Ajker Patrika

সাহাবিদের মর্যাদা ও আমাদের জীবনচর্চা

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত
মসজিদে নববী, মদিনা। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসে সাহাবিদের স্থান অতুলনীয়। নবী করিম (সা.)-এর সরাসরি সঙ্গী এবং তাঁর শিক্ষার অনন্য প্রয়োগকারী হিসেবে তাঁরা মানবতার জন্য এক জীবন্ত উদাহরণ। সাহাবিরা শুধু আল্লাহর পথের পথিকই ছিলেন না; বরং ন্যায়, ধৈর্য, সাহস এবং আত্মত্যাগের সর্বোত্তম পরিচয় স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের জীবন ও চরিত্রের মর্যাদা আমাদের জন্য কেবল ইতিহাস নয়; বরং বর্তমান জীবনে নৈতিক ও আত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যবান শিক্ষা।

আজকের এ সমাজে সাহাবিদের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জীবনচর্চার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তাঁদের শিক্ষা আমাদেরকে ধৈর্য ধরে লক্ষ্য অর্জন, ন্যায় ও সততার প্রতি অটল থাকা এবং সমাজে সঠিক ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে উদ্বুদ্ধ করে।

সাহাবিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

ইমান ও নিষ্ঠা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণে ছিলেন অবিচল। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সামাজিক বৈরিতা, পরিবার ও সম্পদের ক্ষতি এবং নানাবিধ বিপর্যয় সত্ত্বেও তাঁরা দৃঢ় ছিলেন।

আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম: সাহাবিরা ইসলামের জন্য নিজের সব জীবন উৎসর্গ করেছেন। হিজরতের সময় পরিবার, সম্পদ এবং মাতৃভূমি ত্যাগ, বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ, দান ও খয়রাত বিতরণ এবং শিক্ষার প্রচার—সবই ছিল তাঁদের জীবনের অংশ। এই ত্যাগ ও পরিশ্রম তাঁদের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের শেখায় যে, ধর্মের জন্য আত্মত্যাগ সর্বদা সম্মানজনক।

সাহাবিদের শিক্ষণীয় দিক

নৈতিক ও সামাজিক আদর্শ: সাহাবিরা শুধু যুদ্ধে বা ধর্ম প্রচারে নয়, সামাজিক আচরণ ও নৈতিকতার ক্ষেত্রেও আদর্শ ছিলেন। তাঁরা সততা, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়পরায়ণতার সর্বোচ্চ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। প্রতিটি মুসলিমের উচিত তাঁদের নৈতিকতা অনুকরণ করা এবং সমাজে একটি সুসংগঠিত ও ন্যায়পরায়ণ পরিবেশ গঠন করা।

নেতৃত্ব ও পরিকল্পনা: সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশনায় নেতৃত্বদান ও সমন্বয়পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁরা অসংখ্য মুসলিম সম্প্রদায়কে যুগোপযোগী নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করেছেন। বিশেষ করে হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনায় স্থানান্তর এবং সেখানে একটি সুশৃঙ্খল মুসলিম সমাজ গঠনের নেতৃত্ব ছিল তাঁদের।

শিক্ষা ও প্রচারের গুরুত্ব: সাহাবিরা ইসলামের শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁরা কেবল জ্ঞান অর্জন করতেন না; বরং তা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। সাহাবিদের জীবন ছিল ধৈর্য, অধ্যবসায় ও জ্ঞানচর্চার অনন্য সংমিশ্রণ। তাঁদের শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, জ্ঞান অর্জন ও সম্প্রসারণই সমাজের প্রকৃত উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সাহাবিদের জীবন আমাদের জন্য চিরন্তন দৃষ্টান্ত। আমাদের উচিত—

  • ১. সাহাবিদের ত্যাগ ও গুণাবলি স্মরণ করা।
  • ২. তাঁদের জীবন ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
  • ৩. ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা থেকে তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করা।
  • ৪. নিজেদের জীবনে সাহাবিদের গুণাবলি—ইমান, ধৈর্য, আত্মত্যাগ, সহিষ্ণুতা ও ন্যায়বোধ গড়ে তোলা। সাহাবিদের জীবন আমাদের শেখায় যে, ইমান ও নৈতিকতা কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। তাঁরা দেখিয়েছেন কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতেও সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকা যায়।

সাহাবিরা ইসলামের প্রাথমিক যুগে আল্লাহ ও নবীর পথে সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সাহাবিদের মতো আদর্শ অনুসরণে সক্ষম করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...