Ajker Patrika

শিশুরা কেন মাকে জ্বালাতন করে, বাবার সামনে ভদ্র সাজে

সানজিদা কাওছার ঋতু, ঢাকা
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৫
শিশুরা কেন মাকে জ্বালাতন করে, বাবার সামনে ভদ্র সাজে

শিশুরা কখন কী করবে তা বোঝা না গেলেও তাদের কিছু প্রবণতা একই থাকে। কিছু শিশু সারা দিন সারা ঘর ছোটাছুটি করে, কারও কথা শুনতে চায় না আর রাজ্যের সব দুষ্টুমি করে বেড়ায়। কিন্তু বাবার সামনে গেলেই তাদের সেই নাছোড়বান্দা রূপ আর দেখতে পাওয়া যায় না। সব মায়েরই মনে প্রশ্ন থাকে—কেন বাবার সামনে শিশুদের আচরণের এ পরিবর্তন ঘটে? 

বড়রা শিশুদের সহযোগিতামূলক আচরণ পছন্দ করে। বড়রা চায় শিশুরা যেন জেদি না হয় এবং কান্না কম করে, হাসে বেশি। শিশুদের সঙ্গে সবাই ভালো সময় কাটাতে চায়। তবে, কেন শিশুরা মায়ের তুলনায় বাবার সঙ্গে বেশি সহযোগিতামূলক, বাধ্য এবং প্রফুল্ল থাকে? 

আচরণের মাধ্যমেই মানুষ যোগাযোগ করে। আমাদের বোঝার ধরনের ওপর নির্ভর করে যোগাযোগ। শিশুদের বোঝার ধরন ভিন্ন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর ধরনও ভিন্ন। 

গবেষকেরা কয়েকটি কারণ বের করেছেন যা বাবা–মায়ের প্রতি শিশুদের আচরণে ভিন্নতা তৈরি করে। 

১. বেশি সময় দেওয়া
অন্তত বাংলাদেশে বেশির ভাগ পরিবারে বাবার চেয়ে মায়েরা শিশুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান। এমনকি চাকরিজীবী মায়েরাও শিশুদের লালনপালনের বেশির ভাগ কাজ করে থাকেন। সকালে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করা থেকে শুরু করে, তাদের যেকোনো কাজে এবং ঘুমানোর সময় বেশির ভাগ কাজ মা–ই দেখাশোনা করেন। কোনো শিশুর সঙ্গে কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কতটুকু সময় কাটাচ্ছেন এর ওপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে শিশুর আচরণ নির্ভর করে।

দেখা যায়, কোনো মা যদি সন্তানের সঙ্গে দিনে ছয় ঘণ্টা সময় কাটান এবং বাবা যদি সন্তানের সঙ্গে দুই ঘণ্টা সময় কাটিয়ে থাকেন, তাহলে মা–কেই সন্তানের অবাধ্য সব আচরণের মুখোমুখি হতে হবে। অর্থাৎ বাবা–মায়ের মধ্যে যিনি সন্তানের সঙ্গে যত বেশি সময় কাটাবেন, তিনি শিশুর আচরণে তত বেশি বৈচিত্র্য দেখতে পাবেন। 

এ ক্ষেত্রে অন্য যে বিষয় প্রভাব ফেলে তা হলো: স্বাস্থ্যকর ও সহযোগিতামূলক মিথস্ক্রিয়ার জন্য বাবা–মায়ের মানসিক অবস্থা। বাবা–মায়ের কোনো একজন যদি বিরক্ত, ক্লান্ত বা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত থাকেন তবে, সন্তানের সঙ্গে ইতিবাচক বা গঠনমূলক সম্পর্ক তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে শিশুর আচরণে প্রভাব পড়তে পারে। 

সারা দিন খেয়াল রাখার পর সন্তানকে রাতে ঘুম পাড়াতে গিয়ে মায়ের ধৈর্য, সহানুভূতি ও মায়ার অনুভূতির বেশির ভাগই নিঃশেষ হয়ে যায়। ওই সময় মায়ের মানসিক শক্তি সন্তানের চ্যালেঞ্জিং আচরণগুলোই বের করে আনবে। অথবা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে সন্তানের স্বাভাবিক আচরণও মায়ের কাছে অস্বাভাবিক বা বিরক্তিকর লাগতে পারে। 

উল্টোদিকে সারা দিন সন্তানের সঙ্গে না থাকায় স্বামীর মধ্যে ধৈর্য ও কৌতুকপূর্ণ মনোভাব অবশিষ্ট থাকে, যার ফলে সন্তানও বাবার সঙ্গে সহজ এবং আনন্দদায়ক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। 

আবার বাবা–মায়ের যেকোনো একজন যখন সন্তানের সঙ্গে বেশি সময় কাটান, তখন অপরজন সন্তানের চোখে বিশেষ হয়ে ওঠেন। অপরজনের সঙ্গে দেখা করার আকাঙ্ক্ষা এবং উত্তেজনা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে শিশুটি ওই বাবা বা মাকে পেলে আরও উৎফুল্ল এবং উৎসাহী হয়ে ওঠে। 

২. সন্তান লালন–পালনের ধরন
সন্তান প্রত্যেক বাবা–মায়ের সঙ্গে কেমন আচরণ করে তার অনেকটাই নির্ভর করে লালন–পালনের ধরনের ওপর। শিশুরা বুদ্ধিমান ও সজ্ঞাত হয় এবং যেকোনো কিছু সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। বাবা–মায়েরা যদি ভিন্নভাবে সন্তান লালন করেন তবে সন্তানেরাও ভিন্নভাবে ব্যবহার করে। 

মা যদি নিয়ম–শৃঙ্খলার প্রতি দৃঢ় ভাব বজায় রাখেন কিন্তু আলাপ–আলোচনার জন্যও পর্যাপ্ত অবকাশ রাখেন এবং বাবা যদি কঠোর হন, আলোচনার কোনো জায়গাই না রাখেন ও যেকোনো প্রতিরোধের প্রতি অসহনশীল হন তবে সন্তানেরা মায়ের কাছেই অভিযোগ অনুযোগ করে। কখনো কখনো সন্তানেরা মায়ের মুখে মুখে তর্কও জুড়ে দেয়। এ ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠা সন্তানেরা মায়ের সীমারেখার প্রতি প্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখালেও বাবার সীমারেখার প্রতি আনুগত্য দেখায়। এটিকে আবার অনেকে শিশুর ভদ্র হয়ে যাওয়া ভেবে ভুল করে বসেন! 

আবার মা যদি এমন হন যে, প্রথমে কঠোর ভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত তা আর ধরে রাখতে পারে না এবং বাবা যদি এমন হন, যিনি দৃঢ়ভাবে কিছু নিয়মপালন করেন ও সন্তানদেরও তা মেনে চলতে সহযোগিতা করেন তবে মাকেই সন্তানের বেশির ভাগ ঘ্যানঘ্যান, বিলাপ এবং অভিযোগ শুনতে হবে। কারণ সন্তানেরা দ্রুতই শিখে যায় যে, মা কঠোর ভাব ধরে রাখতে পারেন না। আর বাবার সঙ্গে তারা প্রশ্ন বেশি করে, পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করে এবং সৃজনশীল সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করে। 

৩. মস্তিষ্কের বিকাশ
শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ তাদের আচরণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। শৈশব থেকে যৌবনকাল পর্যন্ত মিরর নিউরন (অনুকরণ) ব্যবহার করে মানুষ সামাজিক মিথস্ক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে এবং শেখে। যখন প্রাপ্তবয়স্ক কেউ শিশুর দিকে তাকিয়ে হাসে বা স্বাচ্ছন্দ্য থাকে, তখন শিশুও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়। প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যখন শিশুর আশপাশে চিন্তিত বা বিমর্ষ থাকে, চোখে চোখে তাকানো এড়িয়ে যায় এবং রূঢ়ভাবে কথা বলে তবে শিশুর আচরণেও এর প্রতিফলন দেখা যাবে। 

বাবা–মায়ের দৈহিক ভাষা ও মুখের অভিব্যক্তি থেকে সংকেত পায় শিশুরা। বাবা যদি সন্তানের সঙ্গে উৎসাহী ও উৎফুল্ল হন তবে শিশুও একই উৎসাহ–উদ্দীপনা দেখাবে। মায়েরা যদি সন্তানের কাছাকাছি থেকে হতাশা ও বিরক্তি প্রকাশ করেন, তবে শিশুরাও অধৈর্য এবং বিরক্তির সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাবে। 

৪. নিরাপদ বোধ 
শিশুরা যার কাছে মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করে তাঁর কাছেই নিজের প্রকৃত আচরণ উন্মুক্ত করে। বাবা–মায়ের মধ্যে কেউ একজন যদি অবহেলা, প্রত্যাহার, শাস্তি, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান, তবে শিশুর মনে তাঁর প্রতি এক ধরনের প্রতিরক্ষামূলক অনুভূতি তৈরি হয়ে যায়। সে তখন ওই বাবা বা মায়ের সামনে নিজের বড় প্রতিক্রিয়াগুলো দেখাতে চায় না। যখন শিশুর অনুভূতির প্রতি সহমর্মিতা ও সহানুভূতি দেখানো হয়, তখন তারা বোঝে যে, তাদের অশান্ত মনোভাব বা আচরণ কেবল সহ্যই করা হচ্ছে না বরং সেটি গ্রহণযোগ্যও। ফলে তারা তখন খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। 

তাই সন্তান যদি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো আচরণ করে, তখন বুঝতে হবে সে ওই বাবা বা মায়ের সঙ্গে নিজের প্রকৃত আচরণ প্রকাশ করতে কোনো শঙ্কা বোধ করছে না বরং নিরাপদ বোধ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত