Ajker Patrika

চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

  • প্রার্থী প্রত্যয়নপ্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে।
  • সুপারিশ প্রণয়নে কাজ করছে কমিটি।
  • অগ্রাধিকার পাবে পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী।
  • প্রতিবন্ধী হিসেবে নিয়োগে গাইডলাইন হচ্ছে।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ০৯: ৩৪
চাকরিতে কোটা: সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আসছে সমান সুযোগ

সরকারি চাকরিতে পার্বত্য অঞ্চল ও সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদেরও নিয়োগের বিষয়টি স্পষ্টীকরণ করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়েও ভাবছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ নিয়ে জটিলতা এড়াতে প্রতিবন্ধী হিসেবে নিয়োগের যোগ্যদের বিষয়ে গাইডলাইন জারি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকার সময় ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য। আন্দোলনের মুখে গত বছরের ২৩ জুলাই সরকারি চাকরিতে মেধায় ৯৩ শতাংশ এবং বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ কোটায় রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। এসব কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে কোটার শূন্যপদ সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা যাবে।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতি প্রয়োগের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দিতে গত ২৫ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের একটি কমিটি করে সরকার। এই কমিটি তাদের সুপারিশ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। তবে সুপারিশ চূড়ান্ত না হওয়ায় কমিটির কোনো সদস্যই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

কমিটির একজন সদস্য বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিষয়টি তাঁরা সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করে দেবেন। কোটায় সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের প্রত্যয়নপত্র দেন সার্কেল প্রধান। সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এই সনদ নিতে হবে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছ থেকে। তাঁরা এই সনদ পাওয়ার পদ্ধতি সহজ করার সুপারিশ করবেন।

পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে কমিটি সরকারকে পরামর্শ দেবে।

কমিটির আরেক সদস্য বলেন, প্রতিবন্ধী কোটায় নিয়োগ নিয়ে অনেক সময় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। জন্মগত প্রতিবন্ধীদের বাইরেও নানা কারণে অনেকে প্রতিবন্ধী হন এবং তাঁদের সংখ্যা অনেক বেশি। চাকরিতে প্রতিবন্ধী হিসেবে কারা নিয়োগ পাওয়ায় যোগ্য, সে বিষয়ে তাঁরা বিস্তারিত নির্দেশনা জারির সুপারিশ করবেন। যাতে প্রকৃত প্রতিবন্ধী কেউ বাদ না পড়েন, আবার কেউ এ সুযোগ নিয়ে চাকরি না নিতে পারেন।

সূত্র জানায়, সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার আগে ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন চান ডিসি। ইউএনও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি যাচাই করেন। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লাগে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একজন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অনেক সময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নন, এমন ব্যক্তিকেও অনৈতিকভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে সনদ দিতে সুপারিশ করে ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন দেন। এই প্রতিবেদনের আলোকে কেউ কেউ সনদ নিয়ে চাকরিও পেয়েছেন।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সতেজ চাকমা বলেন, ‘কে আমাদের সম্প্রদায়ের, সে সনদ দেওয়ার এখতিয়ার আদিবাসীদের নিবন্ধিত সংগঠনগুলোকে দিতে হবে। কারণ, আমরাই জানি কে আমাদের সম্প্রদায়ের, আর কে বাইরের।’

সমতল আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সদস্যসচিব রিপন চন্দ্র বানাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের ডিসির কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র পেতে অনেক সময় লেগে যায়। কারণ, চাকরির ক্ষেত্রে শুধু ডিসি এই প্রত্যয়নপত্র দেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এবং আদিবাসীদের সংগঠনের হাতে এই সনদ দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হলে সহজেই তাঁরা সনদ পাবেন।’

১ শতাংশ কোটাও ফাঁকা!

সরকারি চাকরিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা থাকার সময় কখনোই ১ শতাংশ পদের বেশি তাঁরা নিয়োগ পাননি। কোটা কমিয়ে এখন ১ শতাংশ করা হলেও হিসাবের মারপ্যাঁচে তাও ফাঁকা থাকছে।

সূত্র জানায়, ৪০, ৪১ ও ৪২তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে নিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চার প্রার্থী সুপারিশ পেয়েছেন, যা মোট সুপারিশপ্রাপ্তদের ০.০৫ শতাংশ। নন-ক্যাডার এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগে পদস্বল্পতায় কোটা পাচ্ছেন না ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থীরা।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোন কোন এলাকার প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন, তা বলে দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, এসব এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস নেই।

রিপন চন্দ্র বানাই বলেন, ১০০ জনের বেশি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিলে এখন কোটা পাওয়া যায় না। আবার কোটায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা সংরক্ষণ না করে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে থেকে পূরণ করা হচ্ছে। তিনি কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে তা সংরক্ষণের দাবি জানান।

এদিকে কোটাপদ্ধতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির কাছে সম্প্রতি যৌথ স্মারকলিপি দিয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পাঁচটি সংগঠন। এতে কোটায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নম্বর প্রচলিত নম্বরের ৮০ শতাংশ করা; লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া; এই কোটাকে বিভাগ, জেলা বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিবেচনা না করে জাতীয় পর্যায়ে বিবেচনা করা; কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেসব পদ সংরক্ষণ করা এবং সার্কেলপ্রধান ও ডিসিদের বাইরে আদিবাসী ফোরামের হাতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

বাহাত্তরের সংবিধান, জুলাই সনদ, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে আইন উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওষুধ কোম্পানির কর্মকর্তাকে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত