ্ছে কি না, এসব বিষয়ে।’

বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত না থাকার কথা উল্লেখ করে বাসুদেব ধর বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকুক ও দুর্বৃত্তদের বিচার না হোক, এটা আমরা চাই না। আশা করি, সুষ্ঠুভাবে আমাদের উৎসব পালনে এবার ১৮ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’ কোনো দুষ্টু লোকের দ্বারা সহিংসতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার কথা জানান তিনি।

বিজয়া দশমীর দিনে বিসর্জন নিয়ে কোনো উৎকণ্ঠা রয়েছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাসুদেব ধর বলেন, আপাতত কোনো উৎকণ্ঠা নেই। নিরাপত্তা ও বিসর্জনে সব কিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডুবুরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সার্বিক নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অপ্রীতিকর কিছু হলেই সবকিছু তাৎক্ষণিক জানা যাবে ও ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পূজা উদ্‌যাপনে নিরাপত্তা, পূজার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টদের ২২ নির্দেশনা, সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও অস্তিত্ব রক্ষায় আট দাবির লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। এ সময় দুর্গাপূজার আগেই সারা দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃত্ব, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে অসত্য, ঢালাও ও ভিত্তিহীন হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আগামীকাল শনিবার দুর্গাপূজার বোধন শুরু হয়ে ২ অক্টোবরে বিজয়া দশমী ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ হবে। এবার ঢাকা মহানগরে ২৫৯টি মণ্ডপে ও সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টিতে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জয়ন্ত কুমার আরও বলেন, ‘দুর্গাপূজার প্রস্তুতির মধ্যে কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, গাজীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় দুর্গাপ্রতিমা ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্তদের ধরেছে ও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পূজার মধ্যে এসব হামলার ঘটনা আমরা দেখতে চাই না।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপের পাশাপাশি রাষ্ট্রের আলোকিত চেতনা ও সামাজিক প্রতিরোধের মাধ্যমে সহিংসতার অবসান ঘটানোর কথা জানান তিনি।

পূজার আয়োজন ও উদ্‌যাপনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের ২২ নির্দেশনা নিয়ে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের পক্ষে জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, পূজা উদ্‌যাপনে স্থানীয় প্রশাসন, সমস্ত রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্র নেতাদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

এ ছাড়া মহালয়ে অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়, স্বেচ্ছাসেবীদের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ, পূজামণ্ডপে দিন-রাত পাহারা, সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা, সিসি ক্যামেরা সংযোগ করাসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে যেকোনো দুর্ঘটনার সংবাদ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেলে জানানোর কথা বলেন তিনি।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় আট দফা দাবি জানিয়ে জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন; জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন; দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী তিন দিন সরকারি ছুটি; পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু দাবি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, উপদেষ্টা কাজল দেব নাথ, পরিষদের সহসভাপতি চন্দ্রনাথ পোদ্দার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. তাপস চন্দ্র পাল, মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা পদ্মাবতী দেবী প্রমুখ।

মতবিনিময় শেষে পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় যাকেই ধরা হয়, তাকে উন্মাদ বা পাগল বলে ছেড়ে দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়। আমরা চাই, অপরাধী যে-ই হোক, তাকে যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদিজি—বিহারে কোনো বাংলাদেশি নেই, তবে দিল্লিতে আপনার বোন বসে আছেন: ওয়াইসি

অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হলো কলেজ থেকে

গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ: নবনির্বাচিত ভিপি মৃদুল, জিএস রায়হান

বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি কবে— জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হবে তুরস্ক, চুক্তি স্বাক্ষর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত