ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
রমজান মাস এবং ফরজ রোজা শেষ হলেও বছরজুড়ে বিভিন্ন রোজা রয়েছে। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সেসব রোজার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বছরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রোজার বিবরণ নিম্নরূপ—
এক দিন পরপর রোজা
এক দিন পর পর রোজা রাখাকে সাওমে দাউদ বলে। দাউদ (আ.) এভাবে রোজা রাখতেন। নবী (সা.) এটিকে সর্বোত্তম রোজা বলেছেন এবং বেশি রোজা রাখতে আগ্রহীদের এভাবে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৭৮; সহিহ্ মুসলিম: ২৭৯৩)
সপ্তাহের রোজা
সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা রাসুল (সা.) পছন্দ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার (বান্দার) আমল (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপিত হয়। আমি পছন্দ করি যে রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপন হোক। (সুনানে তিরমিজি: ৭৪৭)
মাসের রোজা
প্রতি আরবি মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলে। নিয়মিতভাবে এই তিন দিনের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৮০)
শাওয়াল মাসের রোজা
রমজানের পর শাওয়াল মাস। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখে, অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন বছরজুড়ে রোজা রাখে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৮১৫)
জিলহজ মাসের রোজা
জিলহজ মাসের প্রথম থেকে নবম দিন পর্যন্ত মোট ৯টি রোজার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছর রোজার সমতুল্য। (সুনানে তিরমিজি: ৭৫৮) জিলহজ মাসের নবম দিন হলো আরাফার দিন। এই দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি আরাফার দিনের রোজা তার পূর্ব ও পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দেবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৮০৩)
আশুরার রোজা
মহররম মাসের ১০ তারিখ হলো আশুরা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়া আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ। (সহিহ্ মুসলিম: ২৮১২)
শাবান মাসের রোজা
নবী (সা.) শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোজা পালন করেননি। তিনি প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা পালন করতেন। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৬৯, সহিহ্ মুসলিম: ২৭৭৯)
মানতের রোজা
রোজাসহ কোনো কিছুর মানত করলে তা পূরণ হলে মানতকারীর ওপর রোজা পালন করা অপরিহার্য। নির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে নির্দিষ্ট দিনে আর অনির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে যেকোনো দিনে রোজা পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের উচিত মানতকে পুরা করা।’ (সুরা হজ: ২৯)
কাজা রোজা
যৌক্তিক ও সংগত কারণে রমজানের রোজা আদায় করতে না পারলে পরে তার কাজা আদায় করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)
কাফফারার রোজা
স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাজাসহ কাফফারা হিসেবে লাগাতার ৬০টি রোজা রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কীসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল, রমজানে রোজা অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার দাস মুক্তির সামর্থ্য আছে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি দুই মাস লাগাতার রোজা রাখতে পারবে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৩৪, সহিহ্ মুসলিম: ২৬৫১) এ হাদিস থেকে স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাফফারার বিধান প্রমাণিত হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন কাজের কাফফারায় রোজা পালন করার বিধান রয়েছে। যেমন, জিহার, ইলা, কসম, হজ বা ওমরায় বাধাগ্রস্ত হলে অথবা হজ ও ওমরা একসঙ্গে করার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কোরবানি করতে সক্ষম না হলে কাফফারা হিসেবে রোজা রাখতে হয়।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
রমজান মাস এবং ফরজ রোজা শেষ হলেও বছরজুড়ে বিভিন্ন রোজা রয়েছে। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সেসব রোজার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। বছরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রোজার বিবরণ নিম্নরূপ—
এক দিন পরপর রোজা
এক দিন পর পর রোজা রাখাকে সাওমে দাউদ বলে। দাউদ (আ.) এভাবে রোজা রাখতেন। নবী (সা.) এটিকে সর্বোত্তম রোজা বলেছেন এবং বেশি রোজা রাখতে আগ্রহীদের এভাবে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৭৮; সহিহ্ মুসলিম: ২৭৯৩)
সপ্তাহের রোজা
সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা রাসুল (সা.) পছন্দ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার (বান্দার) আমল (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপিত হয়। আমি পছন্দ করি যে রোজা অবস্থায় আমার আমল উপস্থাপন হোক। (সুনানে তিরমিজি: ৭৪৭)
মাসের রোজা
প্রতি আরবি মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখের রোজাকে আইয়ামে বিজের রোজা বলে। নিয়মিতভাবে এই তিন দিনের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৮০)
শাওয়াল মাসের রোজা
রমজানের পর শাওয়াল মাস। অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখার বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে রমজানের রোজা রাখে, অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন বছরজুড়ে রোজা রাখে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৮১৫)
জিলহজ মাসের রোজা
জিলহজ মাসের প্রথম থেকে নবম দিন পর্যন্ত মোট ৯টি রোজার ব্যাপারে হাদিসে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর প্রত্যেক দিনের রোজা এক বছর রোজার সমতুল্য। (সুনানে তিরমিজি: ৭৫৮) জিলহজ মাসের নবম দিন হলো আরাফার দিন। এই দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি আরাফার দিনের রোজা তার পূর্ব ও পরের এক বছরের পাপ মোচন করে দেবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ২৮০৩)
আশুরার রোজা
মহররম মাসের ১০ তারিখ হলো আশুরা। রমজানের রোজা ফরজ হওয়া আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররম মাসের রোজা অর্থাৎ আশুরার রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ। (সহিহ্ মুসলিম: ২৮১২)
শাবান মাসের রোজা
নবী (সা.) শাবান মাসে খুব বেশি পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোজা পালন করেননি। তিনি প্রায় পুরো শাবান মাসই রোজা পালন করতেন। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৬৯, সহিহ্ মুসলিম: ২৭৭৯)
মানতের রোজা
রোজাসহ কোনো কিছুর মানত করলে তা পূরণ হলে মানতকারীর ওপর রোজা পালন করা অপরিহার্য। নির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে নির্দিষ্ট দিনে আর অনির্দিষ্ট দিনে রোজা পালন করার মানত করলে যেকোনো দিনে রোজা পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের উচিত মানতকে পুরা করা।’ (সুরা হজ: ২৯)
কাজা রোজা
যৌক্তিক ও সংগত কারণে রমজানের রোজা আদায় করতে না পারলে পরে তার কাজা আদায় করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)
কাফফারার রোজা
স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাজাসহ কাফফারা হিসেবে লাগাতার ৬০টি রোজা রাখতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কীসে তোমাকে ধ্বংস করেছে? সে বলল, রমজানে রোজা অবস্থায় আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার দাস মুক্তির সামর্থ্য আছে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি দুই মাস লাগাতার রোজা রাখতে পারবে? সে বলল, না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। (সহিহ্ বুখারি: ১৮৩৪, সহিহ্ মুসলিম: ২৬৫১) এ হাদিস থেকে স্বেচ্ছায় রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে কাফফারার বিধান প্রমাণিত হয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন কাজের কাফফারায় রোজা পালন করার বিধান রয়েছে। যেমন, জিহার, ইলা, কসম, হজ বা ওমরায় বাধাগ্রস্ত হলে অথবা হজ ও ওমরা একসঙ্গে করার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কোরবানি করতে সক্ষম না হলে কাফফারা হিসেবে রোজা রাখতে হয়।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত নেয়ামতের অবারিত ঠিকানা জান্নাত। জান্নাতকে পার্থিব নেয়ামত দ্বারা আল্লাহ তাআলা সাজিয়েছেন—যা কোনো চোখ চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং কোনো ব্যক্তির অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি।
২ ঘণ্টা আগেমহান আল্লাহ আমাদের একমাত্র রিজিকদাতা। সমগ্র সৃষ্টিকুলের রিজিকের ব্যবস্থা তিনিই করে থাকেন। তাই রিজিকের সন্ধানে দিশেহারা নয়, বরং আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা জরুরি। কোরআন ও হাদিসের আলোকে ৪টি আমল করলে রিজিক বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা যায়।
৩ ঘণ্টা আগেইসলামে দান-সদকা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সদকা কেবল দরিদ্রের প্রয়োজনই মেটায় না, বরং এটি বান্দা ও তার প্রতিপালকের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে।
১০ ঘণ্টা আগেআত্মীয়তার বন্ধন আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। পারস্পরিক সম্পর্কের এ বন্ধন না থাকলে হয়তো পৃথিবীর রূপ ভিন্ন থাকত। মা তার সন্তানের প্রতি, ভাই তার ভাইয়ের প্রতি, স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার যে রূপ আমরা দেখতে পাই—তা হয়তো থাকত না। কোরআন ও হাদিসে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
১ দিন আগে