Ajker Patrika

মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন আর শুধু ধনীদের জন্য নয়, অনেক সাশ্রয়ী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ২১
মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন অনেক সাশ্রয়ী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মালদ্বীপ ভ্রমণ এখন অনেক সাশ্রয়ী। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

একসময় পৃথিবীর অতি-ধনীদের একান্ত গন্তব্য হিসেবে পরিচিত মালদ্বীপ এখন স্থানীয় ও টেকসই পর্যটনের নতুন মডেল। এই নীরব বিপ্লব কার্যত পাল্টে দিচ্ছে এই সাগর স্বর্গ-এর অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ। বিলাসবহুল ওভারওয়াটার ভিলা এবং সি-প্লেনের কোলাহল ছেড়ে এখন দ্বীপপুঞ্জের স্থানীয় সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ছোঁয়া পাচ্ছেন সাধারণ ভ্রমণকারীরা।

বিবিসি ট্রাভেল শো-এর জন্য ১২ বছর আগে এই দ্বীপরাষ্ট্র ভ্রমণের সময় যে মালদ্বীপ দেখানো হয়েছিল, তা ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিন্তু বর্তমানে ছবিটা বদলেছে—বিলাসবহুল লাগেজের বদলে এখন পাবলিক বোট থেকে ব্যাকপ্যাক নিয়ে নামছেন সাধারণ পরিবারের সদস্যরা। এটিই মালদ্বীপের নতুন দিক। এই প্রবণতা দ্বীপটিতে ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী করে তুলেছে।

গত এক দশকে মালদ্বীপের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে এক ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটেছে। সরকারের সংস্কারের ফলে এখন মালদ্বীপের স্থানীয়রা জনবসতিপূর্ণ দ্বীপগুলোতে গেস্টহাউস খোলার অনুমতি পেয়েছেন। আগে শুধু জনবসতিহীন রিসোর্ট এলাকাতেই পর্যটন সীমাবদ্ধ ছিল।

মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংস্কারের ফলস্বরূপ ৯০টিরও বেশি স্থানীয় দ্বীপে ১ হাজার ২০০টিরও বেশি গেস্টহাউস চালু হয়েছে। এর ফলে ভ্রমণকারীরা প্রথমবারের মতো দেশটির প্রাত্যহিক সংস্কৃতি উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং স্থানীয় পরিবারগুলো সরাসরি পর্যটন শিল্প থেকে আয় করছে। এটিই এখন পরিবারগুলোর অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

থোদ্দু দ্বীপ, মালদ্বীপের ‘কৃষি দ্বীপ’ নামে পরিচিত। উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপে পা রাখতেই তরমুজ ও লবণের মৃদু গন্ধ নাকে আসে। এখানে সমুদ্রবিমানের গমগম আওয়াজের বদলে শোনা যায় মোটরসাইকেলের ক্ষীণ শব্দ। রাজধানী মালের বিলাসবহুল রিসোর্ট জীবনের তুলনায় থোদ্দুর পরিবেশ শান্ত ও নিরিবিলি।

মালে থেকে পাবলিক স্পিডবোটে যেতে সময় লাগে ৯০ মিনিট, যার খরচ বিলাসবহুল রিসোর্ট সি-প্লেনের খরচের তুলনায় অনেক কম। দ্বীপে কোনো গাড়ি নেই, কেবল সাইকেল এবং মাঝে মাঝে ইলেকট্রিক বাগি (অটোরিকশার মতো) দেখা যায়। নারিকেল গাছের সারির মাঝে এখানে পেঁপে ও তরমুজের খেত বিস্তৃত। ফিরোজা রঙের পানিবেষ্টিত এই দ্বীপের সৌন্দর্য নয়নজুড়ানো।

এখানকার গেস্টহাউসটি সাদামাটা হলেও সেখানকার আতিথেয়তা অত্যন্ত আন্তরিক। খাবার একেবারে ঘরের রান্না—কয়েক ঘণ্টা আগে ধরা তাজা মাছ ভাজা, স্থানীয় কুমড়ার ঝোল এবং সতেজ তরমুজের রস।

কমিউনিটি-পরিচালিত পর্যটনের এই নতুন ঢেউ দ্বীপের পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। এখন স্থানীয়রা সরাসরি পর্যটন ডলার থেকে লাভবান হচ্ছেন। প্রবাল প্রাচীর এবং বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় সচেতন হয়ে উঠছেন স্থানীয়রা।

দক্ষিণ মালে দ্বীপে অবস্থিত স্থানীয় মালিকানাধীন ‘সন সিয়াম ওলহুভেলি’ রিসোর্টে। এটি এমন একটি মধ্যম পরিসরের রিসোর্ট, যা ‘টেকসই বিলাসিতা’র নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। রিসোর্টটি জমকালো, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ।

‘সান সিয়াম কেয়ার্স’ কর্মসূচির অধীনে অতিথিরা সৈকত পরিষ্কার করা, প্রবাল রোপণ এবং লেগুন (ছোট জলাধার) পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। রিসোর্টের ‘পুনর্ব্যবহার’ উদ্যোগের মাধ্যমে পুরোনো লিনেন থেকে পরিষ্কার পরিধানযোগ্য কাপড়ে তৈরি করা হচ্ছে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখনো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

ব্যক্তিগত রিসোর্টের গণ্ডি পেরিয়ে মালদ্বীপ সরকার এখন পরিবেশ নীতি ও পর্যটনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে। পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী থরিক ইব্রাহিম এই কৌশলটি সংক্ষিপ্ত করে বলেছেন: ‘আমাদের আদি পরিবেশই আমাদের মৌলিক সম্পদ। আমরা পরিবেশের বিনিময়ে প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছি না।’

প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জুর অধীনে, মালদ্বীপ ২০২৮ সালের মধ্যে তার ৩৩ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

ভ্রমণের কিছু টিপস:

সংস্কৃতি এবং আরাম—উভয় অভিজ্ঞতা পেতে স্থানীয় গেস্টহাউস এবং রিসোর্টের মধ্যে আপনার থাকার সময় ভাগ করে নিন; থোদ্দুর মতো দ্বীপগুলোতে পাবলিক স্পিডবোটে জনপ্রতি একমুখী খরচ ৩০-৭০ মার্কিন ডলার। পিক সিজনে যেতে চাইলে আগেভাগে বুক করুন; প্রবাল-বান্ধব সানস্ক্রিন, স্নরকেল গিয়ার এবং রিফ শু অবশ্যই ব্যাগে রাখুন; শুধু নির্দিষ্ট ‘বিকিনি বিচ’-এ সাঁতার বা রোদ পোহান; গ্রামে বিনয়ী পোশাক পরুন; স্থানীয় দ্বীপগুলোতে মদ নিষিদ্ধ; প্রবাল-বান্ধব কার্যক্রমে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডাইভ এবং ট্যুর কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বুকিং করুন।

গেস্টহাউসগুলোর ভাড়া প্রতি রাতে ৫০-৬০ মার্কিন ডলার থেকে শুরু। সান সিয়াম ওলহুভেলির মতো মধ্যম-পরিসরের রিসোর্টগুলো ৪৯৯ ডলারে বেশি; অতি-বিলাসবহুল রিসোর্টগুলো ১ হাজার ডলার থেকে শুরু।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...