আজকের পত্রিকা ডেস্ক
৭০০ বছর আগে ১৩২৫ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে মক্কার উদ্দেশে হজ করতে রওনা হয়েছিলেন মরক্কোর তরুণ মুসলিম আলেম ইবনে বতুতা। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণই ধীরে ধীরে রূপ নেয় বিস্ময়কর এক অভিযাত্রায়। এই অভিযাত্রা চলে টানা ২৯ বছর! এই সময়ের মধ্যে তিনি জাহাজডুবি, ডাকাতি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, প্রাণনাশের আশঙ্কা এবং ভয়ংকর মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর মতো অগণিত ঘটনার মুখোমুখি হন। শেষ পর্যন্ত ১৩৫৪ সালে দেশে ফিরে তিনি নিজের এই অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন আর-রিহলা নামের ভ্রমণকাহিনিতে, যা আজও ইসলামি ইতিহাসে অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত।
ইবনে বতুতা ভ্রমণ করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার। সেই সময়ে যা ছিল অকল্পনীয়। দীর্ঘ এই পথে তিনি কখনো চড়েছে ঘোড়ার পিঠে, আবার কখনো উট, গাধা, গাড়ি কিংবা জাহাজে। ঘুরেছেন আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে।
এই যাত্রায় অগণিত সব বিপদের মধ্যে তিনি আরবের মরুভূমিতে পথ হারিয়েছেন, আনাতোলিয়ায় তুষারঝড়ে পড়েছেন, ডাকাতদের হাতে অপহৃত হয়েছেন, তীরবিদ্ধ হয়েছেন। ভারত উপকূলে জাহাজডুবির শিকার হওয়া ছাড়াও তিনি দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের হাতে মৃত্যুদণ্ড থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন। মালদ্বীপের রানিকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। একাধিকবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার মতো ঘটনা তো আছেই। সব মিলিয়ে এক নাটকীয় জীবন। এমনকি তিনি ভয়াবহ ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময়ও ভ্রমণ চালিয়ে গেছেন। এই মহামারি ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
ইবনে বতুতার হজযাত্রাটি শুরু হয়েছিল মরক্কোর ট্যাঞ্জিয়ার থেকে। পরে তিনি উত্তর আফ্রিকার উপকূল ঘেঁষে মিশরে পৌঁছান এবং সেখানেই ভ্রমণের প্রতি অনুরাগ গভীর হয়। তিনি স্থির করেন, জীবনভর জ্ঞান ও ইসলাম অন্বেষণেই কাটিয়ে দেবেন। হজের পথে তিনি অন্যান্য আলেমদের সঙ্গে ধর্ম ও আইন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। পরে সিরিয়া, মিশর ও সৌদি আরবে বহু খ্যাতিমান আলেমের কাছে অধ্যয়ন করে ইসলামি দুনিয়ায় আলেম ও বিচারক হিসেবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
১৩৩৪ সালে তিনি পৌঁছান ভারতবর্ষে। দিল্লির সুলতান তুঘলক তাঁকে বিচারক ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। সাত বছর বিলাসী জীবনের পর সুলতানের অবিশ্বাস ও ক্রোধের বশবর্তী হন। সুলতানের কাছ থেকে রক্ষা পেতে তিনি তাই ভারতে স্থায়ী না হয়ে অন্যত্র যাত্রা করেন। তুঘলকের নির্দেশে চীনের সম্রাটের কাছে দূত হিসেবে পাঠানো হলে পথে তিনি ডাকাতদের হাতে পড়েন, জাহাজডুবির সম্মুখীন হন, তবে আবারও প্রাণে বেঁচে যান। এই যাত্রায় চীনে পৌঁছানোর আগে তিনি শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশও ভ্রমণ করেন।
১৩৪৯ সালে বিশ্বজুড়ে যখন ব্ল্যাক ডেথ মহামারি চলছে, তখন নিজের দেশ মরক্কোতেও পা রাখেন তিনি। তবে এখানেই থেমে যাননি; আরও কয়েক বছর পর তিনি পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্য ও স্পেন সফর করেন। অবশেষে ফিরে এসে রচনা করেন আর-রিহলা, যেখানে তিনি তুলে ধরেন তৎকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চিত্র।
ইতিহাসবিদদের মতে, ভৌগোলিক বিস্তার ও তথ্য সমৃদ্ধির দিক থেকে আর-রিহলা অতীতের সব ভ্রমণবৃত্তান্তকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে আমরা পাই তৎকালীন ভারত, মালি সাম্রাজ্য, মঙ্গলদের গোল্ডেন হোর্ড, মহামারির সময় মিশর-সিরিয়ার জীবনযাত্রার জীবন্ত বর্ণনা। পাশাপাশি পাওয়া যায় ইসলামের প্রভাব ও বিশ্বজনীন চরিত্রের দলিল—যেখানে আলেম, বণিক, সুফি ও কূটনীতিকদের নেটওয়ার্ক এক বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।
তারপরও পশ্চিমা বিশ্বে ইবনে বতুতা তুলনামূলকভাবে অবহেলিত। তাঁর চেয়ে বরং মারকো পোলোকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেখানে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও তাঁকে নিয়ে গবেষণা সীমিত। গবেষকদের মতে, তাঁকে নতুনভাবে স্মরণ ও মূল্যায়ন করা জরুরি। কারণ তাঁর জীবন ও রচনা শুধু ভ্রমণগাথা নয়, বরং চতুর্দশ শতকের ইসলামি সভ্যতার প্রাণবন্ত প্রতিচ্ছবি।
৭০০ বছর আগে ১৩২৫ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে মক্কার উদ্দেশে হজ করতে রওনা হয়েছিলেন মরক্কোর তরুণ মুসলিম আলেম ইবনে বতুতা। কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত ভ্রমণই ধীরে ধীরে রূপ নেয় বিস্ময়কর এক অভিযাত্রায়। এই অভিযাত্রা চলে টানা ২৯ বছর! এই সময়ের মধ্যে তিনি জাহাজডুবি, ডাকাতি, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, প্রাণনাশের আশঙ্কা এবং ভয়ংকর মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’-এর মতো অগণিত ঘটনার মুখোমুখি হন। শেষ পর্যন্ত ১৩৫৪ সালে দেশে ফিরে তিনি নিজের এই অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন আর-রিহলা নামের ভ্রমণকাহিনিতে, যা আজও ইসলামি ইতিহাসে অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত।
ইবনে বতুতা ভ্রমণ করেছিলেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার। সেই সময়ে যা ছিল অকল্পনীয়। দীর্ঘ এই পথে তিনি কখনো চড়েছে ঘোড়ার পিঠে, আবার কখনো উট, গাধা, গাড়ি কিংবা জাহাজে। ঘুরেছেন আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে।
এই যাত্রায় অগণিত সব বিপদের মধ্যে তিনি আরবের মরুভূমিতে পথ হারিয়েছেন, আনাতোলিয়ায় তুষারঝড়ে পড়েছেন, ডাকাতদের হাতে অপহৃত হয়েছেন, তীরবিদ্ধ হয়েছেন। ভারত উপকূলে জাহাজডুবির শিকার হওয়া ছাড়াও তিনি দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের হাতে মৃত্যুদণ্ড থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন। মালদ্বীপের রানিকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রেও জড়িয়ে পড়েছিলেন। একাধিকবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার মতো ঘটনা তো আছেই। সব মিলিয়ে এক নাটকীয় জীবন। এমনকি তিনি ভয়াবহ ব্ল্যাক ডেথ মহামারির সময়ও ভ্রমণ চালিয়ে গেছেন। এই মহামারি ইউরোপ ও এশিয়ায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
ইবনে বতুতার হজযাত্রাটি শুরু হয়েছিল মরক্কোর ট্যাঞ্জিয়ার থেকে। পরে তিনি উত্তর আফ্রিকার উপকূল ঘেঁষে মিশরে পৌঁছান এবং সেখানেই ভ্রমণের প্রতি অনুরাগ গভীর হয়। তিনি স্থির করেন, জীবনভর জ্ঞান ও ইসলাম অন্বেষণেই কাটিয়ে দেবেন। হজের পথে তিনি অন্যান্য আলেমদের সঙ্গে ধর্ম ও আইন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। পরে সিরিয়া, মিশর ও সৌদি আরবে বহু খ্যাতিমান আলেমের কাছে অধ্যয়ন করে ইসলামি দুনিয়ায় আলেম ও বিচারক হিসেবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন।
১৩৩৪ সালে তিনি পৌঁছান ভারতবর্ষে। দিল্লির সুলতান তুঘলক তাঁকে বিচারক ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। সাত বছর বিলাসী জীবনের পর সুলতানের অবিশ্বাস ও ক্রোধের বশবর্তী হন। সুলতানের কাছ থেকে রক্ষা পেতে তিনি তাই ভারতে স্থায়ী না হয়ে অন্যত্র যাত্রা করেন। তুঘলকের নির্দেশে চীনের সম্রাটের কাছে দূত হিসেবে পাঠানো হলে পথে তিনি ডাকাতদের হাতে পড়েন, জাহাজডুবির সম্মুখীন হন, তবে আবারও প্রাণে বেঁচে যান। এই যাত্রায় চীনে পৌঁছানোর আগে তিনি শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশও ভ্রমণ করেন।
১৩৪৯ সালে বিশ্বজুড়ে যখন ব্ল্যাক ডেথ মহামারি চলছে, তখন নিজের দেশ মরক্কোতেও পা রাখেন তিনি। তবে এখানেই থেমে যাননি; আরও কয়েক বছর পর তিনি পশ্চিম আফ্রিকার মালি সাম্রাজ্য ও স্পেন সফর করেন। অবশেষে ফিরে এসে রচনা করেন আর-রিহলা, যেখানে তিনি তুলে ধরেন তৎকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চিত্র।
ইতিহাসবিদদের মতে, ভৌগোলিক বিস্তার ও তথ্য সমৃদ্ধির দিক থেকে আর-রিহলা অতীতের সব ভ্রমণবৃত্তান্তকে ছাড়িয়ে গেছে। এতে আমরা পাই তৎকালীন ভারত, মালি সাম্রাজ্য, মঙ্গলদের গোল্ডেন হোর্ড, মহামারির সময় মিশর-সিরিয়ার জীবনযাত্রার জীবন্ত বর্ণনা। পাশাপাশি পাওয়া যায় ইসলামের প্রভাব ও বিশ্বজনীন চরিত্রের দলিল—যেখানে আলেম, বণিক, সুফি ও কূটনীতিকদের নেটওয়ার্ক এক বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল।
তারপরও পশ্চিমা বিশ্বে ইবনে বতুতা তুলনামূলকভাবে অবহেলিত। তাঁর চেয়ে বরং মারকো পোলোকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় সেখানে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও তাঁকে নিয়ে গবেষণা সীমিত। গবেষকদের মতে, তাঁকে নতুনভাবে স্মরণ ও মূল্যায়ন করা জরুরি। কারণ তাঁর জীবন ও রচনা শুধু ভ্রমণগাথা নয়, বরং চতুর্দশ শতকের ইসলামি সভ্যতার প্রাণবন্ত প্রতিচ্ছবি।
মানুষের মুখের ভাষা তার অন্তরের প্রতিচ্ছবি। একজন মুমিনের মুখের ভাষা শুধু তার ব্যক্তিগত আচরণ নয়; বরং তার ইমান, চরিত্র এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিচায়ক। ইসলাম এমন একটি জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের প্রতিটি দিককে শুদ্ধ ও সুন্দর করার শিক্ষা দেয়। মুখের ভাষা তার অন্যতম।
৯ ঘণ্টা আগেসৌদি আরবের শহরগুলোর নামকরণের পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভূগোল, এবং আধ্যাত্মিকতার গভীর সম্পর্ক। মক্কা ও মদিনা থেকে শুরু করে জেদ্দা এবং নিওম পর্যন্ত, এই শহরগুলোর নাম তাদের উৎপত্তি ও তাৎপর্যকে নির্দেশ করে।
১৬ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৬ ঘণ্টা আগেইসলামের দৃষ্টিতে পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ইসলাম শুধু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেয় না, বরং সামাজিক, পরিবেশগত ও আধ্যাত্মিক পরিচ্ছন্নতাকেও সমান গুরুত্ব দেয়।
১ দিন আগে