Ajker Patrika

মানবতা আজ চরম সংকটে

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানবতার ইতিহাস এক দীর্ঘ নদীর মতো—কখনো শান্ত, কখনো উত্তাল। এই নদী বয়ে চলেছে সভ্যতার উজ্জ্বল ভোর থেকে অন্ধকার গহ্বর পর্যন্ত। কিন্তু আজ সেই নদীর জল যেন রক্তিম ও ঘোলাটে; তার তীরে দাঁড়িয়ে আমরা শুনতে পাচ্ছি বিলাপের ধ্বনি—এ পৃথিবী যেন এক মহাশোকের মঞ্চ।

১. নৈতিকতার গোধূলি

মানুষ জন্মেছিল ভালোবাসার বীজ আর সত্যের প্রদীপ হাতে নিয়ে। কিন্তু এখন সেই প্রদীপের শিখা ম্লান—লোভের বাতাসে নড়বড়ে। বাজারের চকচকে দালান, ক্ষমতার মসনদ—সর্বত্রই মানুষের চোখে প্রতিফলিত হয় শুধু নিজের স্বার্থের প্রতিচ্ছবি। সহমর্মিতা যেন নির্বাসনে গেছে, সততা যেন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। একসময় যে হৃদয় ছিল আশ্রয়ের বন্দর, এখন তা হিসেবি বাণিজ্যের গুদামে পরিণত হয়েছে।

২. প্রযুক্তির লৌহদ্বার

প্রযুক্তি, একসময় যার হাত ধরে আমরা আলোর পথে এগিয়েছিলাম, আজ যেন তা আমাদের আত্মার সামনে এক লৌহদ্বার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঙুলের ছোঁয়ায় আমরা অসীম জগতে পৌঁছে যাই, কিন্তু সেই যাত্রায় হারিয়ে যায় মুখোমুখি চোখের ভাষা, হারিয়ে যায় স্পর্শের উষ্ণতা। অ্যালগরিদমের অদৃশ্য শিকলে আবদ্ধ আমরা; তথ্যের বন্যায় ভেসে যাচ্ছি, অথচ জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটে না। যেন আকাশভরা নক্ষত্র আছে, কিন্তু কোনোটিই আমাদের পথ দেখায় না।

৩. যুদ্ধের আগুনে পোড়া পৃথিবী

ইউক্রেনের ভাঙা শহর, গাজায় রক্তে ভেজা মাটি, আফ্রিকার অনাহারী শিশু—সব মিলিয়ে পৃথিবী যেন এক রক্তাক্ত ক্যানভাস। যুদ্ধ শুধু গোলার শব্দে নয়, যুদ্ধ এখন ভাষায়, খাদ্যে, জলে, এমনকি আমাদের চিন্তায়ও। মানবতার বুক চিরে ওঠা এই ক্ষত শুধু একটি প্রজন্মের নয়—এ যেন আমাদের ভবিষ্যতের কবরফলক তৈরি করছে।

৪. পরিবেশের মৃত্যুঘণ্টা

বনের শিরা ছিঁড়ে নেওয়া হচ্ছে কাঠ, সমুদ্রের বুক চিরে তোলা হচ্ছে তেল—পৃথিবী যেন নিশ্বাস ফেলারও সময় পাচ্ছে না। আকাশে ধোঁয়ার পর্দা, মাটিতে বিষের স্রোত, নদীতে মৃত মাছের শবযাত্রা—সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি যেন মানুষের বিরুদ্ধে নীরব অভিশাপ উচ্চারণ করছে। আমরা ভুলে গেছি, বৃক্ষ কাটা মানে ভবিষ্যতের শ্বাস রোধ করা, নদীদূষণ মানে নিজের রক্তে বিষ মেশানো।

৫. উত্তরণের পথ

তবু ইতিহাস আমাদের শেখায়—সবচেয়ে অন্ধকার রাতেরও ভোর আছে। হয়তো এখনই সময় নিজের ভেতরে ফিরে তাকানোর, হৃদয়ের হারানো বীণা আবার সুরে তোলার। আমাদের শিক্ষা হোক মানবিক, প্রযুক্তি হোক কল্যাণমুখী, রাজনীতি হোক শান্তির দূত। আর সবচেয়ে বড় কথা—আমরা যেন মনে রাখি, এক শিশুর হাসি, এক মায়ের প্রার্থনা, এক বৃদ্ধের হাত ধরা—এসবের চেয়ে বড় কিছু নেই এই পৃথিবীতে।

মানবতা আজ চরম সংকটে—এ যেন এক অগ্নিপরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পথ আছে—যদি আমরা আবার মানুষকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসতে শিখতে পারি। পৃথিবীর বুকে শান্তির ফুল ফোটানোই হবে আমাদের সবচেয়ে বড় বিজয়, আর সেই বিজয় হবে আমাদের পুনর্জন্মের অঙ্গীকার।

লেখক: রাকিবুল হাসান, শিক্ষার্থী, জামিয়া নূরানীয়া তারাপাশা কিশোরগঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত