Ajker Patrika

ওমরাহর বিধান, ফজিলত ও তাৎপর্য

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওমরাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ভ্রমণ করা বা জনবহুল স্থানে ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে, ইহরাম বাঁধা অবস্থায় কাবা শরিফ তাওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সায়ি করাকে ওমরাহ বলে।

ওমরাহ পরিচিতি

নির্দিষ্ট স্থান (মিকাত) থেকে ইহরাম বাঁধার মাধ্যমে ওমরাহ শুরু হয়। এরপর ওমরাহর মধ্যে রয়েছে কাবা ঘরকে সাতবার প্রদক্ষিণ করা, সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়ানো বা হাঁটা, তাওয়াফ ও সায়ি শেষে মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা।

ওমরাহর গুরুত্ব ও সময়

হজের মতো এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জীবনে একবার ওমরাহ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (জরুরি সুন্নাহ)। হজের নির্দিষ্ট সময় (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) ব্যতীত বছরের যেকোনো সময়ই ওমরাহ পালন করা যায়। ওমরাহ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। একই সফরে একাধিক ওমরাহ করার অনুমতি আছে।

ওমরাহর ফজিলত

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ধারাবাহিকভাবে একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো। কেননা, হজ ও ওমরাহ এমনভাবে অভাব মোচন করে এবং গুনাহ দূর করে, যেমনভাবে কামারের হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার মরিচা দূর করে।’ (জামে তিরমিজি: ৮১০)

হজরত জাবের (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হজ আদায়কারী ব্যক্তি কখনোই একেবারে নিঃস্ব হয় না।’ (তাবারানি ফিল আওসাত: ৫২০৯)

অন্যত্র হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহর পর আরেকটি ওমরাহ আদায় করা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের জন্য কাফফারা।’ (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯)

এ ছাড়া ওমরাহ আদায়ে প্রয়োজনে ১ টাকা খরচ করলে ৭০০ টাকা সদকা করার সওয়াব পাওয়া যায়। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাহ হলো আল্লাহর রাস্তা। আর আল্লাহর রাস্তায় ১ দিরহাম খরচের সওয়াব ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।’ (তাবারানি ফিল আওসাত: ৫৬৯০)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ-ওমরাহ আদায়কারী আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁরা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাঁদের প্রার্থনা কবুল করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩)

আবু হুরাইরা (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘এক ওমরাহ অন্য ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সকল কিছুর কাফফারা।’ (সহিহ বুখারি: ১৭২৩)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব পায়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৯৫৬)

আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) নসিহত করেন, ‘হে আয়েশা, তুমি ব্যয় করতে সংকোচ কোরো না। কারণ, তোমার ব্যয় অনুপাতে ওমরাহর প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (তারগিব: ১৬৮১)

হাজরে আসওয়াদ ইসতেলামের ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই পাথর কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে তার দুটি চোখ থাকবে, যা দ্বারা সে দেখবে। জিহ্বা থাকবে যা দ্বারা সে কথা বলবে। সে ওই ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে তাকে সঠিক পন্থায় ইসতেলাম করবে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৯৪৪)। হাজরে আসওয়াদকে চুমু দেওয়া, স্পর্শ করা বা দূর থেকে চুমুর ইঙ্গিত করাকে বলে ইসতেলাম। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।

সাফা-মারওয়া সায়ি করার ফজিলত

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সাফা-মারওয়া সায়ি করো। কেননা, তা ৭০ জন দাস মুক্ত করার সমতুল্য।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১৮৮৭)

হলক বা চুল কাটার ফজিলত

আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, যারা চুল কাটবে তাদের?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ সাহাবায়ে কেরাম আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘যারা চুল কাটবে তাদের?’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন।’ তৃতীয়বার আবার আরজ করলে নবীজি (সা.) বললেন, যারা চুল কাটবে তাদেরকেও।’ (সহিহ বুখারি: ১৭২৮)

ওমরাহ পালনের উপকারিতা

  • শারীরিক ও মানসিক পরিশুদ্ধি লাভ হয়।
  • আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়।
  • এর মাধ্যমে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিতি ও সম্প্রীতি বাড়ে।

লেখক: হাফেজ মাওলানা আজিজুল হক, কলামিস্ট ও মাদ্রাসাশিক্ষক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...