Ajker Patrika

টিউশনিতে যে বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত

সাব্বির হোসেন
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শিক্ষকতা পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পেশাগুলোর একটি। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি, টিউশনি শিক্ষার্থীদের কাছে শুধু একটি আয়ের উৎস নয়; বরং এটি আগামী প্রজন্মকে গড়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ। একজন টিউটরের হাতে তৈরি হয় শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলা, চিন্তাভাবনা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি। এই মহান দায়িত্ব পালনের পথে একজন টিউটরের জন্য কিছু বিষয় জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মানলে যেমন শিক্ষার্থীর প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব, তেমনি টিউটরও নিজের সম্মান, নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হন। চলুন, একনজরে বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

পরিচিত মানুষের মাঝে টিউশনি না করা

চেনাজানা বা আত্মীয়দের বাড়িতে টিউশনি করলে অনেক সময় পেশাদারত্ব হারিয়ে যায়। তাঁদের অনেকে শিক্ষককে শিক্ষক হিসেবে না দেখে শুধু ‘পরিচিত মানুষ’ হিসেবেই গণ্য করেন। এতে টিউশনের মূল্যায়ন কমে যায়, বেতন প্রদানে জটিলতা তৈরি হয় এবং টিউটরের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। তাই টিউশনি করার সময় চেষ্টা করুন অপরিচিত পরিবারের সঙ্গে কাজ করতে। যেখানে আপনার পরিচয় একমাত্র ‘শিক্ষক’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে।

মোবাইল ব্যবহারে সুশৃঙ্খল থাকা

বর্তমান যুগে মোবাইল জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে ক্লাসের সময় অকারণে মোবাইল ব্যবহার শিক্ষার্থীর মনোযোগ নষ্ট করে। টিউটরের আচরণই একজন শিক্ষার্থীর কাছে সরাসরি শিক্ষা হয়ে ওঠে। আপনি যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকেন, শিক্ষার্থীরাও তা অনুসরণ করবে। মনে রাখবেন, আপনার প্রতিটি কাজ তাদের কাছে শিক্ষার অংশ হয়ে দাঁড়ায়। অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে ওঠে।

সময়ানুবর্তিতা

সময়মতো উপস্থিত হওয়া শিক্ষকতার অন্যতম মূলনীতি। দেরি হলে বা হঠাৎ কোনো কারণে ক্লাসে যেতে না পারলে অবশ্যই অভিভাবককে জানানো উচিত। এতে আস্থা তৈরি হয় এবং আপনার পেশাদারত্বের প্রতি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সম্মান অটুট থাকে।

ভাগাভাগি করে খাওয়া

পড়া চলাকালে টিফিন পেলে সেটি শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভাগ করে খাওয়া উচিত। এটা একটি ছোট্ট কাজ হলেও এর প্রভাব বিশাল। এতে শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকে ভাগাভাগির মানসিকতা গড়ে তুলবে। সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে তালমেলাতে তাকে সহায়তা করবে। তবে টিফিন না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনার জ্ঞানই হলো সবচেয়ে বড় উপহার, যা জীবনের সর্বত্র কাজে লাগবে।

ভাষার ব্যবহারে সতর্ক থাকা

শিক্ষার্থীর মনে গালি বা অবমাননাকর শব্দ গভীর ক্ষত তৈরি করে। ‘অসভ্য’, ‘বেয়াদব’ ইত্যাদি শব্দ তাদের আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেয়। একজন ভালো শিক্ষক কখনো এমন ভাষা ব্যবহার করেন না। বরং ধৈর্য ধরে বোঝানো, উৎসাহ দেওয়া এবং সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়াই শিক্ষকতার মহত্ত্ব।

নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলা

টিউশনির সময়সীমা মানা অত্যন্ত জরুরি। নির্ধারিত সময়ের বাইরে পড়ানো টিউটরের দায়িত্ব নয়। বরং সময় অতিক্রম করলে কাজের গুরুত্ব কমে যায় এবং পেশাদারত্ব ক্ষুণ্ন হয়। তাই প্রতিটি পড়ানোর দিনগুলো যেন সময়মতো শুরু ও শেষ হয়, সেই চেষ্টাই করা উচিত।

অভিভাবক থেকে বেশি প্রত্যাশা না রাখা

শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা বা উপহার প্রত্যাশা করলে সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো শুধু পড়ানো। এর বাইরে বাড়তি কিছু প্রত্যাশা করলে সেটা নিজের পেশাগত মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না।

বেতন বুঝে নেওয়া

পারিশ্রমিক চাওয়াটা কোনো লজ্জার বিষয় নয়। এটি আপনার শ্রম ও সময়ের ন্যায্যমূল্য। যদি কোনো অভিভাবক সঠিকভাবে বেতন না দেন বা প্রাপ্য সম্মান না করেন, তবে সঠিক সময়ে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করাই উচিত। মনে রাখবেন, আপনি জ্ঞান দিচ্ছেন, ভিক্ষা করছেন না।

অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন

টিউশনির সময় কখনো এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ফেলবেন না, যেখানে আপনার সম্মান বা নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীর পরিবার ও নিজের মধ্যে একটি পেশাগত দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। এতে আপনার অবস্থান সুস্পষ্ট ও নিরাপদ থাকবে।

আত্মসম্মান রক্ষা করুন

টিউশনি শুধু অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়, এটি আপনার ব্যক্তিত্ব, সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখার ক্ষেত্রও। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে আত্মসম্মানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিন। একজন শিক্ষক নিজের মর্যাদা রক্ষা করেই প্রকৃত অনুপ্রেরণায় পরিণত হন।

টিউশনি হারালে হতাশা নয়

জীবনের পথে অনেক সময় টিউশনি চলে যেতে পারে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বরং ভাবুন, প্রতিটি অভিজ্ঞতা নতুন শিক্ষা দেয় এবং আপনাকে আরও শক্তিশালী করে। হয়তো স্রষ্টা আপনার জন্য আরও ভালো সুযোগের দ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছেন।

একজন টিউটরের আসল শক্তি বই পড়ানো নয়, বরং শিক্ষার্থীর জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠা। তিনি শুধু শিক্ষক নন; একজন পথপ্রদর্শক, আদর্শ ও অনুপ্রেরণা। তাই প্রতিটি টিউশনি হোক সম্মান, ধৈর্য, আত্মসম্মান এবং মানবিকতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক সুন্দর অভিজ্ঞতা। কারণ টিউটরের হাতে গড়ে ওঠা প্রতিটি শিক্ষার্থীই হলো আগামী দিনের সমাজ, আগামী দিনের নেতৃত্ব এবং আগামী দিনের আশা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সোহান-শরীফুলের ব্যাটে রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

মাদক পাচার: ইয়াবার আঁতাতে জড়িত সবাই

জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর মোড়: বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ব্যান্ড সদস্যের

২০ দফায় শর্ত সাপেক্ষে সম্মতি দিল হামাস, ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গুলতেকিন খানের পোস্ট, কেন এতো আলোচনা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত