সালমান আদীব
মানুষ সত্তাগতভাবে স্বাধীন। মহান আল্লাহ সত্তাগতভাবে কোনো মানুষের মধ্যে এমন কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বা সুপ্রিম্যাসি দান করেননি; যার ফলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের অধিকার কিংবা স্বাধীনতা হরণ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে এ কথাই স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। বলেছেন, ‘হে লোক সকল, জেনে রেখো, তোমাদের সকলের পালনকর্তা একজন এবং তোমাদের পিতাও একজন। জেনে রেখো, অনারবের ওপর আরবের এবং আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, যেমন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—তাকওয়ার মানদণ্ড ব্যতীত। সকল মুসলমান একে অপরের ভাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ ঘোষণার প্রতিধ্বনিই যেন শোনা গিয়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমরের কণ্ঠে। তাঁর শাসনামলে একবার যখন রাসুলের ঘোষিত সেই সমতা বিধানের ব্যত্যয় ঘটল, তখনই তিনি গর্জে উঠে বললেন, ‘মানুষকে তাদের মায়েরা স্বাধীন হিসেবে জন্ম দিয়েছে, সুতরাং তোমরা কবে থেকে তাদের ক্রীতদাস বানাতে শুরু করলে!’ (তারিখে তাবারি)
ইসলাম মানুষকে এতটা স্বাধীনতা দিয়েছে—পৃথিবীর বুকে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও ইসলামকে কারও ওপর চাপিয়ে দেয়নি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দ্বীনের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। হিদায়াতের পথ গোমরাহি থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এরপর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল, যা ভেঙে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (সুরা বাকারা: ২৫৬)
আয়াতে আল্লাহ যেমন তাঁর বান্দাদের ওপর তাঁর মনোনীত দ্বীনকে চাপিয়ে দেননি, সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন—সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং যে সত্যের অনুসরণ করবে, সে সফল হবে। আর যে অনুসরণ করবে মিথ্যার, তার জন্য ধ্বংস অবধারিত। এ থেকে ইসলাম যে মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে, সে সত্যটিও উপলব্ধ হয়। কেননা, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য যেমন মানুষ দ্বিতীয় কেউ বলে দেওয়ার মাধ্যমে জানতে পারে, তেমনি জানতে পারে চিন্তার মাধ্যমে। যদি কারও চিন্তাকে জিম্মি করে ফেলা হয়, হরণ করা হয় তার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার, তাহলে সে সত্যের দিশা কখনোই পাবে না। সে হয়ে থাকবে অপরের চিন্তাদাস।
ইসলাম ব্যক্তির স্বাধীনতার কথা বলে ঠিকই; কিন্তু স্বাধীনতার নামে আমাদের অধুনা পৃথিবীতে প্রচলিত স্বেচ্ছাচারিতাকে চরমভাবে অস্বীকার করে। যেমন, জগতের সবচেয়ে কুখ্যাত অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কথাই ধরা যাক। ফেরাউন ছিল তৎকালীন পৃথিবীর এক মহাক্ষমতাধর রাজা। সে নিজেকে স্বাধীন মনে করত, কিন্তু তার স্বাধীনতার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে সে আল্লাহকে অস্বীকার করে নিজেকে খোদা দাবি করে বসেছিল। হয়ে উঠেছিল এক ঘৃণিত কুখ্যাত স্বৈরাচারী। তার এই স্বেচ্ছাচার ও তার পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় ফেরাউন ভূমিতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। সে তাদের একটি শ্রেণিকে দুর্বল বানিয়ে রেখেছিল। সে তাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করত ও কন্যাসন্তানদের জীবিত থাকতে দিত। বাস্তবিকই সে ছিল নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী। আর আমার অভিপ্রায় ছিল, যাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদের নেতা বানিয়ে দেব এবং তাদেরই পৃথিবীর শাসক বানাব। আর ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে (লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের) সেসব বাস্তবতা দেখাব, যার আশঙ্কা তারা তাদের (অর্থাৎ বনি ইসরাইলের) দিক থেকে করছিল।’ (সুরা কাসাস: ৪-৬)
সুতরাং, আমরা যদি মানবাধিকার ও স্বাধীনতা চর্চার মাধ্যমে আমাদের সমাজ, জাতি ও দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তবে অবশ্যই ইসলাম যেভাবে স্বাধীনতা চর্চা করতে বলে, সেভাবে করতে হবে। আমরা যদি এর ঊর্ধ্বে গিয়ে স্বাধীনতা চর্চা করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠি, তাহলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন তো দূরের কথা, বরং নেমে আসবে বিপর্যয়ের ঢেউ—যে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাবে সব আশা-আকাঙ্ক্ষা। হারিয়ে যাবে সব সুখ-সমৃদ্ধি।
লেখক: কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী
মানুষ সত্তাগতভাবে স্বাধীন। মহান আল্লাহ সত্তাগতভাবে কোনো মানুষের মধ্যে এমন কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বা সুপ্রিম্যাসি দান করেননি; যার ফলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের অধিকার কিংবা স্বাধীনতা হরণ করতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে এ কথাই স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। বলেছেন, ‘হে লোক সকল, জেনে রেখো, তোমাদের সকলের পালনকর্তা একজন এবং তোমাদের পিতাও একজন। জেনে রেখো, অনারবের ওপর আরবের এবং আরবের ওপর অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, যেমন কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের ও শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই—তাকওয়ার মানদণ্ড ব্যতীত। সকল মুসলমান একে অপরের ভাই।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৮৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ ঘোষণার প্রতিধ্বনিই যেন শোনা গিয়েছিল ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমরের কণ্ঠে। তাঁর শাসনামলে একবার যখন রাসুলের ঘোষিত সেই সমতা বিধানের ব্যত্যয় ঘটল, তখনই তিনি গর্জে উঠে বললেন, ‘মানুষকে তাদের মায়েরা স্বাধীন হিসেবে জন্ম দিয়েছে, সুতরাং তোমরা কবে থেকে তাদের ক্রীতদাস বানাতে শুরু করলে!’ (তারিখে তাবারি)
ইসলাম মানুষকে এতটা স্বাধীনতা দিয়েছে—পৃথিবীর বুকে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলাম হওয়া সত্ত্বেও ইসলামকে কারও ওপর চাপিয়ে দেয়নি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দ্বীনের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। হিদায়াতের পথ গোমরাহি থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। এরপর যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে, সে এক মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরল, যা ভেঙে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন। (সুরা বাকারা: ২৫৬)
আয়াতে আল্লাহ যেমন তাঁর বান্দাদের ওপর তাঁর মনোনীত দ্বীনকে চাপিয়ে দেননি, সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন—সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। সুতরাং যে সত্যের অনুসরণ করবে, সে সফল হবে। আর যে অনুসরণ করবে মিথ্যার, তার জন্য ধ্বংস অবধারিত। এ থেকে ইসলাম যে মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে, সে সত্যটিও উপলব্ধ হয়। কেননা, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য যেমন মানুষ দ্বিতীয় কেউ বলে দেওয়ার মাধ্যমে জানতে পারে, তেমনি জানতে পারে চিন্তার মাধ্যমে। যদি কারও চিন্তাকে জিম্মি করে ফেলা হয়, হরণ করা হয় তার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার অধিকার, তাহলে সে সত্যের দিশা কখনোই পাবে না। সে হয়ে থাকবে অপরের চিন্তাদাস।
ইসলাম ব্যক্তির স্বাধীনতার কথা বলে ঠিকই; কিন্তু স্বাধীনতার নামে আমাদের অধুনা পৃথিবীতে প্রচলিত স্বেচ্ছাচারিতাকে চরমভাবে অস্বীকার করে। যেমন, জগতের সবচেয়ে কুখ্যাত অত্যাচারী শাসক ফেরাউনের কথাই ধরা যাক। ফেরাউন ছিল তৎকালীন পৃথিবীর এক মহাক্ষমতাধর রাজা। সে নিজেকে স্বাধীন মনে করত, কিন্তু তার স্বাধীনতার মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে সে আল্লাহকে অস্বীকার করে নিজেকে খোদা দাবি করে বসেছিল। হয়ে উঠেছিল এক ঘৃণিত কুখ্যাত স্বৈরাচারী। তার এই স্বেচ্ছাচার ও তার পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয় ফেরাউন ভূমিতে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিল এবং সেই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছিল। সে তাদের একটি শ্রেণিকে দুর্বল বানিয়ে রেখেছিল। সে তাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করত ও কন্যাসন্তানদের জীবিত থাকতে দিত। বাস্তবিকই সে ছিল নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী। আর আমার অভিপ্রায় ছিল, যাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করব এবং তাদের নেতা বানিয়ে দেব এবং তাদেরই পৃথিবীর শাসক বানাব। আর ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে (লাঞ্ছনা ও পরাজয়ের) সেসব বাস্তবতা দেখাব, যার আশঙ্কা তারা তাদের (অর্থাৎ বনি ইসরাইলের) দিক থেকে করছিল।’ (সুরা কাসাস: ৪-৬)
সুতরাং, আমরা যদি মানবাধিকার ও স্বাধীনতা চর্চার মাধ্যমে আমাদের সমাজ, জাতি ও দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তবে অবশ্যই ইসলাম যেভাবে স্বাধীনতা চর্চা করতে বলে, সেভাবে করতে হবে। আমরা যদি এর ঊর্ধ্বে গিয়ে স্বাধীনতা চর্চা করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠি, তাহলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন তো দূরের কথা, বরং নেমে আসবে বিপর্যয়ের ঢেউ—যে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাবে সব আশা-আকাঙ্ক্ষা। হারিয়ে যাবে সব সুখ-সমৃদ্ধি।
লেখক: কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী
মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে মহানবী (সা.)-এর উত্তম আদর্শ বিদ্যমান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অধ্যায় তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করে সাজানো উচিত। খাবার গ্রহণ জীবনের একটি অপরিহার্য কাজ। যদি এ খাবার গ্রহণও মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী করা হয়, তাহলে ক্ষুধার নিবারণ হওয়ার পাশাপাশি এর মাধ্যমে...
১ দিন আগেজুমার খুতবা চলাকালে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে? যেমন ফেসবুক স্ক্রল করা, মেসেঞ্জার চেক করা ইত্যাদি। এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা জানতে চাই।
২ দিন আগেজুমার নামাজ সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এটি মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। প্রাপ্তবয়স্ক ও মানসিকভাবে সুস্থ সব পুরুষের জন্য জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। জুমার খুতবা শোনাও ওয়াজিব। তাই জুমার জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া মুমিনের...
২ দিন আগেজুলুম এক অন্ধকার, যা মানবতাকে গ্রাস করার চেষ্টা করেছে প্রতিটি যুগে। কিন্তু চিরন্তন সত্য হলো, জুলুম ক্ষণস্থায়ী, আর মজলুমের বিজয় সুনিশ্চিত। মজলুমের কান্না আল্লাহর আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তার দোয়ার মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, ‘মজলুমের দোয়াকে ভয় করো। কারণ, তার (দোয়া) এবং আল্লা
২ দিন আগে