Ajker Patrika

নিউইয়র্কের জার্নাল: পৃথিবীর রাজধানীর গল্প

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ১১
নিউইয়র্কের জার্নাল: পৃথিবীর রাজধানীর গল্প

অবশেষে কাতার এয়ারওয়েজের ৭০৫ রুটের বিমানটি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করল। খুবই মসৃণ অবতরণ। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। ১৯ এপ্রিল। ঢাকায় ততক্ষণে ২০ এপ্রিলের সকাল হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ১৯ এপ্রিল সকাল দশটা পঞ্চাশ মিনিটে। এর মধ্যে টাইমজোন পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নিউইয়র্কে আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দশ ঘণ্টা এগিয়ে।

নিউইয়র্কে যখনই আসি, তখনই একবার ব্রডওয়ে ঘুরে আসতে মন চায়। ব্রডওয়ের কোনো এক থিয়েটারে একটা নাটক দেখতে পেলে অনেক কিছু ভাবার অবকাশ মেলে। হোক সেটা ব্রডওয়ে, অফ ব্রডওয়ে কিংবা অফ অফ ব্রডওয়ে। তাতে কিছু আসে যায় না। শিল্পকে এরা কোথায় নিয়ে গেছে, তা ভেবে মানুষের কল্পনাশক্তি আর কারিগরি ক্যারিশমার সৃজনশীল অবয়বের জন্য গর্ব হয়। চ্যাটজিপিটির কালে মানুষের নান্দনিকতার দাম কমে না যাওয়ার একটা বড় জায়গা হিসেবে সৃজনশীলতা আরও বহুদিন বেঁচে থাকবে বলে অন্তত আমার মনে হয়। আর সেই সৃজনশীলতা মরে যেতে পারে, হেরে যেতে পারে, যদি যান্ত্রিক শব্দাবলিই একসময় মানুষের স্বপ্নের আকাশ ঢেকে দেয়।

যাহোক, ঢাকা মহানগর যখন চল্লিশোর্ধ্ব সেলসিয়াস মাথায় করে কাটিয়ে যাচ্ছিল ভয়াবহ দিন-রাত, তখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত নিউইয়র্কগামী প্লেনে চড়ে বসার পরও মনে হয়নি যে রাত সাড়ে এগারোটায় নিউইয়র্ক পৌঁছুলে একটা জ্যাকেট চড়াতে হবে শরীরে। দশ ঘণ্টা সময়ের হেরফের বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, আর তাতেই তাপমাত্রা নত হয়েছে কতটা!

এবারের বিমানযাত্রা, ইমিগ্রেশন, লাগেজ বুঝে পাওয়া—সবই ছিল সহজ। শুধু ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তার চোখ পড়েছিল আমার হ্যান্ড লাগেজের দিকে। বিমানবন্দরের কাতার এয়ারওয়েজের কাউন্টারগুলোর সর্বত্র লেখা আছে, ল্যাপটপসহ সাত কেজির বেশি জিনিসপত্তর নেওয়া যাবে না হাতব্যাগে। আমার হ্যান্ড লাগেজে মালামাল ছিল কিছুটা বেশি। বেঁকে বসলেন সেবাদানকারী কর্মকর্তা। এ জন্য বাড়তি টাকা গুনতে বললেন। তাঁকে সুযোগ না দিয়ে ব্যাগে থাকা সোয়েটারটি পরে নিলাম, হাতে নিলাম দুটো থান ইটের মতো বই, তারপর বললাম, ‘বইগুলো আমরা পড়ব। আর এবার ব্যাগটা মাপুন তো!’

ভদ্রলোক তাজ্জব বনে গেলেন এবং চুপ করে রইলেন। এ রকম সহজ সমাধান আছে, সেটা তাঁর মাথায় কুলাল না। তাঁরই একজন ডান হাত বা বাঁ হাত, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হ্যান্ড লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘ঈদ হিসেবে স্যার আপনার লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ঈদের সময় এমনটা হতেই পারে। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’

দেখো দেখি কাণ্ড! এ কথাটা আগে বললে কি আর ভারী সোয়েটারটা শরীরে জড়াতে হয়!

প্লেনে নাকি এখন ভালো খাবার দেয় না, এমনটাই শুনেছিলাম। গতবার যখন নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে কুয়েত এয়ারওয়েজে করে ফিরেছিলাম ঢাকায়, তখন সত্যিই খাবারের এই রেশনিংয়ের সামনে পড়েছিলাম। পাইলট মহাশয় অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের কারও খিদে লাগলে কেবিন ক্রুকে বোলো। ওরা তোমার ইচ্ছেমতো জুস, চা-কফি আর স্যান্ডউইচ সরবরাহ করবে।’

কখনো চেয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই যে কবার যেচে এসে খাবার দিয়ে গেছে ক্রুরা, তার বেশি চাইনি।

ঢাকা-দোহা রুটে যে বিমানটি ছিল, সেটিতে আসনগুলো ভাগ করা ছিল ২-৪-২ হিসেবে। আমরা দুজন। একটি আইল-আসন পেলে সুবিধা হয়। সেটা পাওয়া গিয়েছিল। তবে আসনের সামনে যে মনিটরটি আছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। যে সিনেমা দেখতে চাই, সেটা ঠিকভাবে দেখা যায় না। গান শুনতে চাইলে সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ঢাকা-দোহার আকাশটা ছিল বিনোদনের সুযোগহীন।

তবে দোহা-নিউইয়র্কের পথে সেই সমস্যা ছিল না। ৩-৪-৩ আসনবিন্যাসের বড় উড়োজাহাজটির ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণটি ছিল আরামদায়ক।

একটা কৌতূহল আমার মনে অনেক দিন ধরেই বাস করছে। আমরা যারা সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানের টিকিট কিনি, তাদের ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলা হয়। এই গরিব যাত্রীদের প্লেনে ওঠানো হয় বিজনেস ক্লাসের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ আঁটসাঁট ইকোনমি ক্লাসের আসনের দিকে এগোনোর সময় বিজনেস ক্লাসের বিলাসবহুল আসনগুলো দেখে যেন পরবর্তীকালে বেশি পয়সা খরচ করে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করার স্বাদ জাগে—তারই মনস্তাত্ত্বিক খেলা কি না এটা, কে জানে!

আরে ভাই, বাজার অর্থনীতির যুগে আমাদের বসবাস। এখানে নিজেকে জাহির করার চেয়ে ‘বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।

এবার ঢাকা-দোহা, দোহা-নিউইয়র্কে দেখা গেল খাদ্য আর পানীয়ের সমাহার। কিছুক্ষণ পর পর হয় গলা ভেজাতে বলে, নয়তো খাবার গিলতে বলে! এবং অবাক হয়ে লক্ষ করি, ফ্লাইটের কোনো না কোনো বিমানবালার চেহারায় যে বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখেছি নানা সময়ে, এবার যেন তা ছিল না। বরং ছোটখাটো কথা বলে বিমানযাত্রাটি আনন্দমুখর করে তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। একটা উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। ডিনারে ছিল চিকেন অ্যান্ড রাইস, আর বিফ অ্যান্ড পটেটো। গরুর মাংসের সঙ্গে আমার আজন্ম ভালোবাসা বলে সেটাই চাইলাম।

বিমানবালা হেসে জানতে চাইল, ‘তুমি চিকেন খাবে না কেন?’

 ‘আগেরবার চিকেন নিয়েছিলাম। আর ডিনারে আমি বিফ পছন্দ করি।’

 ‘কোথা থেকে আসছ?’

 ‘ঢাকা থেকে।’ 

 ‘আচ্ছা!’ 

এটুকুই কথাবার্তা। কিন্তু এই যে আপাতকার্যকারণহীন কথাবার্তা, তারও তো একটা মূল্য আছে জীবনে।

জেএফকে বিমানবন্দরে রাত সাড়ে এগারোটায় নামার পর শীতটা টের পাওয়া গেল। লাগেজের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দুটো ট্রলি বারো ডলার দিয়ে নিয়ে মালসামানসহ আট নম্বর টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা দুজন। নিউইয়র্কে থাকা আমাদের মেয়ে ঝড়ের বেগে টার্মিনালে প্রবেশ করে আমাদের দুজনের হাতে ধরিয়ে দিল গতবার আমাদেরই রেখে যাওয়া দুটো জ্যাকেট। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমরা ঢাকা শহরের প্রায় মধ্যপ্রাচ্য বনে যাওয়া আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছি। বুঝতে পারছি, একই পৃথিবীতে বসবাস করলেও প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে কত না বৈচিত্র্যময় করে। এক জায়গায় মানুষের যখন গরমে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, অন্য এক জায়গার মানুষ তখন শীতে কাঁপছে!

বৈচিত্র্যের কথা বললে আবার নিউইয়র্কের কথাই বলতে হয়। এ শহর প্রত্যেক মানুষকে যেন জড়িয়ে রেখেছে পরম আদরে। অকারণে এই শহরকে নানা নামে ডাকা হয় না। সম্ভবত বাংলা ভাষায়ই সোভিয়েত সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির একটা বই পড়েছিলাম, ‘পীতদানবের দেশে’ নামে যার অনুবাদ হয়েছিল। নিউইয়র্ককে পীতদানবের দেশ নামেও ডাকা হয়। বলা হয় ‘বিশালাকার আপেল’। আর হ্যাঁ, যে ডাকটির সঙ্গে সত্যের মাখামাখি আছে, সেটি হলো ‘বিশ্বের রাজধানী।’ এই শেষ দুটি শব্দে একটু থামুন। ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলতে হলে একটি শহরকে কেমন হতে হবে, সেটা ভেবে নিন। 

 আদুরে শহর
বলা হয়, নিউইয়র্ক যেন মানুষকে আদর করে ধরে রাখে। এ শহর কোটিপতি আর উন্মাদের শহর। এ শহর দরিদ্র আর অভিজাত মানুষের শহর। পৃথিবীর সব রং ধরা আছে এ শহরে। পৃথিবীর যেকোনো নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারকে পাওয়া যাবে এখানে। শুধু কি তাই? চীনের মানুষেরা এসে এখানে গড়ে তুলেছে তাদের পাড়া, সেখানে ইংরেজির পাশে চৈনিক ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। নিউইয়র্কের কুইনসের ফ্লাশিংয়ে গেলে কিংবা ম্যানহাটানের চায়না টাউনে গেলে বোঁচা নাকের মানুষের ভিড় দেখে বোঝাই যাবে না, এটা আমেরিকা। মনে হবে, এখন বুঝি চীনেই আছি আমরা। 

রুশ জাতি এসে আস্তানা গেড়েছে নিউইয়র্কের যেসব জায়গায়, সেগুলোতেও মানুষ ইংরেজির চেয়ে রুশ ভাষায় কথা বলতে বেশি ভালোবাসে। বিশেষ করে ব্রাইটন বিচ কিংবা ফরেস্ট হিলসে গেলে রুশ ভাষাটাই যেন হয়ে যায় সেই এলাকার ভাষা। কোনো বাঙালিও যদি রুশ ভাষায় কথা বলে, এসব এলাকায় কেউ অবাক হবে না। রুশ ভাষায় কথা না বললেই বরং ভাববে—‘মালটা নতুন আমদানি’। আফ্রিকার মানুষের জন্য ম্যানহাটানের ‘হারলেম’ একসময় বিখ্যাত ছিল। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ছিল কৃষ্ণবর্ণের। খুনোখুনিও বেশি হতো। অপরাধজগৎ বলে নাম ছিল হারলেমের। এখন অবশ্য অবস্থা পাল্টেছে। সংখ্যায় কমে গিয়ে শতকরা চল্লিশের মতো হয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান। তবে কুইনসের জ্যামাইকায় গেলেও এখন দেখা যাবে আফ্রিকান আমেরিকানদের জয়জয়কার। 

আর বাঙালি? জি হ্যাঁ, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, জ্যাকসন হাইটসে দু-তিনটি রাস্তাই আছে, যেখানে দোকানগুলোয় কর্মরত প্রায় সবাই বাঙালি। এখানকার দোকানপাটের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার অবস্থান। এমন মানুষকেও জ্যাকসন হাইটসে পাওয়া যাবে, যিনি এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কোনো না কোনোভাবে নিউইয়র্কে এসে সেই যে কাজে ঢুকে গেছেন, সেটাই হয়ে গেছে তাঁর জগৎ। আর এখান থেকে কোথাও যাননি। মুখস্থ জায়গায় নেমে কাজ করে আবার মুখস্থ জায়গায় ফিরে যান তাঁরা। ব্রুকলিন, ব্রংকসেও কত যে বাঙালির বসবাস! ইদানীং কুইনসের পারসনস বুলভার্ড থেকে ১৭৯ স্ট্রিট পর্যন্ত গেলেও মনে হবে, মিনি বাংলাদেশেই বুঝি এসে পড়েছি।

আমরা জার্নি করেছি চব্বিশ ঘণ্টার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে তা বড়ই ক্লান্তিকর। প্লেনেই বসে থাকতে হয়েছে কম করে হলেও আঠারো ঘণ্টা। ফলে এ রকম একটি ভ্রমণের পর দিন-রাতের ব্যবধান ঘুচে যায়। সময় পরিবর্তন হয়েছে বলে কারও কারও রাতের ঘুম দিনে হয়, রাতে চোখ মেলে বসে থাকতে হয়। কেউ সারা দিন মড়ার মতো ঘুমায়, কারও চোখে ঘুম আসে না। 

বইয়ের মধ্যে নিউইয়র্কের খোঁজ
যাদের ঘুম আসে না, তাদের কেউ কেউ কিছু পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে রাত দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকি যখন, তখন তেমনই এক রাতজাগা মানুষের ইচ্ছে হলো বইপত্তরের খোঁজ নেবে। এবং অবধারিতভাবে নিউইয়র্কবিষয়ক ভালো বইয়ের দিকেই রাখতে হবে দৃষ্টি। 

কেন এই বইগুলোর কথা জানতে চাইছি? এর কারণ হলো, সব তো নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয়। এসব উপন্যাসের মাধ্যমে নিউইয়র্কের জীবনটা যেন পরিষ্কার হয়ে উঠে আসে পাঠকের মনে। পাঠকের জন্য এই বই-ভ্রমণটাও খুব সস্তা কিছু নয়। বাস্তবে দেশ দেখা হোক আর না হোক, বইয়ের পৃষ্ঠায় সেই দেশকে দেখে ফেলার সুযোগ পাওয়া বিরল সৌভাগ্য।

গিওম ম্যুসো লিখেছেন ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্ক কিন্তু নিউইয়র্কের কেন্দ্র। বিশাল এ সবুজ পার্কে অবকাশ কাটাতে ভালো লাগে। স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে চান যাঁরা, তাঁরা এখানে চলে আসেন সকাল-বিকেলে। রয়েছে রিকশা। চড়া ভাড়ায় তা পার্কের কিছু অংশ ঘুরিয়ে আনে পর্যটককে। সেই পার্ক নিয়েই গিওমের উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল এলিসের। এলিস দেখল, তার হাতে হাতকড়া। সেই হাতকড়ায় বাঁধা আছে অন্য এক অজানা পুরুষের হাত। একটু পর মেয়েটা জানতে পারে, একটি জাজ দলের সদস্য এই লোকটি। এলিস কিছুতেই বুঝতে পারে না, নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে কী করে এ রকম একজন অচেনা মানুষের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সে বসে আছে। এলিসের হঠাৎ তার পেশার কথা মনে হয়। পুলিশে চাকরি করে মেয়েটি। বছর দুয়েক আগে ইরিক বোগ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিল সে। এমন কি হতে পারে, সেই ইরিক বোগ এখনো জীবিত আর এখন সে এলিসের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে? প্রশ্নের জন্ম হয় অনেক বেশি, উত্তর আসে অনেক কম। এলিস অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে মনে করে, এই রহস্যের সমাধান তাকেই করতে হবে। 

কে এই অচেনা মানুষটি, কী তার পরিচয়, এ প্রশ্নও তো এড়ানো যায় না। এভাবেই এগিয়ে চলে উপন্যাসটি। 

নিউইয়র্ক শহরের নিশ্বাস শোনা যায় এই উপন্যাসে। 

সেন্ট্রাল পার্কের কথা উঠলেই অনেকের মনে পড়ে যায় ‘হোম অ্যালোন’ সিরিজের ‘লস্ট ইন নিউইয়র্ক’ ছবিটির কথা। যে হোটেলে এসে উঠেছিল কেভিন, তার পাশেই ছিল সেন্ট্রাল পার্ক। আর সেই সেন্ট্রাল পার্কে ‘ভেজা দস্যু’রা প্রায় ধরে ফেলেছিল কেভিনকে! সেই সিনেমায় এক পলকের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে যিনি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। 

সেন্ট্রাল পার্কের একটা জায়গা আছে, যা জন লেননের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্ট্রবেরি ফিল্ডস তার নাম। সেখানে অনেকেই আসে। কেউ আসে গিটার হাতে। লেননের গান পরিবেশন করে। অনেকে সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলে। পার্ক পার হলেই ড্যাকোটা অ্যাপার্টমেন্ট। এইন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের একটি ফ্ল্যাটেই থাকতেন লেনন। চ্যাপম্যান নামে এক ভক্তকে যখন অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে, তখনই সেই ভক্ত গুলি ছুড়েছিল জন লেননের শরীরে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বাঁচেননি। সেন্ট্রাল পার্কের কাছে এলে লেননের কথা মনে পড়ে। 

সোফি কিনসেলার উপন্যাসটার নাম ‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’। উপন্যাসটির কথা বলার আগে ম্যানহাটানের কথা একটু বলে নিই। তারও আগে নিউইয়র্ক রাজ্যটির কথা। এ কথা সবাই জানেন, নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যেরই রাজধানী নিউইয়র্ক সিটি। রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এলে এই ম্যানহাটানের দেখা পাওয়া যাবে। 

‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’-এর গল্প বলতে গেলে কেন নিউইয়র্ক শহর সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে, তা পরিষ্কার করব এবার। আসলে ‘ম্যানহাটান’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মন দুলিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক সিটি যে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা বরো নিয়ে তৈরি, তার একটি হচ্ছে ম্যানহাটান। বাকিগুলোর নাম হলো ব্রুকলিন, ব্রংকস, কুইনস আর স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। ঘটনাচক্রে আমি যখন নিউইয়র্কে আসি, তখন কুইনস ভিলেজে থাকি। অতি ব্যস্ত ম্যানহাটানের তুলনায় কুইনস ভিলেজ কিছুটা নীরব। 

নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় বরো হলো কুইনস। আর সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবশালী বরোর নাম ম্যানহাটান। ম্যানহাটানকে নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ বললে একেবারেই বাড়িয়ে বলা হবে না। এখানকার গগনচুম্বী ভবনগুলো এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাদুঘর, খাবারের দোকান কিংবা শপিং মল মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের। এমপায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রিসলার বিল্ডিং, সিটিকর্প সেন্টারসহ বড় বড় প্রাসাদসম ভবন এই ম্যানহাটানেই অবস্থিত। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কথা তো আলাদাভাবে বলতে হবে। ম্যানহাটান ভ্রমণের কথা হবে পরে। আগে এটুকু শুধু বলে নিই, শুরুতেই যে ব্রডওয়ে থিয়েটারের কথা বলেছিলাম, তা দেখতে হলে আসতে হবে এই ম্যানহাটানেই। নিউইয়র্কের দুই বিখ্যাত নদী হাডসন আর ইস্ট রিভারের কথাও পরে বলা হবে। আটলান্টিকের কথাও আসবে পরে।

সোফি কিনসেলার বইটির কথা এবার বলা যায়। এখন বলা হবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের শপিং মল আর দোকানপাটের কথা। কেন বলা হবে? বলা হবে, কারণ, এই বিষয়টিই তো কিনসেলার বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। কীভাবে এই দোকানগুলো মোহগ্রস্ত করে ফেলে মানুষকে, তারই আঁচ পাওয়া যাবে বইয়ের ভেতর ঢুকলে। ম্যানহাটান বদলে দেয় মানুষের ভাবনাকে। তছনছ করে দেয় হৃদয়ের যৌক্তিক ভাবনার চলাচলকে। বেকি বলে যে মেয়েটির কথা বলা হচ্ছে উপন্যাসে, তার জীবনে এ রকম বড় বড় ঢেউ এসে লাগবে, সে কথা আগে থেকে কে জানত? ম্যানহাটান তাকে তার জীবন এবং ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ভাবনার মধ্যে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এল। গুগেনহেইম জাদুঘরে তো বেকিকে যেতেই হবে, কিন্তু লোভনীয় দোকানগুলোর কাচের বিভিন্ন জানালা মোহিত করে ফেলে বেকিকে, এরপর সে শুধু কিনতে থাকে, কিনতে থাকে, কিনতে থাকে…।

নাহ্‌! উপন্যাসগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। শুধু এ কথাই বলার চেষ্টা করলাম যে আদতে নিউইয়র্ককে চিনতে হলে এর প্রাণকেন্দ্রে যেতে হয় বারবার। ওই যে, ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারের পাশেই যেখানে একটি দোকানের ভেতর ছোট্ট মিউজিয়ামের মতো করে স্বনামধন্য শিল্পীদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক আর বাদ্যযন্ত্রের দেখা মেলে, সেখানেই হঠাৎ করে কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ব্যবহার করা জর্জ হ্যারিসনের গিটারটি দেখলে কেমন লাগবে আপনার? কিংবা ঘুরতে ঘুরতে মোমায় এসে ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ দেখে ফেললে কি আপনি আর আগের মানুষটা থেকে যেতে পারবেন? আর পিকাসোর সেই বিখ্যাত ছাগলটি কি আপনাকে অনেকখানি বদলে ফেলবে না? 

travel-ny-03দরদাম
নাহ্‌! নিউইয়র্ক নিয়ে এত কিছু বলার আছে, যা এক বসায় লিখে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘুম থেকে উঠে প্রথম দিন যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানে গেলাম, তখন বুঝতে পারলাম, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া পড়েছে পণ্যের দামে।

সবচেয়ে অবাক করেছে ডিমের দাম। যুদ্ধের আগে ডিম ছিল স্বাভাবিক দামে। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে ডিমের ডজন ছিল ২ ডলার। এখানে অবশ্য তিন আকারের ডিম আছে। খুব বড়, বড় আর মাঝারি। ‘ছোট ডিম’ বলে কোনো লেবেল দেখিনি কখনো। ছোটটাকেই বুঝি ‘মেজ’ নামে চালিয়ে দেওয়া হয়। 

পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ধাই ধাই করে ডিমের দাম কেন বেড়ে গেল, সেটা কে বলতে পারবে কে জানে। সে সময় দোকানগুলোয় লেখা থাকত, ‘এই দাম সাময়িক। কিছুদিন পর আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’ সে সময় ১২টা ডিমের দাম কখনো কখনো ৫ ডলারও হয়েছিল। এবার ডিম কিনলাম প্রথমে সাড়ে চার ডলার, পরে সাড়ে তিন ডলার ডজন। একটু তো কমেছে দাম, কিন্তু আগের জায়গায় তা ফেরেনি।

রেস্তোরাঁয় খাবারদাবারের দাম বেড়েছে। বাইরের স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও চড়া দামের আভাস। গাড়ির তেলের দামও আগের তুলনায় বেশি। 

আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ সিনেমায় ববিতার ঠোঁটে একটা সংলাপ ছিল, ‘বাপ মরছে আমার আর দাড়ি রাখছে কাঞ্চন’। সংলাপটা একটু ঘুরিয়ে বলি, ‘যুদ্ধ করে রাশিয়া-ইউক্রেন, আর খাবারের দাম বাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে।’ না, কথাটা খুব একটা ঠিক বলা হলো না। এই যুদ্ধে বিশ্বমোড়লদের কাউকেই ধোয়া তুলসীপাতা বলা যাবে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার ক্ষেত্রে বাইরের দেশগুলোর ইন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাশিয়াকে উসকে দিয়েছে। রাশিয়াও সেই উসকানিতে সায় দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েছে। 

তাতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু সেই চাপ এসে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের বুকে। তবে চাপ কতটা গভীর, সেটা বোঝার জন্য যেতে হবে বাজারে, শপিং মলে, রাজপথে। কান পাততে হবে মানুষের সংলাপে। 

তারই অপেক্ষায় রয়েছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাসপোর্টের ইতিকথা: লাল, নীল কিংবা সবুজ বইটি যেভাবে এল

জিনাতুন নুর
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নীল কিংবা সবুজ প্রচ্ছদের একটি বই, হাতে থাকলে পাড়ি জমানো যায় আটলান্টিকের ওপারে, আরবের মরুভূমি, ইউরোপের সরু গলি কিংবা হিমালয়ের পাদদেশে; বাধা হয় না কোনো সীমান্ত, কোনো প্রহরী। এতটুকু একটু নথি! অথচ তার ক্ষমতা সীমানা ছাড়িয়ে, এক দেশ থেকে আরও এক দেশে। পাসপোর্ট একই সঙ্গে পরিচয়, আবার বিশ্বভ্রমণের চাবিকাঠি। কিন্তু এই পাসপোর্ট কীভাবে এল মানুষের হাতে?

পাসপোর্ট কেবল একটি নথি নয়, বরং এটি একেকটি যুগের গল্প; যেখানে যুদ্ধ, শাসন, বাণিজ্য আর নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে বিশ্বভ্রমণের নিয়মকানুন। মধ্যযুগের ইউরোপীয় পর্যটকদের হাতে যে ভ্রমণ নথি দেখা যেত, তারও বহু আগে রোমান সাম্রাজ্য ও প্রাচীন চীনা রাজদরবার থেকে এ ধরনের নথি ইস্যু করা হতো।

তবে আধুনিক পাসপোর্টের ইতিহাস খুব দীর্ঘদিনের নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন চলাচলের স্বাধীনতা অবারিত থেকে হয়ে উঠল নিয়ন্ত্রিত। ছোট নথিটি কীভাবে হয়ে উঠল বিশ্বরাজনীতির অংশ, জাতীর পরিচয়পত্র আর একবিংশ শতাব্দীর অদৃশ্য দরজা খোলার চাবিকাঠি, সে গল্পই আমরা জানব।

পাসপোর্টের ইতিহাস বহু পুরোনো ও জটিল। প্রাচীন চীন থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত হাজার বছর ধরে মানুষ পাসপোর্টের মতো নথি ব্যবহার করে আসছে। তবে মধ্যযুগের ‘সেফ কন্ডাক্ট ইন্সট্রুমেন্ট’ নামে একধরনের নথিকে আধুনিক পাসপোর্টের মূল উৎস হিসেবে ধরা হয়। পর্যটক, ব্যবসায়ী ও যাজকেরা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভিন দেশে যেতে এই নথি পরিচয়পত্র হিসেব ব্যবহার করতেন।

পাসপোর্ট শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দযোগে সৃষ্ট। ল্যাটিন passer (পার হওয়া) থেকে pass ও portus (বন্দর বা প্রবেশদ্বার) থেকে port একসঙ্গে যুক্ত হয়ে পাসপোর্ট। ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরির শাসনামলে ১৫৪০ সালে পাসপোর্ট শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। তবে একেবারে আধুনিক পাসপোর্টের ধারণা এসেছে বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে। ১৯২০ সালের লিগ অব নেশনসে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে প্রথম আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে পাসপোর্ট যেমন বৈশ্বিক ভ্রমণের অপরিহার্য নথি, তেমনই চলাচল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।

ভ্রমণের প্রাচীন অনুমতিপত্র

পাসপোর্টের গল্প শুরু বহু আগে, প্রাচীন চীনে। তখনকার শাসকেরা গুয়োসৌ (তালা ও তল্লাশিচৌকি) নামে এক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল—কে কোথায় যাচ্ছে এবং কী নিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭৫ থেকে ২২১ সালের মধ্যে ঝৌ রাজবংশের শাসনকালে যখন রাজ্যগুলোর মধ্যে যুদ্ধ লেগে থাকত, তখন এই গুয়োসৌ ব্যবস্থা চালু হয়। পরে খ্রিষ্টপূর্ব ২০২ থেকে ২২০ সালে হান রাজবংশের যুগে এ ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করা হয়। কেউ রাজ্যের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যেতে চাইলে তাঁকে সঙ্গে রাখতে হতো কাঠের একটা অনুমতিপত্র, যাতে নাম, গন্তব্য ও যাত্রার কারণ লেখা থাকত। এই অনুমতিপত্র দেখিয়ে তাঁরা বিভিন্ন তল্লাশিচৌকি পার হতেন। সিল্করোড দিয়ে চলাচল করা বণিকদেরও এমন অনুমতিপত্র দেখাতে হতো। গুয়োসৌ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমগ্র সাম্রাজ্যে মানুষের চলাচলের সঙ্গে পণ্য পরিবহনও নিয়ন্ত্রণ করা হতো। গুয়োসৌ ব্যবস্থায় কাঠের অনুমতিপত্র দেখতে অনেকটা আধুনিক পাসপোর্ট বা ভিসার মতোই ছিল।

আবার রোমান সাম্রাজ্যে সরকারি কাজে ভ্রমণকারীদের সম্রাটের নামে লেখা একটি চিঠি দেওয়া হতো, যাকে বলা হতো ‘ট্র্যাক্টরিয়াম’। এই কাগজ দেখিয়ে ভ্রমণকারীরা নিরাপদে যাত্রা করতেন; পথে সাহায্য পেতেন। এটি ছিল পরিচয়পত্র ও ভ্রমণের জন্য সম্রাটের অনুমোদনপত্র। রোমের নাগরিকেরা সাম্রাজ্যের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল করলেও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ‘ডিপ্লোমা’ নামের একটা নথি দেওয়া হতো।

মধ্যযুগে নিরাপদ যাত্রায় সেফ কন্ডাক্ট

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজা ও সম্রাটদের ক্ষমতা বেড়ে যায়, বাণিজ্য বিস্তৃত হয়। তখন ইউরোপে নিরাপদে চলাচলের জন্য ‘সেফ কন্ডাক্ট’ নথির প্রচলন হয়। এতে ভ্রমণকারীর নাম ও ভ্রমণের উদ্দেশ্য লেখা থাকত, কাগজের নিচের দিকে থাকত রাজা বা সম্রাটের স্বাক্ষর। এর মাধ্যমে যাত্রাপথে সুরক্ষা নিশ্চিত করা হতো। সেফ কন্ডাক্ট নামে এই নথি দুই নামে পরিচিতি ছিল—গুইডাটিকাম ও সো কনডুইও।

স্পেনের আরাগো কাতানোলিয়া অঞ্চলে গুইডাটিকাম নামের নথি বণিকদের দেওয়া হতো। এটি নিরাপদ যাতায়াত ও বাণিজ্যে সাহায্য করত। আর সো কনডুইও চলত ফ্রান্সে। কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও তীর্থযাত্রীরা নিরাপদ যাত্রার জন্য এই নথি ব্যবহার করতেন। সেফ কন্ডাক্ট নামের নথির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৪১৪ সালে, ইংল্যান্ডে রাজা পঞ্চম হেনরির শাসনামলে সংসদে পাস হওয়া এক আইনে।

সব মিলিয়ে রাজা, সম্রাট বা শাসকের অনুমোদিত এসব নথি ভ্রমণকারীদের নিরাপদভাবে চলাফেরা ও কূটনৈতিক যোগাযোগের নিশ্চয়তা দিত।

পাসপোর্ট নাম হলো যেভাবে

১৫৪০ সালের দিকে রাজা অষ্টম হেনরির শাসনামলে ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পাসপোর্ট’ নামে নথি চালু করে। ১৬৪১ সালের ১৮ জুন রাজা প্রথম চার্লসের স্বাক্ষরসহ পাসপোর্টটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরোনো পাসপোর্ট।

এরপর ১৭৯৪ সালে পাসপোর্ট ইস্যুর দায়িত্ব ব্রিটিশ সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আসে। এর মধ্য দিয়ে আধুনিক পাসপোর্ট ব্যবস্থার সূচনা হয়।

শুরুতে যেমন ছিল আধুনিক পাসপোর্ট

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আধুনিক পাসপোর্টের ধারণা গড়ে ওঠে। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মানুষের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯২০ সালে চুক্তির মাধ্যমে পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক মান নির্ধারণ করে লিগ অব নেশনস্। কেবল ভ্রমণ সহজ করাই নয়, ভ্রমণ সীমিত করা ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণও এর লক্ষ্য ছিল।

পাসপোর্ট ইস্যুকারী রাষ্ট্রের ক্ষমতার সঙ্গে নাগরিকের চলাচলের স্বাধীনতা জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ১৯৬৩ সালে জাতিসংঘে সংকট হিসেবে দেখা দেয়। প্রথম আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট সম্মেলনে পাসপোর্ট বাতিলের প্রস্তাবে অধিকাংশ দেশ সম্মত হলেও ‘জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা হুমকির’ কারণ দেখিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে।

আজকের বিশ্বে ভ্রমণ যখন বহু মানুষের শখ, তখন পাসপোর্ট ছাড়া জীবন কল্পনাই কঠিন। শুধু দেশের সীমানা পাড়ি নয়, চাকরি, শিক্ষাসহ বহু কাজে লাগে গুরুত্বপূর্ণ এই নথি। তবে এতে আছে অদ্ভুদ এক প্যারাডক্স—এটি যেমন বিশ্বভ্রমণের স্বাধীনতা, রাষ্ট্র ও সংস্থারও নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির হাতিয়ার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোহা আলি খানের তৈরি সহজ ফেসপ্যাক উজ্জ্বল করবে ত্বক

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
৪৬ বছর বয়সেও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী সোহা আলি খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
৪৬ বছর বয়সেও উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী সোহা আলি খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বয়স তাঁর ৪৬। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। অনেকে বলবেন, রাজপরিবারের মেয়ে, তার ওপর আবার বলিউড অভিনেত্রী, শরীরের যত্নআত্তির কমতি কি আর থাকে! ফলে বয়স বোঝা যাবে না, সেটাই স্বাভাবিক। হয়তো কথাটায় অতিরঞ্জন নেই।

কিন্তু জানেন কি, সোহা আলি খান সম্প্রতি তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে নিজের ত্বকযত্নের জন্য তৈরি করা একটি প্যাকের কথা লিখেছেন, ছবিও দিয়েছেন। সেই প্যাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বেসন, হলুদগুঁড়া, দইয়ের মতো দেশীয় উপাদান। তিনি জানিয়েছেন, এসব উপাদান একেবারে তাঁর রান্নাঘর থেকে নেওয়া।

প্যাক তৈরি করছেন সোহা আলী খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম ভিডিও থেকে
প্যাক তৈরি করছেন সোহা আলী খান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম ভিডিও থেকে

এসবই কি বলিউড অভিনেত্রী সোহা আলি খানের পরিষ্কার ও উজ্জ্বল ত্বকের গোপন রহস্য? ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, কীভাবে বিয়ে বা অন্যান্য উৎসবের পর ত্বককে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া প্রয়োজন। তবে স্বস্তি দেওয়ার জন্য অনেক দামি জিনিসের দরকার নেই। সোহা বলেছেন, শুধু রান্নাঘরের কিছু জিনিস দিয়ে সহজে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সুন্দর ব্যবস্থা করে ফেলা যায়।

সোহা লিখেছেন, ‘গত কয়েক রাতের উৎসবের পর আমার ত্বকে একটু বিশেষ যত্নের দরকার ছিল! তাই আমি চলে গেলাম রান্নাঘরে তাজা, পরিষ্কার, সাদামাটা উপকরণ ব্যবহার করে একটি অতি সহজ ফেস প্যাক বানানোর জন্য।’ এরপর তিনি বলেন, ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল করে তোলা এই ডিআইওয়াই ফেস প্যাক তৈরি করতে মাত্র দুই মিনিট লাগে। তিনি মজা করে বলেছেন, ‘আপনার স্বামী টেরও পাবেন না! এটি সত্যিই প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল করে তোলার কাজ করে!’

মুখে প্যাক লাগানো অবস্থায়।
মুখে প্যাক লাগানো অবস্থায়।

বলে রাখা দরকার, সামনে আসছে শীত। শুরু হবে উৎসব ও বিয়ের মৌসুম। এ সময় আপনার আশপাশে থাকবে প্রচুর আলো, মানুষের হাসি আর সুস্বাদু খাবার। ঠিক এ সময় আপনার ত্বকের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গেলে সতেজ থাকতে হবে। ফলে এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন জরুরি। প্রতিদিন তো আর রাসায়নিক উপাদানে তৈরি পণ্য দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় না। তাতে দীর্ঘ মেয়াদে ভালোর চেয়ে খারাপই হবে বেশি।

কিন্তু একটু সচেতন হলেই দেখতে পাবেন, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ত্বকবান্ধব উপকরণ। সেগুলো কাজে লাগিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নেওয়া যায় ত্বকচর্চার বিভিন্ন প্যাক ও অন্যান্য জিনিস। সোহা আলি খানও সেটাই বলতে চেয়েছেন। ফলে তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া যায়। আর যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের নারীরা এসব ভেষজ উপকরণের ওপর আস্থা রেখে চলেছেন। বলিউড সুন্দরীরা বাদ যাবেন কেন? তবে হ্যাঁ, সোহার মতো মানুষদের কাছ থেকে ভেষজ পণ্য ব্যবহারের নতুন নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়। সেগুলো অনুসরণ করে কেউ ঠকেছে বলে শোনা যায়নি এখনো।

চলুন, এবার দেখে নেওয়া যাক সোহা আলি খান রান্নাঘরে থাকা যেসব উপকরণ দিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের ত্বকচর্চার প্যাক, সেগুলোর তালিকা

কিন্তু একটু সচেতন হলেই দেখতে পাবেন, আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন ত্বকবান্ধব উপকরণ। সেগুলো কাজে লাগিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নেওয়া যায় ত্বকচর্চার বিভিন্ন প্যাক ও অন্যান্য জিনিস। সোহা আলি খানও সেটাই বলতে চেয়েছেন। ফলে তাঁর কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া যায়। আর যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের নারীরা এসব ভেষজ উপকরণের ওপর আস্থা রেখে চলেছেন। বলিউড সুন্দরীরা বাদ যাবেন কেন? তবে হ্যাঁ, সোহার মতো মানুষদের কাছ থেকে ভেষজ পণ্য ব্যবহারের নতুন নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়। সেগুলো অনুসরণ করে কেউ ঠকেছে বলে শোনা যায়নি এখনো।

চলুন, এবার দেখে নেওয়া যাক সোহা আলি খান রান্নাঘরে থাকা যেসব উপকরণ দিয়ে তৈরি করেছিলেন নিজের ত্বকচর্চার প্যাক, সেগুলোর তালিকা।

প্যাক তৈরির উপকরণ

  • ২ টেবিল চামচ ছোলার ময়দা বা বেসন।
  • ১ টেবিল চামচ হলুদগুঁড়া। তবে প্যাকেটজাত হলুদগুঁড়া ব্যবহার করবেন না। কাঁচা হলুদ কিনে এনে শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখুন।
  • ১ টেবিল চামচ চন্দনগুঁড়া।
  • ২ টেবিল চামচ দই।
  • চাইলে এগুলোর সঙ্গে মেশাতে পারেন ১ টেবিল চামচ মধু। না হলেও সমস্যা নেই।
  • কয়েক ফোঁটা গোলাপজল।

ফেস প্যাক তৈরির নিয়ম

প্রথমে ছোলার ময়দা, চন্দনগুঁড়া, দই, মধু ও হলুদগুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এরপর তাতে বেশ কয়েক ফোঁটা গোলাপজল দিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট গলা ও মুখে ভালো করে মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

যদি আপনার ত্বক সংবেদনশীল হয়, তাহলে ব্যবহারের আগে এই পেস্ট হাতের ত্বকে অল্প পরিমাণ লাগিয়ে টেস্ট করে নিন।

সূত্র: ইনস্টাগ্রাম ও টাইমস অব ইন্ডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুলসীপাতার গুণে সুস্থ থাকুন

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতিতে এমন কিছু পাতা আছে যা অনেক গুণে গুণান্বিত। তেমনই একটি পাতা হলো তুলসী। এই পাতার গুণ ও উপকারিতা অনেক। মূলত ভারত, এশিয়া এবং আফ্রিকা অঞ্চলের স্থানীয় এই বেসিল বা তুলসীকে একটি পবিত্র এবং মহৎ ভেষজ হিসেবে গণ্য করা হয়। অনেকেই তাদের রান্নাঘর বা বাগানে এটি চাষ করেন। ৬০ টির বেশি ধরনের তুলসী রয়েছে, যার মধ্যে অপেক্ষাকৃত মিষ্টি স্বাদের তুলসী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা

টাইপ ২ ডায়াবেটিস:

টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৬০ জন ব্যক্তি তিন মাস ধরে প্রতিদিন প্রাতরাশ এবং রাতের খাবারের আগে একটি ডায়াবেটিস ওষুধের সঙ্গে ২৫০ মিলিগ্রাম তুলসীর নির্যাস গ্রহণ করেছিলেন। যারা শুধুমাত্র ওষুধ গ্রহণ করেছিলেন তাদের তুলনায় তাদের গড় রক্তে শর্করা ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত তুলসীপাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আয়ুর্বেদের একটি ঐতিহ্যগত বিশ্বাস হলো খালি পেটে তুলসী খেলে সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়। এ ছাড়া জ্বরের সময়ও তুলসী পাতা খুব উপকারী। বিভিন্ন সার্জারির পর বা কোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা বেশ তাড়াতাড়ি শুকিয়ে ওঠে। ক্যানসার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা খুবই উপকারী। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান, যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লুকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। তুলসির অনেক নিরাময় বৈশিষ্ট্য কিডনিতে পাথর রোগীদের জন্যও উপকারী হতে পারে। রেনাল স্টোনে আক্রান্ত মধুর সঙ্গে এই পাতার রস খেলে উপকার পাবেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানসিক চাপ হ্রাস

মানসিক চাপের কমপক্ষে তিনটি লক্ষণ রয়েছে এমন ১৫৮ জন ব্যক্তির ওপর একটি গবেষণা করা হয়েছে। তাদের ছয় সপ্তাহের জন্য প্রতিদিন ১,২০০ মিলিগ্রাম পবিত্র তুলসীর নির্যাস গ্রহণ করা প্লাসিবোর তুলনায় সাধারণ চাপের লক্ষণগুলো ভালো করতে ৩৯ শতাংশ বেশি কার্যকর ছিল। তুলসীর ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

হাঁপানির লক্ষণ ভালো করে

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যদি হাঁপানি থাকে তবে আপনার শ্বাসনালির ফোলা কমাতে পারে তুলসী। তবে, এই গবেষণাগুলোর মধ্যে একটি প্রাণীর ওপর নির্ভর করে করা হয়েছিল।

ত্বক ভালো রাখে

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, কিংবা ব্রণের সমস্যা দূর করতে তুলসীপাতা ব্যবহার করতে পারেন। তুলসীপাতার রসের সঙ্গে নারকেলের তেল মিশিয়ে পোড়া জায়গায় লাগালে জ্বালাপোড়া কমবে এবং দাগ দূর হবে। এই পাতায় আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ত্বকের দূষিত পদার্থ বের করে দিতে কাজ করে। ধুলো এবং দূষণের কারণে ত্বকে লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। এই পাতায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বকের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে। ত্বকের প্রদাহ বা জ্বালা ভাব কমাতে তুলসীপাতা কাজ করে থাকে।

ঘরে তৈরি তুলসীর চা তৈরির সহজ পদ্ধতি

প্রথমে পাত্রে পানি নিয়ে হালকা ফোটাতে শুরু করুন। যদি তাজা তুলসীপাতা ব্যবহার করেন, তবে পাতাগুলো সরাসরি ফুটন্ত পানিতে যোগ করুন। তারপর তাপ বন্ধ করে দিন এবং ৫ থেকে ৭ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখুন। শুকনো তুলসীপাতা ব্যবহার করলে, শুকনো ভেষজটি যোগ করুন এবং ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পাতাগুলো ছেঁকে চা পরিবেশন করুন। স্বাদে নতুনত্ব যোগ করতে চাইলে এতে আদা এবং লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন। মিষ্টি যোগ করতে চাইলে পান করার ঠিক আগে এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।

সূত্র: ওয়েব মেদ, হেলথ লাইন, কাল্টিভেটেড আর্থ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করবে ঘরোয়া এই প্যাকগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করা যাবে ঘরোয়া উপায়ে। ছবি: পেক্সেলস
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করা যাবে ঘরোয়া উপায়ে। ছবি: পেক্সেলস

তৈলাক্ত ত্বকে সেবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদিত হয়। সিবাম মূলত চর্বি দিয়ে তৈরি তৈলাক্ত পদার্থ। তবে এটি খারাপ জিনিস নয়। এটি ত্বক প্রাকৃতিকভাবে ময়শ্চারাইজ রাখতে সহায়তা করে, ত্বকে সহজে বলিরেখা পড়তে দেয় না এবং ত্বক সুস্থ রাখে। তবে অতিরিক্ত সিবাম নিঃসৃত হলে ত্বক খুব বেশি তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এতে রোমকূপ বন্ধ হয়ে ত্বকে ব্রণ হয়। বংশগতি, হরমোনের পরিবর্তন, এমনকি মানসিক চাপও সিবাম উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ যত সহজে হয়, তত সহজে সারে না। তবে নিয়মিত পরিচর্যা করে ত্বকের অতিরিক্ত তেল ভাব এবং ব্রণ দূর করা সম্ভব।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের ইনফেকশন হয়ে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। এর বাইরে সুষম খাবার রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। টাটকা ফল, শাকসবজি খেতে হবে বেশি করে। অতিরিক্ত তেল ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে বরফ থেরাপি নিতে হবে। শারমিন কচি, রূপবিশেষজ্ঞ ও স্বত্বাধিকারী, বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ার

ঘরোয়া উপায়ে এ সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। যা করবেন,

প্রতিদিন অন্তত দুবার মুখ ধুতে হবে

তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা বাড়ার প্রথম কারণ মুখ না ধোয়া। গোসল বাদেও প্রতিদিন অন্তত দুবার মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তবে মুখ ধোয়ার জন্য খুব হালকা ফেসওয়াশ বা গ্লিসারিন সমৃদ্ধ সাবান ব্যবহার করতে হবে।

মধুর প্রলেপ দিন

মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান রয়েছে। ফলে এটি তৈলাক্ত ও ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য উপকারী। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মুখে এক পরত মধু মেখে রেখে দিন ১০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানির ঝাপটায় ধুয়ে নিন।

ওটমিলের প্যাক

ওটমিল ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে নেয়। এটি ত্বকের ব্রণ ও মরা কোষ দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে। ওটমিল গুঁড়া করে টক দই, মধু, কলা বা পেঁপে বাটা মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই প্যাক মুখে প্রায় ৩ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ডিমের সাদা অংশ ও লেবু

ডিমের সাদা অংশ ও লেবুর রস রোমকূপ বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা দূর করে। লেবু ও অন্যান্য সাইট্রাস ফলের অ্যাসিড ত্বকের তেল শুষে নেয়। লেবুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা থাকায় তা ব্রণ সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তবে সরাসরি মুখে লেবুর রস লাগাবেন না। একটি ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে এক চা-চামচ তাজা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এটি মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরার প্রলেপ

ব্রণসহ তৈলাক্ত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরার বহুল ব্যবহার রয়েছে। রাতে ঘুমানোর আগে মুখে অ্যালোভেরার একটি পাতলা প্রলেপ লাগিয়ে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে ধুয়ে নিন। সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালোভেরা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনি আগে অ্যালোভেরা ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে আপনার হাতের অল্প জায়গায় লাগিয়ে পরীক্ষা করুন। যদি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না যায়, তাহলে এটি ব্যবহার করা নিরাপদ।

টমেটো ও চিনির প্যাক

টমেটোতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড থাকে, যা ব্রণের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকার। টমেটোতে থাকা অ্যাসিড ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া রোমকূপ খুলে দিতে সাহায্য করে। টমেটো ফেসপ্যাক তৈরি করতে ১টি টমেটো বাটার সঙ্গে ১ চা-চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। বৃত্তাকার গতিতে ত্বকে লাগিয়ে প্যাকটি ৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে চিনি বাদ দিয়ে শুধু টমেটো বাটা দিয়েও তৈরি প্যাক তৈরি করা যায়।

অলিভ অয়েল ও মধুর প্যাক

একটি পাত্রে এক চামচ অলিভ অয়েলের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার মাইক্রোওয়েভে সেই মিশ্রণ ১০ সেকেন্ডের জন্য গরম করুন। এতে মধু খুব ভালোভাবে তেলের সঙ্গে মিশে যাবে। এই মিশ্রণ সারা মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

ছবি: পেক্সেলস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত