আব্দুল্লাহ আফফান
ইসলামি বিদ্যাপীঠের সূচনা হয়েছিল নবী করিম (সা.) যুগে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হিজরি শতকে। তবে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায় সেলজুক আমলে। সে সময় ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রকৌশল, তাসাওফ, চিকিৎসা, গণিত ও সাহিত্য শিক্ষা দেওয়া হতো। সেলজুক প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক ইরানের তুসি, নিশাপুর, ইস্পাহান, খোরাসান, বর্তমান আফগানিস্তানের বাল্খ, ইরাকের বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে নিজামিয়া নামে অসংখ্য মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন। মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার মাধ্যমে শিক্ষাকে একটি সুনির্দিষ্ট ও সংগঠিত কাঠামোয় আনেন তিনি, যা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বসূরি।
মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া বাগদাদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত ছিল। এটি মধ্যযুগের সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিজামিয়া বাগদাদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ৪৫৭ হিজরির জিলকদ মাসে। দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে শনিবার ১০ জিলকদ ৪৫৯ হিজরিতে শুভ উদ্বোধন হয়। মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শায়খ আবু মানসুর বিন ইউসুফ (রহ.)। মাদ্রাসাটি বিশাল অঙ্গনজুড়ে গড়ে উঠেছিল। যেখানে মাদ্রাসা ভবন ছাড়াও ছিল শিক্ষকদের জন্য বাসভবন, মসজিদ, সুবিশাল গ্রন্থাগার, মেহমানখানা ও বাগান।
এতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি—বিশেষ করে ওয়াজ-নসিহতের মজলিশ, ধর্মীয় বিষয়-আশয় নিয়ে যুক্তিতর্কের আসর ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো। এসবের কারণে বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী-মনীষীদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বাগদাদের মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া। প্রতিষ্ঠালগ্নে এ মাদ্রাসার পাঠ্যতালিকায় ছিল শাফেয়ি ফিকহ, হাদিস, কোরআন অধ্যয়নসহ বেশ কিছু বিষয়। পরে ধীরে ধীরে এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় উলুমুল কোরআন, উসুলে ফিকহ, তাফসির, ইলমুল কালাম, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, সাহিত্যসহ আরও অনেক বিষয়।
এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি, আবু আবদুল্লাহ তাবারি, আবু মুহাম্মাদ খাওয়ারেজমি, আবু ইসহাক শিরাজি, বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ, মুহাম্মদ আশ-শাহরাস্তানির মতো মুসলিম দার্শনিকেরা। বার্বার বংশীয় আলমোহাদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে তুমারত এখানে ইমাম গাজালির অধীনে লেখাপড়া করেন। পারস্যের কবি সাদি ১১৯৫ থেকে ১২২৬ সাল পর্যন্ত এখানে শিক্ষালাভ করেন। নিজামুল মুলকের জামাতা মুগাতিল ইবনে বাকরি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী ছিলেন।
শায়খুর রিহলাখ্যাত বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা ৫৮১ হিজরিতে এই মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে লিখেছেন, ‘নিজামুল মুলক মাদ্রাসা নির্মাণে ২ লাখ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছেন এবং প্রতিবছর ছাত্রদের পড়ালেখা, খাবার ও আবাসনের প্রয়োজন মেটাতে ৫০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা খরচ করতেন। এখানে ৬ হাজার ছাত্র ফিকহ, তাফসির, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিভাগে লেখাপড়া করত। তিনি মাদ্রাসার যাবতীয় খরচ বহন করতেন। মাদ্রাসার বেতন স্কেল অনুযায়ী গ্রন্থাগারিক প্রতি মাসে ১০ স্বর্ণমুদ্রা বেতন পেতেন। মাদ্রাসা নিজামিয়া বাগদাদের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে ছিলেন জগদ্বিখ্যাত আলেম ও সাহিত্যিক খতিবে তিবরিজি (রহ.)। তিনি কিছুদিন পর্যন্ত এখানে শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করেন।’
১২৫৮ সালে হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বাগদাদে হামলা করে। সে সময় মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া বাগদাদ, বাইতুল হিকমা গ্রন্থাগারসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত অসংখ্য মূল্যবান বই হারিয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, দজলা নদীতে অসংখ্য বই ফেলে দেওয়ার ফলে নদীর পানি বইয়ের কালির কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। এ হামলাকে ইসলামি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হিসেবে দেখা হয়।
ইসলামি বিদ্যাপীঠের সূচনা হয়েছিল নবী করিম (সা.) যুগে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হিজরি শতকে। তবে ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায় সেলজুক আমলে। সে সময় ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রকৌশল, তাসাওফ, চিকিৎসা, গণিত ও সাহিত্য শিক্ষা দেওয়া হতো। সেলজুক প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক ইরানের তুসি, নিশাপুর, ইস্পাহান, খোরাসান, বর্তমান আফগানিস্তানের বাল্খ, ইরাকের বাগদাদসহ বিভিন্ন শহরে নিজামিয়া নামে অসংখ্য মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন। মাদ্রাসায়ে নিজামিয়ার মাধ্যমে শিক্ষাকে একটি সুনির্দিষ্ট ও সংগঠিত কাঠামোয় আনেন তিনি, যা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বসূরি।
মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া বাগদাদ সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও বিখ্যাত ছিল। এটি মধ্যযুগের সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিজামিয়া বাগদাদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ৪৫৭ হিজরির জিলকদ মাসে। দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে শনিবার ১০ জিলকদ ৪৫৯ হিজরিতে শুভ উদ্বোধন হয়। মাদ্রাসার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শায়খ আবু মানসুর বিন ইউসুফ (রহ.)। মাদ্রাসাটি বিশাল অঙ্গনজুড়ে গড়ে উঠেছিল। যেখানে মাদ্রাসা ভবন ছাড়াও ছিল শিক্ষকদের জন্য বাসভবন, মসজিদ, সুবিশাল গ্রন্থাগার, মেহমানখানা ও বাগান।
এতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি—বিশেষ করে ওয়াজ-নসিহতের মজলিশ, ধর্মীয় বিষয়-আশয় নিয়ে যুক্তিতর্কের আসর ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো। এসবের কারণে বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী-মনীষীদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল বাগদাদের মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া। প্রতিষ্ঠালগ্নে এ মাদ্রাসার পাঠ্যতালিকায় ছিল শাফেয়ি ফিকহ, হাদিস, কোরআন অধ্যয়নসহ বেশ কিছু বিষয়। পরে ধীরে ধীরে এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় উলুমুল কোরআন, উসুলে ফিকহ, তাফসির, ইলমুল কালাম, গণিত, চিকিৎসাবিদ্যা, সাহিত্যসহ আরও অনেক বিষয়।
এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি, আবু আবদুল্লাহ তাবারি, আবু মুহাম্মাদ খাওয়ারেজমি, আবু ইসহাক শিরাজি, বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ, মুহাম্মদ আশ-শাহরাস্তানির মতো মুসলিম দার্শনিকেরা। বার্বার বংশীয় আলমোহাদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে তুমারত এখানে ইমাম গাজালির অধীনে লেখাপড়া করেন। পারস্যের কবি সাদি ১১৯৫ থেকে ১২২৬ সাল পর্যন্ত এখানে শিক্ষালাভ করেন। নিজামুল মুলকের জামাতা মুগাতিল ইবনে বাকরি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মী ছিলেন।
শায়খুর রিহলাখ্যাত বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতা ৫৮১ হিজরিতে এই মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে লিখেছেন, ‘নিজামুল মুলক মাদ্রাসা নির্মাণে ২ লাখ স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করেছেন এবং প্রতিবছর ছাত্রদের পড়ালেখা, খাবার ও আবাসনের প্রয়োজন মেটাতে ৫০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা খরচ করতেন। এখানে ৬ হাজার ছাত্র ফিকহ, তাফসির, সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিভাগে লেখাপড়া করত। তিনি মাদ্রাসার যাবতীয় খরচ বহন করতেন। মাদ্রাসার বেতন স্কেল অনুযায়ী গ্রন্থাগারিক প্রতি মাসে ১০ স্বর্ণমুদ্রা বেতন পেতেন। মাদ্রাসা নিজামিয়া বাগদাদের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে ছিলেন জগদ্বিখ্যাত আলেম ও সাহিত্যিক খতিবে তিবরিজি (রহ.)। তিনি কিছুদিন পর্যন্ত এখানে শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করেন।’
১২৫৮ সালে হালাকু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বাগদাদে হামলা করে। সে সময় মাদ্রাসায়ে নিজামিয়া বাগদাদ, বাইতুল হিকমা গ্রন্থাগারসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর রচিত অসংখ্য মূল্যবান বই হারিয়ে যায়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী, দজলা নদীতে অসংখ্য বই ফেলে দেওয়ার ফলে নদীর পানি বইয়ের কালির কারণে কালো হয়ে গিয়েছিল। এ হামলাকে ইসলামি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হিসেবে দেখা হয়।
জনসম্পদকে আমানত হিসেবে দেখা, এর প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং এর অপব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইমানের অপরিহার্য অংশ। এটি একজন মুমিনের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্যের পরিচায়ক। এই সম্পদের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নৈতিক ও ইমানি কর্তব্য।
১ ঘণ্টা আগেআমি প্রবাসে আছি সাত বছর হলো। এখনো বিয়ে করিনি। বিয়ের পর আর প্রবাসে আসার ইচ্ছে নেই। তাই মা-বাবাকে বলেছি, পাত্রী দেখার জন্য। যদি সবকিছু ঠিক থাকে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করে দেশে চলে আসব। প্রবাসে বসে মোবাইলে বিয়ে করা কি আমার জন্য জায়েজ হবে? এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চাই।
১ ঘণ্টা আগেজীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম ব্যবসা-বাণিজ্য। ইসলামে ব্যবসা এক মর্যাদাপূর্ণ পেশা। তবে এই পেশার মর্যাদা নির্ভর করে সততা ও নিষ্ঠার ওপর। আজকের দুনিয়ায় যখন লাভ ও প্রতিযোগিতার মোহে সততাকে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, তখন ইসলামে একজন সৎ ব্যবসায়ীর জন্য রয়েছে এক অনন্য সুসংবাদ। কিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিনে, যখন সূর্যের
২ ঘণ্টা আগেমানবজীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না এক চিরন্তন সত্য। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তাঁর পবিত্র ঠোঁটে যেমন ফুটেছিল হাসি, তেমনই তাঁর চোখ থেকে ঝরেছে অশ্রু। হিজরতের দশম বছর, মহানবী (সা.)-এর জীবনে এমন এক কঠিন
২ ঘণ্টা আগে