Ajker Patrika

চাকরির বাজারে নতুনদের এগিয়ে থাকার কৌশল

মাহাবুব খান এলিন
ছবি: মাহতাব হোসেন
ছবি: মাহতাব হোসেন

চাকরির বাজারে প্রবেশের সময় নতুনদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘অভিজ্ঞতা’। বেশির ভাগ নিয়োগদাতা একাডেমিক ফলের পাশাপাশি প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও কাজের প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দেন। অথচ সদ্য স্নাতকদের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা অর্জন করা বেশ কঠিন। তবে অসম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চাকরির বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে পারেন।

নিয়োগদাতারা প্রার্থীর যেসব গুণাবলি খোঁজেন

নিয়োগকর্তা একজন প্রার্থীকে যেসব মানদণ্ডে বিচার করেন তা হলো প্রার্থীর কাজের চাপ সামলানোর মানসিক প্রস্তুতি; দলগতভাবে কাজ করার সক্ষমতা; যোগাযোগ দক্ষতা; প্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ব্যবহারের জ্ঞান; সমস্যা সমাধানের দক্ষতা; দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা ইত্যাদি। এসব গুণাবলি অভিজ্ঞতার সঙ্গেই সম্পর্কিত। তাই শিক্ষাজীবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে ‘অভিজ্ঞতার ঘাটতি’ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।

নিজেকে প্রস্তুত করার উপায়

  • যোগাযোগ দক্ষতা: বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলা ও লেখার দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে অপরিহার্য। পাশাপাশি প্রেজেন্টেশন ও পাবলিক স্পিকিংও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিবেট বা পাবলিক স্পিকিং ক্লাবে যুক্ত হওয়া যেতে পারে। নিয়মিত রিপোর্ট বা ব্লগ লেখার অভ্যাসও গড়ে তোলা দরকার।
  • প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দক্ষতা: অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ডেটা অ্যানালাইসিস, প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট—সবকিছুর চাহিদা এখন বেড়েছে। তাই এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্টসহ গুগল টুলস শেখা জরুরি। এসব দক্ষতা অর্জনে কোর্সেরা, উডেমি বা বহুব্রীহির মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে কোর্স করা যেতে পারে।

ইন্টার্নশিপ ও পার্টটাইম কাজ: ইন্টার্নশিপ সব সময় বেতনভিত্তিক নাও হতে পারে, তবে এটি অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সার্ভিস থেকে ইন্টার্নশিপ খুঁজে নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি টিউশনি, কনটেন্ট রাইটিং বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টেও পার্টটাইম কাজ করা যায়।

  • স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম: সামাজিক সংগঠন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দায়িত্ববোধ, সংগঠন দক্ষতা ও দলগত কাজের অভ্যাস তৈরি হয়। ইয়ুথ ক্লাব, এনজিও বা সামাজিক সংগঠনের প্রকল্পে কাজ করা যেতে পারে। চাকরি মেলা, সেমিনার ও ওয়ার্কশপেও অংশ নেওয়া যেতে পারে।
  • নেতৃত্ব ও দলগত কাজ: একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকেও নিয়োগদাতারা গুরুত্ব দেন। এ দক্ষতা অর্জনে ক্লাব বা সোসাইটির কার্যক্রমে সক্রিয় থাকা জরুরি। টিম প্রজেক্টে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে চেষ্টা করা উচিত।
  • উদ্যোক্তা মানসিকতা: ছোট উদ্যোগ যেমন ফ্রিল্যান্সিং বা স্টার্টআপ পরিচালনা শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে (আপওয়ার্ক, ফাইভার) কাজ শুরু করা যায়। ক্যাম্পাসে ছোট ব্যবসা বা ইভেন্ট আয়োজনও হতে পারে ভালো উদ্যোগ।

প্রস্তুতির রোডম্যাপ

প্রথম বর্ষ: নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, শিক্ষক ও বড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া

দ্বিতীয় বর্ষ: অনলাইন কোর্স ও নতুন দক্ষতা অর্জন

তৃতীয় বর্ষ: ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবী কাজ ও ক্লাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ

চতুর্থ বর্ষ: পেশাগত প্রস্তুতি—সিভি তৈরি, মক ইন্টারভিউ দেওয়া ও লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট

চাকরির বাজারে ফ্রেশার মানেই ‘অভিজ্ঞতাহীন’ নয়। যাঁরা সচেতনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি ধাপ কাজে লাগান, তারাই পরে যোগ্য ও দক্ষ হয়ে ওঠেন। তাই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা গড়তে দেরি না করে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলেই প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে ফ্রেশাররাও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবেন।

সূত্র: ইনডিড ও লিংকডইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত