Ajker Patrika

চলতি ফ্যাশনে রমরমা ভুরু-বাণিজ্য

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৩৯
চলতি ফ্যাশনে রমরমা ভুরু-বাণিজ্য

আগে সেলুনে গিয়ে ছাঁটা, স্টাইল বদলানো বা রং বদলানো শুধু চুলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে মানুষ চুলের স্টাইলের চেয়ে ভুরুর স্টাইল নিয়ে বেশি চিন্তিত! সব নারীই এখন তাঁর ভুরুযুগল আকর্ষণীয়ভাবে সাজাতে চান। নতুন এই উন্মাদনার কারণে প্রসাধন জগতে ভুরুকেন্দ্রিক বাণিজ্য বেশ রমরমা হয়ে উঠেছে। 

সম্প্রতি ভুরু প্রসাধনীর ক্রমবর্ধমান বাজার নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

অ্যালায়েড মার্কেট রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে শুধু ভুরুতে ব্যবহৃত বিশেষ জেলের বৈশ্বিক বাজার ছিল ২৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩১ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার ৪৩ কোটি ১৭ লাখ ডলারে দাঁড়াবে।

গত ১২ মাসে দ্য বেঞ্চমার্কিং কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রসাধন ক্রেতাদের ওপর একটি জরিপ চালায়। জরিপ অনুসারে, ৭৩ শতাংশ ভোক্তা ২০১৮ সালের তুলনায় এই সময় ৬৬ শতাংশ বেশি চোখের পাপড়ি বা আইল্যাশ এবং ভুরুর জন্য পণ্য বা টুল কিনেছেন। 

ঠিক কোন কারণে ভুরু সাজানোর প্রতি এই আসক্তি তৈরি হয়েছে তা চিহ্নিত হয়নি। হতে পারে নব্বইয়ের দশকে আনাস্তাশিয়া সোয়ারের ভুরুর ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রসাধন কোম্পানি ‘আনাস্তাশিয়া বেভারলি হিলস’ থেকে এই উন্মাদনার শুরু। অথবা ২০১০-এর দশকের দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত বণিতা পরতির ‘ব্লিংক ব্রো’ থেকে। একই নামে তিনি সেলুনের চেইন পরিচালনা করেন।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ২০১৫ সাল থেকে ভুরু নিয়ে নতুন করে সচেতনতা শুরু হয়, যখন প্রসাধনী ব্র্যান্ড গ্লসিয়ার ‘বয় ব্রো’ নামের এক ভুরু পমেড বাজারে আনে। এর পাঁচটি শেড রয়েছে। চলতি বছরের জুনে গ্লসিয়ার আরও দুটি শেড বাজারে এনেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রতি মিনিটে একটি করে ‘বয় ব্রো’ বিক্রি হয়।

ভুরুর আকার ও প্রতীকায়ন
ভুরুর ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল নতুন নয়। বিভিন্ন ধরনের ভুরু চেহারায় শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারে। বেনেফিট কসমেটিকসের ব্র্যান্ড পরিচালনার জ্যেষ্ঠ পরিচালক জ্যারেড বেইলি বলেন, ‘ভুরু মুখমণ্ডল ও চোখের মধ্যে ভারসাম্য ও সংগতি আনে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি তাঁর নাক সরু দেখাতে চান, তবে দুই ভুরু কাছাকাছি রাখতে হবে। যদি চেহারা ভরাট ও গোল দেখাতে হয়, তবে ভুরুর দৈর্ঘ্য ছোট রাখতে হবে।’ 

প্রাচীন মিসরে মোটা ও দৃশ্যমান ভুরু পেতে কাজল ব্যবহার করা হতো। ইউরোপের রেনেসাঁ যুগে ধনুকের মতো বাঁকা ও লোম ছেঁটে ছোট করা ভুরুর চল ছিল। তখন শরীরে লোম থাকাটাকে অ-নারীসুলভ বলে মনে করা হতো, তবে সে সময় জ্যামিতিক আকারের ভুরু ছিল সৌন্দর্যের প্রতীক। ১৯২০-এর দশকে অভিনেত্রী ক্লারা বোর অনুকরণে আবার পাতলা ও সোজা ভুরু প্রাধান্য পেতে শুরু করে।

মেকআপ আর্টিস্ট ববি ব্রাউন বলেন, ‘১৯৬০-এর দশকেও ভুরুর আকার তুলনামূলক সরুই ছিল। এরপরই ৭০-এর দশকে হিপ্পিদের সময় থেকে ভুরু অক্ষত রাখার চল শুরু হয়। 

মার্কিন অভিনেত্রী ব্রুক শিল্ডকে উল্লেখ করে ব্রাউন বলেন, ৮০-এর দশকে ভরাট ভুরুর প্রচলন ছিল। এরপরের দশকেই আবার সরু ভুরু যুগলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। 

ভুরুর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পছন্দ প্রতিফলিত হয় বলে জানান ব্লিংক ব্রো বারের সিইও বণিতা পরতি। ব্লিংক ব্রো বার প্রতিষ্ঠানটির যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকটি বিউটি সেলুন রয়েছে। বণিতা বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের খদ্দেররা তাঁদের ভুরু স্টাইলের ওপর বেশ গুরুত্ব দেন। তাঁরা ভরাট তবে, ধনুকের মতো বাঁকা ভুরু চান। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা পরিপাটি ও সতর্কভাবে তাঁদের ভুরুর ধরন বেছে নেন। ভারতীয়রা তাঁদের ভুরুর প্রাকৃতিক আকার বজায় রাখার ব্যাপারে বেশ সচেতন। 

সাজসজ্জাবিষয়ক ইতিহাসবিদ জিল বার্ক বলেন, ‘ভুরু খুব সহজে এবং ব্যথামুক্ত উপায়ে পরিবর্তন করা যায়। ভুরু জলদি বড় হয়, এ কারণে এটি নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যায়। আমরা কয়েক বছরের ব্যবধানেই কিম কার্দাশিয়ানের ভরাট জ্যামিতিক আকারের ভুরু দেখেছি, কারা দেলেভিনের পাতলা পালকের মতো ভুরু দেখেছি এবং লিজোর ব্লিচ করা (রং জ্বলা) ভুরু দেখেছি।’ 
 
বার্ক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ধন্যবাদ। কারণ, এখন আমাদের ওপর আগের তুলনায় অনেক বেশি বাহ্যিক প্রভাব কাজ করে। সেলফি সংস্কৃতির কারণে আমরা আমাদের চেহারা আমাদের পূর্বপুরুষের চেয়ে ভিন্নভাবে দেখি। নানা ধরনের টিউটরিয়াল ও টুলের কারণে এ পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে।’

ভুরু নিয়ে এই উন্মাদনা এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক প্রসাধন বাজারের মাত্র ৩ শতাংশ দখল করে রাখলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে তা দ্রুতই বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত