ইসলাম ডেস্ক

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন।
তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয় হয়ে থাকবে। তাঁরা কেবল ইসলামের রাজনৈতিক নেতৃত্বই দেননি, বরং নববী আদর্শের খাঁটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে মানবজাতির সামনে এক অনন্য জীবনদর্শন রেখে গেছেন।
এই চার খলিফার মধ্যে বিশেষভাবে দ্বিতীয় খলিফা, আমিরুল মুমিনিন ফারুকে আজম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব ও কীর্তি এক অসাধারণ উচ্চতা স্পর্শ করেছে। তাঁর মতো মর্যাদা সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)-এর পর আর কারও পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, ন্যায়বিচারের প্রতি অনমনীয় অঙ্গীকার এবং ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মহিমা চিরকাল ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
নবীজি (সা.)-এর প্রশংসাপূর্ণ বাণী ও আল-ফারুক উপাধি
হজরত উমর (রা.) সেই সৌভাগ্যবানদের একজন, যাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাঁর বহুমুখী গুণাবলির সাক্ষ্য স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এই গুণাবলির কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ইসলাম গ্রহণের জন্য আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করেছিলেন, যা আল্লাহ কবুলও করেছিলেন। ফলস্বরূপ, তাঁর ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই ইসলামের প্রসার ও বিজয় আরও সুদৃঢ় হতে থাকে।
নবুওয়াতের দরবার থেকে তিনি ‘আল-ফারুক’ উপাধি লাভ করেন, যা উম্মতের আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। এর অর্থ—‘সত্য-মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণকারী’। এই উপাধি হজরত উমর (রা.)-এর সত্যপ্রেম ও সত্যের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার গুণ প্রকাশ করে। সত্যের ব্যাপারে তিনি কারও মর্যাদা বা প্রভাবের পরোয়া করতেন না। এমনকি নিজের প্রাণ বা সম্পদের ক্ষতিরও ভয় করতেন না। কোনো বিষয় পুরোপুরি অনুধাবন না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বারবার প্রশ্ন করতেন।
তাঁর মহামানবীয় সত্তা ছিল সরলতার প্রতীক। আর তাঁর জীবন ছিল সত্য ও নিষ্কলুষতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি ছিলেন রাসুলের (সা.) সত্যিকারের প্রেমিক, ইসলাম ও মুসলমানদের একনিষ্ঠ সেবক। মুনাফিক ও আল্লাহর শত্রুরা ছিল তাঁর জাতশত্রু। যারা সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত এবং অবাধ্যতায় লিপ্ত হতো, তাদের জন্য তিনি ছিলেন খোলা তলোয়ার। সুপরিকল্পনা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, সাহস ও উদারতা, মর্যাদা, ন্যায়বিচার, আল্লাহর ভয়, পরকালীন জীবনের ভাবনা এবং মুসলমানদের অধিকার রক্ষার পূর্ণ দায়িত্বশীলতার গুণে তিনি ভূষিত ছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সর্বাঙ্গীণ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বলেছেন—‘যদি আমার পরেও নবুওয়াতের ধারা চলমান থাকত, তাহলে আমার পর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮৬)। যদি হজরত উমর (রা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে আর কোনো হাদিস না-ও থাকত, তাহলে এই একটি হাদিসই তাঁর মর্যাদা প্রকাশের জন্য যথেষ্ট ছিল। অথচ হাদিস ভান্ডারে তাঁর মর্যাদা সংক্রান্ত বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এই হাদিসের আলোকে হজরত উমর (রা.)-এর ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নবী ও রাসুলগণ মানবতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন থাকেন। সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তাঁরাই সর্বশ্রেষ্ঠ। প্রতিজন নবীর মধ্যে তাঁর মর্যাদার উপযুক্ত সব গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান থাকে। তিনি বংশ-মর্যাদার দিক থেকে সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিগত গুণাবলির ক্ষেত্রেও সবার ওপরে থাকেন। এই হাদিস থেকে জানা যায় যে, নবীদের মধ্যে যে গুণাবলি থাকে, আল্লাহ তাআলা হজরত উমর (রা.)-কেও সেই সব গুণাবলি দ্বারা বিভূষিত করেছিলেন।
জীবন এবং আদর্শ
ফারুকে আজম (রা.)-এর জীবনকে তিনটি সময়ে ভাগ করা যায়:
এই তিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর ব্যক্তিত্বে এমন সব গুণাবলি বিদ্যমান ছিল, যার কারণে তিনি সমসাময়িকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় অগ্রগণ্য ছিলেন। কুফরের যুগে, তার শৈশব আরবদের রীতিনীতির মতো উট চরানোর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। অতঃপর তিনি সেই সময়ের মানদণ্ড অনুযায়ী পড়াশোনা ও উৎকৃষ্ট বিদ্যা-বুদ্ধি অর্জনে মনোযোগ দেন।
এর পাশাপাশি কুস্তি, শারীরিক শক্তি, ঘোড়সওয়ারি, যুদ্ধবিদ্যা ও সামরিক কৌশল, প্রভাবশালী বক্তব্য, বাগ্মিতা, সঠিক ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা, সাহসিকতা ও নির্ভীকতা এবং মানুষ চেনার অসাধারণ ক্ষমতার মতো বহু গুণাবলি তাঁর মাঝে প্রকাশিত হয়।
এসব গুণের কারণে কুরাইশ গোত্র তাঁকে সম্মানিত নেতাদের মধ্যে গণ্য করে এবং কূটনৈতিক দায়িত্বের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়। বিভিন্ন গোত্র এমনকি কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গেও তিনি কুরাইশদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর দ্বিতীয় উজ্জ্বল সময়কাল ছিল ইসলামের যুগ। ইসলামের আলো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্যের বরকতে তাঁর গুণাবলি ও চরিত্র আরও উজ্জ্বল ও পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাঁর এমন অবস্থা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন—‘আল্লাহ তাআলা উমরের অন্তর ও জিহ্বায় সত্য প্রবাহিত করে দিয়েছেন।’ অর্থাৎ, তাঁর অন্তরে যা উদয় হবে তা-ই সত্য হবে এবং তাঁর জিহ্বা থেকে যা উচ্চারিত হবে তা সত্য বৈ কিছু হতে পারে না।
বহুবার এমন ঘটেছে যে, হজরত উমর (রা.)-এর মতের সঙ্গে মিল রেখে রাসুলুল্লাহর (সা.) ওপর ওহি নাজিল হয়েছে। যেমন—বদরের যুদ্ধে বন্দীদের বিষয়ে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীদের পর্দার বিধান সংক্রান্ত বিষয়ে।
তাঁর মতামত এতটাই সঠিক ও সুচিন্তিত হতো যে, তিনি নিজেই বলেছেন—‘আমি যখনই কারও বিষয়ে কোনো মতামত দিয়েছি, সেটি যথাযথ ও ফলপ্রসূ প্রমাণিত হয়েছে।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরামর্শের ওপর এতটাই আস্থা রাখতেন যে তিনি বলেছেন—‘দুনিয়াতে প্রত্যেক নবীর দুজন করে উজির থাকে। আর আমার উজির হলেন আবু বকর ও উমর।’ কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা হালকা পরামর্শযোগ্য বিষয়েও রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া চূড়ান্ত করতেন না।
খিলাফতের স্বর্ণযুগ
তাঁর জীবনের তৃতীয় সময়কাল, যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ও গৌরবময় ছিল, তা হলো তাঁর খিলাফত ও শাসনকাল। এ সময়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব থেকে অসাধারণ কৃতিত্ব প্রকাশ পায়। একজন সফল ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের জন্য যেসব গুণ ও যোগ্যতা প্রয়োজন, তা তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল।
অথচ তাঁর পরিবারে এর আগে কখনো কেউ রাজা হয়নি, যাতে শাসন কুশলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা তৈরি হতে পারে। শৈশবে যখন তিনি উট চরাতেন, তখন শাসনকাজ শেখার প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া আরবের হিজাজ অঞ্চলে বহু শতাব্দী ধরে কোনো রাজ্য-রাজার ব্যবস্থাও বিদ্যমান ছিল না।
তাঁর জীবনে শাসন কুশলতা শেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও তিনি এমন সব শাসননীতির ভিত্তি স্থাপন করেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় থাকবে। তিনি এমন শাসনপদ্ধতি গ্রহণ করেন যা একটি সফল সরকারের জন্য অপরিহার্য; রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সুপরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতা, শাসন মর্যাদার গাম্ভীর্য, অশান্তি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের উৎসাহ প্রদান, আত্মীয়প্রীতি থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও নিজের জন্য অত্যন্ত সাদামাটা, বরং দরিদ্রসুলভ ও সংযমী জীবনযাপন—এসবই ছিল তাঁর গুণাবলি।
ন্যায়বিচারে তিনি এমন উচ্চ মানদণ্ড স্থাপন করেন যে, ন্যায়বিচারের প্রতীক বলে পরিচিত নওশেরওয়াহ-এর যুগেও ইতিহাসে কিছু অবিচারের ঘটনা পাওয়া যায়; কিন্তু ফারুকি যুগের ইতিহাস এমন একটি ঘটনাও পেশ করতে পারেনি যাতে অবিচারের সামান্য ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়। ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে তিনি নিজের, আত্মীয়স্বজনের এমনকি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও কোনো প্রকার ছাড় দিতেন না। ন্যায়ের ক্ষেত্রে তাঁর কাছে সবাই সমান ছিল।
একবার এক সাহাবির সঙ্গে তাঁর বিরোধ মীমাংসার জন্য মামলা আদালতে ওঠে। তিনি মদিনার কাজির আদালতে হাজির হন। কাজি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর জন্য আসন খালি করে দেন, কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন—‘তুমি তো এই মামলায় প্রথমেই অবিচার করে ফেলেছ।’ তারপর তিনি নিজেই উঠে গিয়ে অপর পক্ষের পাশে বসেন।
তাঁর শাসনামলে তাঁর জীবনযাপন এতটাই সহজ ছিল যে, তিনি যে খলিফা এটা বোঝার বাহ্যিক কোনো লক্ষণ ছিল না। তিনি সাধারণ খাবার খেতেন। প্রায়শই যবের রুটি জায়তুন তেল দিয়ে খেতেন। খসখসে মোটা তালি দেওয়া কাপড় পড়তেন। একবার তাঁর জামায় বারোটি তালি পাওয়া গিয়েছিল।
রাতের বেলায় তিনি নিঃশব্দে শহরে ঘুরে বেড়াতেন, মানুষের অভিযোগ খোলা মনে শুনতেন এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতেন। মুসলমানদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার করতেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: মুফতি আহমাদুল্লাহ মাসউদ, শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৮ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১১ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
১১ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
১১ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১১ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
১১ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
১১ ঘণ্টা আগেমুফতি এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৮ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
১১ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
১১ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া। নতুন বছর আগমনের এ সন্ধিক্ষণ মুমিনের জন্য ত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনার সময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ইমানদারের জন্য নতুন বছরের করণীয় মৌলিকভাবে দুটি—এক. অতীত জীবনের হিসাব নেওয়া। দুই. আগামীর পথচলা সুপরিকল্পিত করা।
মানুষের জীবন আল্লাহ তাআলার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানতের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে ব্যয় করা হলো, আখিরাতে তার পূর্ণাঙ্গ জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কোনো আদেশ অমান্য করা কিংবা সময়কে অলসতায় নষ্ট করা এই আমানতের খেয়ানতের শামিল। খেয়ানতের পরিণতি যে ভয়াবহ, তা কোরআন-হাদিসে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ আল্লাহর দরবার থেকে এক পা-ও নড়তে পারবে না। এক. তার জীবন সম্পর্কে, সে কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে। দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে কোন কাজে তা ব্যয় করেছে। তিন. তার সম্পদ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা উপার্জন করেছে। চার. এবং উপার্জিত সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে। পাঁচ. সে যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)। যেহেতু হিসাব অবশ্যম্ভাবী, তাই পরকালের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে নিজের হিসাব নিজে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন বছরের শুরুতে মুমিনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত গত বছরের জীবনচিত্র পর্যালোচনা করা। যদি দেখা যায়, সময়ের একটি বড় অংশ আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় হয়েছে, তাহলে তার জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। কারণ কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি। আর যদি গুনাহ, অবহেলা ও ত্রুটির হিসাব চোখে পড়ে, তবে বিলম্ব না করে ক্ষমা প্রার্থনা ও খাঁটি তওবা করে নেকির পথে ফিরে আসাই ইমানদারের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
তওবার পাশাপাশি নেক আমলে আত্মনিয়োগ করাও জরুরি। কেননা সৎকর্ম পাপের কালিমা মুছে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে, এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।’ (সুরা হুদ: ১১৪)
নতুন বছরে মুমিনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আগামীর জন্য সুদৃঢ় সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যাতে অবশিষ্ট জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় হয়। অহেতুক ব্যস্ততা, অর্থহীন বিনোদন কিংবা অলসতায় যেন একটি মুহূর্তও নষ্ট না হয়।
এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হবে নিজের নফসকে সংযত রাখা এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এ প্রসঙ্গে শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা পোষণ করে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া। নতুন বছর আগমনের এ সন্ধিক্ষণ মুমিনের জন্য ত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনার সময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ইমানদারের জন্য নতুন বছরের করণীয় মৌলিকভাবে দুটি—এক. অতীত জীবনের হিসাব নেওয়া। দুই. আগামীর পথচলা সুপরিকল্পিত করা।
মানুষের জীবন আল্লাহ তাআলার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানতের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে ব্যয় করা হলো, আখিরাতে তার পূর্ণাঙ্গ জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কোনো আদেশ অমান্য করা কিংবা সময়কে অলসতায় নষ্ট করা এই আমানতের খেয়ানতের শামিল। খেয়ানতের পরিণতি যে ভয়াবহ, তা কোরআন-হাদিসে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ আল্লাহর দরবার থেকে এক পা-ও নড়তে পারবে না। এক. তার জীবন সম্পর্কে, সে কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে। দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে কোন কাজে তা ব্যয় করেছে। তিন. তার সম্পদ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা উপার্জন করেছে। চার. এবং উপার্জিত সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে। পাঁচ. সে যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)। যেহেতু হিসাব অবশ্যম্ভাবী, তাই পরকালের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে নিজের হিসাব নিজে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন বছরের শুরুতে মুমিনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত গত বছরের জীবনচিত্র পর্যালোচনা করা। যদি দেখা যায়, সময়ের একটি বড় অংশ আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় হয়েছে, তাহলে তার জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। কারণ কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি। আর যদি গুনাহ, অবহেলা ও ত্রুটির হিসাব চোখে পড়ে, তবে বিলম্ব না করে ক্ষমা প্রার্থনা ও খাঁটি তওবা করে নেকির পথে ফিরে আসাই ইমানদারের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
তওবার পাশাপাশি নেক আমলে আত্মনিয়োগ করাও জরুরি। কেননা সৎকর্ম পাপের কালিমা মুছে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে, এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।’ (সুরা হুদ: ১১৪)
নতুন বছরে মুমিনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আগামীর জন্য সুদৃঢ় সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যাতে অবশিষ্ট জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় হয়। অহেতুক ব্যস্ততা, অর্থহীন বিনোদন কিংবা অলসতায় যেন একটি মুহূর্তও নষ্ট না হয়।
এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হবে নিজের নফসকে সংযত রাখা এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এ প্রসঙ্গে শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা পোষণ করে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৮ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১১ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
১১ ঘণ্টা আগেমোখতারুল ইসলাম মিলন

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও টিকে আছে কেরালার কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ। এই প্রবন্ধে কেরালার তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
চেরামান জুমা মসজিদ
কেরালার থ্রিসুর জেলার কোডুঙ্গাল্লুর এলাকায় অবস্থিত চেরামান জুমা মসজিদকে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, এই মসজিদ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই নির্মিত হয়েছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, চেরা রাজবংশের রাজা চেরামান পেরুমাল চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে আরবে যান এবং সেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কা থেকে ফেরার পথে তিনি কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে এসে কেরালায় এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এই বর্ণনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবু এই মসজিদের প্রাচীনত্ব অনস্বীকার্য।
চেরামান জুমা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অনন্য। এটি কেরালার ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইসলামিক উপাদানের এক সমন্বয়। মসজিদের ভেতরে একটি তেল প্রদীপ রয়েছে। কথিত আছে, নবী (সা.)-এর যুগ থেকে এটি অবিরাম জ্বলছে। কাঠের স্তম্ভ, ঢালু ছাদ এবং উঠান—এগুলো স্থানীয় স্থাপত্যরীতির প্রতিফলন। এই মসজিদটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ভারতে ইসলামের প্রাচীন উপস্থিতির এক জীবন্ত প্রমাণ।

মসজিদে বিলাল
কেরালার মালাপ্পুরম জেলায় অবস্থিত মসজিদে বিলাল আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ।
এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.)-এর নাম অনুসারে। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, হজরত বিলাল (রা.)-এর কোনো অনুসারী এই অঞ্চলে এসে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। যদিও এই বর্ণনার সত্যতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়, তবু মসজিদটির প্রাচীনত্ব এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম।
মসজিদে বিলালের স্থাপত্যশৈলী কেরালার অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের মতোই। কাঠের তৈরি স্তম্ভ, ঐতিহ্যবাহী কেরালীয় ছাদ এবং সরল অলংকরণ এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য। মসজিদের প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন কূপ রয়েছে, যার পানিকে স্থানীয়রা পবিত্র বলে বিশ্বাস করে। মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পালায়াম মসজিদ
কেরালার কোল্লাম জেলায় অবস্থিত পালায়াম মসজিদ আরেকটি প্রাচীন ইসলামি স্থাপনা।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি নবম শতাব্দীতে আরব বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় মসলা বাণিজ্যের কারণে আরব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এবং অনেকেই কেরালায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে কেরালার মুসলিম সমাজ বা ‘মাপ্পিলা’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
পালায়াম মসজিদের স্থাপত্যেও কেরালার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। মসজিদটি কাঠ ও ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর ছাদ টালি দিয়ে আচ্ছাদিত। অভ্যন্তরে প্রাচীন আরবি ক্যালিগ্রাফি ও কারুকাজ দেখা যায়। মসজিদের পাশে একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে, যেখানে আরব বণিক ও প্রথম যুগের মুসলমানদের সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হলেও এর মূল কাঠামো এবং ঐতিহাসিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও টিকে আছে কেরালার কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ। এই প্রবন্ধে কেরালার তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
চেরামান জুমা মসজিদ
কেরালার থ্রিসুর জেলার কোডুঙ্গাল্লুর এলাকায় অবস্থিত চেরামান জুমা মসজিদকে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, এই মসজিদ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই নির্মিত হয়েছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, চেরা রাজবংশের রাজা চেরামান পেরুমাল চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে আরবে যান এবং সেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কা থেকে ফেরার পথে তিনি কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে এসে কেরালায় এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এই বর্ণনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবু এই মসজিদের প্রাচীনত্ব অনস্বীকার্য।
চেরামান জুমা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অনন্য। এটি কেরালার ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইসলামিক উপাদানের এক সমন্বয়। মসজিদের ভেতরে একটি তেল প্রদীপ রয়েছে। কথিত আছে, নবী (সা.)-এর যুগ থেকে এটি অবিরাম জ্বলছে। কাঠের স্তম্ভ, ঢালু ছাদ এবং উঠান—এগুলো স্থানীয় স্থাপত্যরীতির প্রতিফলন। এই মসজিদটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ভারতে ইসলামের প্রাচীন উপস্থিতির এক জীবন্ত প্রমাণ।

মসজিদে বিলাল
কেরালার মালাপ্পুরম জেলায় অবস্থিত মসজিদে বিলাল আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ।
এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.)-এর নাম অনুসারে। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, হজরত বিলাল (রা.)-এর কোনো অনুসারী এই অঞ্চলে এসে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। যদিও এই বর্ণনার সত্যতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়, তবু মসজিদটির প্রাচীনত্ব এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম।
মসজিদে বিলালের স্থাপত্যশৈলী কেরালার অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের মতোই। কাঠের তৈরি স্তম্ভ, ঐতিহ্যবাহী কেরালীয় ছাদ এবং সরল অলংকরণ এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য। মসজিদের প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন কূপ রয়েছে, যার পানিকে স্থানীয়রা পবিত্র বলে বিশ্বাস করে। মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পালায়াম মসজিদ
কেরালার কোল্লাম জেলায় অবস্থিত পালায়াম মসজিদ আরেকটি প্রাচীন ইসলামি স্থাপনা।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি নবম শতাব্দীতে আরব বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় মসলা বাণিজ্যের কারণে আরব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এবং অনেকেই কেরালায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে কেরালার মুসলিম সমাজ বা ‘মাপ্পিলা’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
পালায়াম মসজিদের স্থাপত্যেও কেরালার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। মসজিদটি কাঠ ও ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর ছাদ টালি দিয়ে আচ্ছাদিত। অভ্যন্তরে প্রাচীন আরবি ক্যালিগ্রাফি ও কারুকাজ দেখা যায়। মসজিদের পাশে একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে, যেখানে আরব বণিক ও প্রথম যুগের মুসলমানদের সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হলেও এর মূল কাঠামো এবং ঐতিহাসিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা

মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে বহু ক্ষণজন্মা মনীষীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা তাঁদের কর্ম ও প্রজ্ঞা দিয়ে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছেন। তাঁরা জাতির ভাগ্য রচনা করে নিজেদের অমর করে রেখেছেন। তবে এ সকল মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে খোলাফায়ে রাশেদিন (রা.)-এর মর্যাদা যেমন অতীত ইতিহাসে বিরল, তেমনি ভবিষ্যতেও তা অতুলনীয়...
১৮ আগস্ট ২০২৫
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৮ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
১১ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
১১ ঘণ্টা আগে