Ajker Patrika

পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের প্রতিটি দিকের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

বর্তমানে যখন পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে, তখন ইসলামি শিক্ষার প্রচলন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কারণ, পরিবার হলো সমাজের মূল ভিত্তি, আর এই ভিত্তিটি যদি ইসলামের আলোকে গড়ে তোলা যায়, তবেই একটি আদর্শ সমাজ গঠন সম্ভব।

পরিবার: ইসলামি শিক্ষার প্রথম কেন্দ্র

ইসলামি শিক্ষার প্রধান ভিত্তি হলো পবিত্র কোরআন ও হাদিস। আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের সর্বপ্রথম নিজেদের ও পরিবারকে পরিশুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন: ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম: ৬)

এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া প্রত্যেক মা-বাবার জন্য একটি অপরিহার্য দায়িত্ব। পারিবারিক পরিবেশে ইসলামি শিক্ষা চর্চার মাধ্যমে সন্তানরা সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করতে শেখে, বড়দের প্রতি সম্মান ও ছোটদের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তোলে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল, এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ্ মুসলিম)

বাবা-মা যদি নিজেরা ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত হন এবং তা অনুসরণ করেন, তবে সন্তানরাও সহজেই সেই শিক্ষায় বেড়ে ওঠে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং একটি আদর্শ প্রজন্ম গড়ে তোলার মূল চাবিকাঠি।

সমাজ গঠনে ইসলামি শিক্ষার ভূমিকা

সমাজে বিদ্যমান অপরাধ, দুর্নীতি, অবিচার, মাদকাসক্তি ইত্যাদির মূল কারণ হলো ইসলামি শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি। ইসলামি শিক্ষা সমাজের সকল স্তরে ইনসাফ, দয়া, মানবতা, সহযোগিতা ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।

সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা: আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আদেশ দেন ন্যায়বিচার, সদাচরণ এবং আত্মীয়দের হক আদায় করার।’ (সুরা নাহল: ৯০)। সমাজে এই শিক্ষার প্রচলন হলে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।

আদর্শ চরিত্র গঠন: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন অনুসরণ করাই হলো প্রকৃত ইসলামি শিক্ষা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আহজাব: ২১)। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করলে সমাজে দায়িত্বশীল ও চরিত্রবান নাগরিক তৈরি হবে।

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ: ইসলামি শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজের প্রতিটি সদস্য সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার দায়িত্ববোধ অনুভব করে, যা একটি সুস্থ সমাজ গঠনে অপরিহার্য।

এজন্য শুধুমাত্র পরিবারে নয়, বরং বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হলে নতুন প্রজন্ম ইসলামের মূলনীতিগুলো জানতে পারবে এবং এই শিক্ষাই তাদের আদর্শ ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

ইসলামি শিক্ষা শুধু নামাজ-রোজা শেখায় না, বরং একজন মানুষকে আদর্শ ও মানবিক মানুষ হতে সাহায্য করে। তাই পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য ইসলামি শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

লেখক: আহমাদ বিন ইব্রাহিম, শিক্ষার্থী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

টেলিটক এখন গলার কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত