Ajker Patrika

পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র যেন বন্দিশালা, থাকতে চায় না ৭৯ শতাংশ শিশু

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৪, ২০: ৩৫
পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র যেন বন্দিশালা, থাকতে চায় না ৭৯ শতাংশ শিশু

‘বাথরুমের লাইট নষ্ট। রাত্রেবেলা ঘুমাইতে কষ্ট হয়। ফ্যানে বাতাস হয় না। পানিতে ময়লা।’ বলছিল রাজধানীর কমলাপুর পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের বছর সাতেকের শিশু মাহিম (ছদ্মনাম)। আবীর (ছদ্মনাম) নামের আরেক শিশুর ভাষ্য, ‘মনে হয় জেলখানাত আছি। একটা রুমেই সবাই থাহি। খেলাইতে পারি না, বাইর হইতে পারি না।’

থাকার আশ্রয় নেই, যাওয়ার জায়গা নেই, আপনজন বলতেও নেই কেউ। তাই বাধ্য হয়ে এই কেন্দ্রে থাকছে মাহিম ও আবীরের মতো ৭৭ শিশু। থাকা–খাওয়ার সুব্যবস্থা, পড়াশোনার সুযোগসহ ভবিষ্যৎ গড়ার নানা আশ্বাস দিলেও এই পুনর্বাসন কেন্দ্র তাদের জন্য সমস্যা জর্জরিত এক আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া কিছু নয়!

কমলাপুর পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের শিক্ষক রীমা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই জায়গাটা একেবারেই শিশুদের থাকার উপযোগী না। এপ্রিলের সেই হিট ওয়েভের সময় থেকে এখানকার ফ্যানগুলো নষ্ট। কোনোটা ভাঙা, কোনোটা সামান্য ঘোরে, কোনোটার ক্যাপাসিটর নষ্ট। ছয় মাস ধরে রিকুইজিশন দেওয়ার পরেও নতুন ফ্যান দিচ্ছে না, পুরোনোগুলোও ঠিক করা হচ্ছে না। বাথরুমের দরজা নেই। ওদের খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থাই নেই। মেয়েদের রুমে একটা টিভি ছিল, সেটাও অনেক দিন ধরে নষ্ট।’

রাজধানীতে পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য এমন দুটি কেন্দ্র রয়েছে। একটি কমলাপুরে, অন্যটি কারওয়ান বাজারে। কমলাপুর কেন্দ্রে রয়েছে ৭৭টি শিশু। এর মধ্যে ১৬টি মেয়ে, বাকিরা ছেলে। আর কারওয়ান বাজার কেন্দ্রের ৭৫ শিশুর সবাই ছেলে। 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই কেন্দ্র দুটি পরিচালিত হয়। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা এখানে থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা মিলছে না। খেলাধুলা তো পরের বিষয়, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সুযোগও এখানে সীমিত। 

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত কমলাপুর কেন্দ্রে ছিল হাবিব (ছদ্মনাম)। তাকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর আশ্বাস দিয়েও ভর্তি করায়নি কর্তৃপক্ষ। শেষমেশ সে ওই কেন্দ্র ছেড়েই চলে যায়। আজকের পত্রিকাকে এই শিশু বলে, ‘তিন চার বছর আমি ওইখানে ছিলাম। সিক্স, সেভেন, এইট—এই তিন ক্লাস পড়ছি। কেন্দ্র থেকে বলছিল, আমাকে ক্লাস নাইনে ভর্তি করা হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হলেও তারা আমারে স্কুলে ভর্তি করে নাই।’ স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে হাবিব। 

কেন্দ্রের শিক্ষক রীমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে দুটা বাচ্চা এইট পর্যন্ত বাইরের স্কুলে পড়াশোনা করেছিল। নাইনে ভর্তি করাবার আশ্বাস দিয়ে ওদের জুন পর্যন্ত ঘুরাইছে। ভর্তি করানো হয় নাই; একজন চলে গেছে। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কাজ শুরু করেছে।’

কেন্দ্রে থাকতে চায় না ৭৯ শতাংশ শিশু
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘পথশিশু জরিপ ২০২২’ অনুযায়ী, পথশিশুদের ৭৯ শতাংশের বেশি স্বাধীনতা না থাকার কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকতে চায় না। 

পুনর্বাসন কেন্দ্রের শিশু ও শিক্ষকেরা জানান, কেন্দ্র থেকে বছরে একবার বনভোজনে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যারা বাইরের স্কুলে পড়ে তারা বের হতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন শিশু বাইরে বের হয়ে নেশা করেছে বলে সবার বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কনসালট্যান্ট আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই কেন্দ্রে শিশুদের বলতে গেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দু–একজন নেশা করে বলে সবাইকে বন্দী রাখাটা অমানবিক। নিরাপত্তা দিয়ে তাদের বাইরে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ টাকা না থাকার অজুহাত দিয়ে সবকিছুই বাতিল করে দেয়।’

কেন্দ্রটির শিক্ষক রীমা খাতুন বলেন, ‘এক অর্থবছরে এই কেন্দ্রগুলোর জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকে। এই টাকা কীভাবে খরচ হয়, এটাই প্রশ্ন।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র কর্মসূচির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা খুব বেশি দিন হয়নি দায়িত্ব নিয়েছি। ফ্যান নষ্ট জানার পর আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। দু–এক দিনের মধ্যে ঠিক করা হবে। আরও কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পথশিশুর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি
ইউনিসেফ ও বিবিএসের ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১০ লাখের বেশি পথশিশু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ৭ লাখের বেশি। তবে তাদের পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করেন শিশু অধিকারকর্মীরা। স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্টস নেটওয়ার্কের (স্ক্যান) সভাপতি জাহাংগীর নাকির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে পথশিশুদের সংজ্ঞা এবং সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। তাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ অপ্রতুল। দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্র করা হয়েছে সেখানে থাকতে পারে সর্বোচ্চ ২০০ শিশু। অথচ দেশে পথশিশুর সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ।’
 
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় পথশিশু দিবস। একই সঙ্গে চলছে শিশু অধিকার সপ্তাহ। এবার এই সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি শিশুর অধিকার রক্ষা করা আমাদের অঙ্গীকার’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনের শেষ দিন আগামী সোমবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার এলাকা পরিবর্তনের আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে আগামী সোমবার।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক আজ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যাঁরা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চান, তাঁদের ১০ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।

এর আগে ৪ নভেম্বর ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর সই করা এ-সংক্রান্ত চিঠি সব উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়।

আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার আগে আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে ভোটার স্থানান্তরের আবেদন দাখিল ও দাখিল করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে বিস্তারিত সময়সূচির অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হলে ফরম-১৩ পূরণ করে যে এলাকায় যেতে ইচ্ছুক, সংশ্লিষ্ট সেই উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে আবেদন জমা দিতে হবে।

এরই মধ্যে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ইসি। দাবি-আপত্তি শেষে আগামী ১৮ নভেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আগামী ডিসেম্বরের শুরুর দিকে তফসিল ঘোষণা করে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার কর্মবিরতি ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রাথমিকের শিক্ষকেরা।

প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

এদিকে আজ শনিবার শিক্ষকদের ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছে। আজ বিকেলে শিক্ষকেরা কলম সমর্পণ কর্মসূচি পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।

জানতে চাইলে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম ‘প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাছুদ বলেন, ‘কলম সমর্পণ কর্মসূচি শেষে আমাদের শহীদ মিনারে ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশি হামলায় শাহবাগে অনেক শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ সময় কয়েকজন শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।’

এ বিষয়ে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিকেল ৫টায় দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, পুলিশের নির্দেশনা অমান্যকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তী সময় পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হলেও আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আজ সকাল থেকে তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও তাঁদের বাকি দুই দাবি হলো—চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে চার শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করছে। প্রাথমিক শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ ছাড়াও এই মোর্চায় আছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭। এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন।

গত ২৪ এপ্রিল ১১তম গ্রেডে বেতন পাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এ উদ্যোগে সন্তুষ্ট নন সহকারী শিক্ষকেরা। পরে আজ থেকে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’।

এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর তিন দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে: শফিকুল আলম

বাসস, ঢাকা  
‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: বাসস
‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: বাসস

রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দলটির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে জাতির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ট্রেস কনসাল্টিং আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, “শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে এখন সবার একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি। তিনি এখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রেস সচিব বলেন, “তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি। একজন মানুষকে যখন ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়, তখন আসলে তাঁকে হত্যাযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি কি ১৮ কোটি মানুষকে শত্রু ঘোষণা করে আবার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন?”

সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এনায়েতুল্লাহ খান একসময় লিখেছিলেন— ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে কোলাবরেটরস বা রাজাকার বানিয়েছিলেন, আর এখন তাঁর মেয়ে ১৮ কোটি মানুষকে সন্ত্রাসী বলছেন! এটা কল্পনাতীত।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-সংকোচ থাকা উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শাসন ব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। সারা বিশ্বে সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কে সময় লাগে, কখনো তা দশক ধরেও চলে। রাতারাতি কোনো সমাধান চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা দূর করতে ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা এখন একটি ফ্র্যাকচারড পলিটিক্যাল সিচুয়েশন দেখছি। এখন ডান, বাম ও মধ্যপন্থী সব পক্ষের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক সমাধান প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ট্রেস-এর সিইও ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশ কটন ও কনফেকশনরি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান। এতে কূটনীতিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। ছবি: আইএসপিআর
জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। ছবি: আইএসপিআর

চার দিনের শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ পিএনএস সাইফ (PNS SAIF)। আজ শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছালে কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের পক্ষ থেকে চিফ স্টাফ অফিসার জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের স্বাগত জানান। এ সময় নৌবাহিনীর সুসজ্জিত বাদকদল ঐতিহ্যবাহী রীতি অনুযায়ী ব্যান্ড পরিবেশন করে।

জাহাজটিকে স্বাগত জানাতে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ নৌবাহিনীর স্থানীয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা স্বাধীনতা তাদের অভ্যর্থনা জানায়। বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অবস্থানকালে জাহাজটির অধিনায়ক ও অন্যান্য কর্মকর্তাসহ একটি প্রতিনিধিদল কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চল, কমান্ডার বিএন ফ্লিট, এরিয়া সুপারিনটেনডেন্ট ডকইয়ার্ডের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলে অবস্থানকালে জাহাজের অফিসার, নাবিক ও প্রশিক্ষণার্থীগণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান, নৌবাহিনী জাহাজ ও ঘাঁটি পরিদর্শন করবেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকেরা পাকিস্তানের জাহাজটি পরিদর্শন করবেন।

পাকিস্তান নৌবাহিনী জাহাজের এই বাংলাদেশ সফরের ফলে দুই দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুভেচ্ছা সফর শেষে জাহাজটি ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত