Ajker Patrika

আজকের তারাবি-২২: কন্যাসন্তান আল্লাহর অনন্য দান

রায়হান রাশেদ
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৪
আজকের তারাবি-২২: কন্যাসন্তান আল্লাহর অনন্য দান

আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ২৫ তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা হামিম সাজদার ৪৭ থেকে সুরা শুরা, সুরা জুখরুফ, সুরা দুখান ও সুরা জাসিয়া পড়া হবে। এই অংশে মানুষের অকৃতজ্ঞতা, আল্লাহর ওয়াদা, সব নবী-রাসুলের ধর্ম ইসলাম, সৃষ্টি জগতে আল্লাহর নিদর্শন, আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষের সন্তান লাভ, নারীর সম্মান এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর নেয়ামতসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো—

মানুষের স্বভাবজাত অকৃতজ্ঞতার কথা 
বিপদে পড়লে মানুষ আল্লাহকে ডাকে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় নতজানু হয়। এমনভাবে আল্লাহকে ডাকে, যেন আল্লাহ ছাড়া ভিন্ন কিছু তার কল্পনায় নেই। জীবন শুধু আল্লাহর জন্য। কিন্তু সুখে থাকলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। ভুলে যায় আল্লাহর নেয়ামত। তখন অনেকে অহংকার আর দম্ভ নিয়ে চলতে থাকে। সুখের জীবনকে নিজের অর্জন বলে মনে করে। বিশ্বাস করে, মেধার শক্তিতে নিজের অবস্থান এত উজ্জ্বল হয়েছে। 

মানুষ যখন উত্তাল সমুদ্রে জাহাজে থাকে। জাহাজ প্রায় ডুবে যাবে অবস্থা। নিজের হাতে আর কিছুই করার থাকে না। তখন অনর্গল আল্লাহর নাম জপতে থাকে। আল্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদা দিতে থাকে। কিন্তু যখনই আল্লাহর রহমতে পাড়ে এসে জাহাজ ভিড়ে, তখন আল্লাহকে ভুলে যায়। চরিত্র বদলে ফেলে। খুব দ্রুত নিজের অবস্থান বদলে ফেলে। বিপদে পড়লে এক রকম চরিত্র আর বিপদ থেকে রক্ষা পেলে ভিন্ন রকম চরিত্র। মানুষের এই সুবিধাবাদী চরিত্র সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াত আছে। 

সুরা হামিম সাজদার ৫০ থেকে ৫১ নম্বর আয়াতে আছে, ‘দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করার পর যখন আমি তাকে দয়া করে সুখের স্বাদ দিই, তখন মানুষ বলতে থাকে, ‘এটা তো আমার প্রাপ্যই ছিল। আমি তো মনে করি না কিয়ামত বলে কিছু আছে।’ ...আবার যখন মানুষ বিপদে-আপদে অমঙ্গলে পড়ে যায়, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনায় বসে যায়।’ 

আল্লাহ যাদের পুরস্কার দেবেন
সুরা শুরা মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৫৩। কোরআনের ৪২ তম সুরা এটি। এ সুরার ৩৬ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন কিছু গুণের কথা বলেছেন, যাদের মধ্যে এ গুণগুলো থাকবে, তাদের তিনি বিশেষ পুরস্কার দেবেন। গুণগুলো হলো—
১. যারা ইমানদার 
২. আল্লাহর ওপর ভরসা করে
৩. কবির গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে
৪. ক্ষমা করে দেয় 
৫. আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয় 
৬. নামাজ কায়েম করে 
৭. পরামর্শের মাধ্যমে পারস্পরিক কাজ সম্পাদন করে 
৮. দান-সদকা করে 
৯. নির্যাতিত হলে ন্যায্য প্রতিশোধ গ্রহণ করে 

সন্তান আল্লাহর সেরা উপহার
সন্তান আত্মার প্রশান্তি, জীবনের ফুল ও চোখের শীতলতা। চোখের সামনে সন্তানের হাটি হাটি পায়ে বড় হওয়া—তনুমনে ভালোলাগার ঝংকার সৃষ্টি করে। আত্মার ধন সন্তানই মা-বাবার পৃথিবীজুড়ে নয়া জগৎ তৈরি করে। সন্তান আল্লাহর সেরা উপহার। কারও একসঙ্গে দুই সন্তান হচ্ছে। কারও ছেলে, কারও মেয়ে। কারও উভয়টিই ছেলে কিংবা বিপরীত। কেউ আবার নিঃসন্তান। মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহর নির্ধারিত এই বৈচিত্র্য পরিবর্তনের ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ বলেন, ‘...তিনি যাকে ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন...।’ (সুরা শুরা: ৪৯-৫০) 

কন্যাসন্তান আল্লাহর অনন্য নেয়ামত
সুরা জুখরুফের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের কাউকে যখন সংবাদ দেওয়া হয় সেই সন্তানের (কন্যা) যা তারা দয়াময় আল্লাহর প্রতি আরোপ করে, তখন তার মুখমণ্ডলে কালিমা ছেয়ে যায়, আর মন দুঃখ বেদনায় ভরে যায়।’ 

জাহেলি যুগে কন্যাসন্তান হলে বাবাদের মুখ কালো হয়ে যেত। কন্যা সন্তানকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলত। ইসলাম এমন ঘৃণ্য কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। নারীকে সম্মানের আসনে আসীন করেছে। কন্যাসন্তানের বাবা-মা হওয়ার অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করেছে। 

একালেও দেখা যায় কন্যাসন্তান হলে অনেকেই মন খারাপ করে। ছেলে না হওয়ায় স্ত্রীকে নানা কথা শোনায়। বিপরীতে ছেলেসন্তান হলে আনন্দের মিছিল পড়ে যায়। এই বৈষম্য স্পষ্ট গুনাহ। কন্যারা আল্লাহর অনন্য নেয়ামত। রাসুল (সা.) মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। 

সুরা দুখানের বিষয়বস্তু
মক্কায় অবতীর্ণ ৫৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা দুখান। দুখান অর্থ ধোঁয়া। মক্কার মুশরিকেরা দুর্ভিক্ষের দিনে যে ধোঁয়াচ্ছন্ন অবস্থা দেখতে পেয়েছিল, ১০ নম্বর আয়াতে তার বিবরণ রয়েছে। তাই একে সুরা দুখান বলা হয়। এ সুরায় কোরআনের মহত্ত্ব, কোরআন নাজিলের ঘটনা, আল্লাহর একত্ববাদ ও সৃষ্টি জগতে আল্লাহর মহত্ত্বের নানা নিদর্শন, কোরআন ও পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে কাফেরদের সন্দেহ, মুসা (আ.)-এর বিরুদ্ধাচরণে বনি ইসরাইলের পরিণাম, কাফেরদের পরিণতি ও শাস্তি, সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব উদ্দেশ্যবিহীন না হওয়া, কিয়ামতের দিন বন্ধু বন্ধুর উপকারে না আসা, দোজখবাসীর শাস্তি এবং খোদাভীরুদের পুরস্কার বেহেশত সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। 

সুরা জাসিয়ার বিষয়বস্তু
৩৭ আয়াত বিশিষ্ট মক্কায় অবতীর্ণ সুরা জাসিয়া। ‘জাসিয়া’ শব্দের অর্থ হাঁটু গেড়ে বসা। কিয়ামতের দিন মানুষ ভয়ে আল্লাহর দরবারে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে। সুরায় এ ভয়ানক অবস্থার বর্ণনা থাকার কারণে এটিকে জাসিয়া বলা হয়। সৃষ্টিজগতের নিদর্শন, কাফেরদের পরিণাম, বনি ইসরাইলকে দেওয়া আল্লাহর নেয়ামত, নেয়ামতের কদর না করায় তাদের ওপর শাস্তি ও কিয়ামত ইত্যাদির বর্ণনা রয়েছে এ সুরায়।

এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে আল্লাহর অনুগ্রহ, জান্নাত-জাহান্নম, গুনাহের কারণে বিপদ, অবাধ্য জাতির পরিণতি, জাহেলি যুগের ঘৃণ্য প্রথা, আল্লাহর রহমত, আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হয়েছে। 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোমবার যে কারণে রোজা রাখতেন নবীজি (সা.)

ইসলাম ডেস্ক 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত রোজা। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। এ ছাড়া জান্নাতে রোজাদারদের জন্য থাকবে বিশেষ প্রবেশপথ, যা দিয়ে একমাত্র তারাই প্রবেশ করবে।

মহানবী (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাদের প্রবেশের পরই সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, যেন এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৯৬)। প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যে রোজা অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (সহিহ আল জামে: ৬২২৪)

নবী করিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতে বলতেন। নিজেও বছরের নানা দিনে নফল রোজা রাখতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) যেসব দিন নফল রোজা রাখতেন, তার মধ্যে অন্যতম সোমবার। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সোম ও বৃহস্পতিবারে রোজা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (সুনানে তিরমিজি: ১০২৭)

আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সোমবারে রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত দেওয়া হয়েছিল। অথবা, এই দিনে আমার ওপর (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)

হাফসা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন। (মাসের প্রথম সপ্তাহের) সোম ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) সোমবার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৫১)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, রোজা তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম। সোমবারের রোজা আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়া অর্জনের অপার সুযোগ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১০ নভেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৪: ৫১ মিনিট
ফজর০৪: ৫২ মিনিট০৬: ০৯ মিনিট
জোহর১১: ৪৩ মিনিট০৩: ৩৮ মিনিট
আসর০৩: ৩৯ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৬ মিনিট০৬: ৩১ মিনিট
এশা০৬: ৩২ মিনিট০৪: ৫১ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সালাম: সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনার সহজ উপায়

ইসলাম ডেস্ক 
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত
পরস্পর সাক্ষাতের আদব। ছবি: সংগৃহীত

আদব ও আন্তরিকতার সঙ্গে সালাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তার বার্তা বহন করে, যা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। দুঃখজনকভাবে, সমাজে এই মহান সুন্নাহর চর্চা কমে আসছে।

সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ দূর হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে সালামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম জানানো হয়, তখন তার চেয়েও উত্তমভাবে জবাব দাও অথবা অন্তত সেভাবে জবাব দাও।’ (সুরা নিসা: ৮৬)

নবীজি (সা.) সালামের মাধ্যমে জান্নাতের পথ সহজ করার শিক্ষা দিয়েছেন। হাদিস অনুসারে, সালামের পূর্ণ বাক্য বিনিময়ে ৩০ নেকি লাভ হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ৫১৯৫)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আর তা হলো পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন করা।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৪)

সালামের এত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও অবহেলা, মনোযোগের অভাব, সালামকে স্রেফ সৌজন্য মনে করার কারণে এর চর্চা কমছে। অপরিচিত বা কম পরিচিত ব্যক্তিকে সালাম দিতে দ্বিধা করা হয়, অথচ হাদিস অনুযায়ী এতেই বেশি সওয়াব। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সালামের চর্চা উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।

সালাম কেবল একটি সুন্নাহ নয়, এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মিক শান্তির প্রতীক। যিনি প্রথমে সালাম দেন, তিনি আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় এবং উত্তম। আমরা এই মহান সুন্নাহর ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারি।

লেখক: মির্জা রিজওয়ান আলম, প্রাবন্ধিক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিয়া বিনিময়ে উৎসাহ দিয়েছেন নবী (সা.)

সাকী মাহবুব
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত
দুজন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজে পারস্পরিক ভালোবাসা, সদ্ভাব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এই লক্ষ্য অর্জনে হাদিয়া বা উপহার আদান-প্রদান একটি অত্যন্ত কার্যকরী ও পরীক্ষিত পদ্ধতি।

হাদিয়া শুধু একটি বস্তুগত বিনিময় নয়, এটি হৃদয়ের অনুভূতি, ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছার এক শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ইসলামে এই আমলটিকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ, এর মাধ্যমে পাষাণ হৃদয়ও নরম হয়ে যায় এবং তিক্ত সম্পর্কও মধুর হয়ে ওঠে। হাদিয়া আদান-প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের মাঝে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা। এটি মানুষের মন থেকে রাগ, বিদ্বেষ ও শত্রুতার ভাব দূর করে ভালোবাসার বীজ বপন করে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি হবে।’ (জামে তিরমিজি)

অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি বা তিক্ততা সৃষ্টি হয়, যা থেকে শত্রুতার জন্ম নেয়। হাদিয়া এ ক্ষেত্রে জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। আন্তরিকভাবে দেওয়া একটি উপহার কঠিন হৃদয়ের দেয়াল ভেঙে দিতে সক্ষম।

হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা পরস্পর হাদিয়া আদান-প্রদান করো। কেননা, হাদিয়া অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করে দেয়।’ (জামে তিরমিজি)। আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাও, তাহলে তোমাদের বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে; আর তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও, তাহলে শত্রুতা দূর হয়ে যাবে।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, আল-আদাবুল মুফরাদ)

বাস্তব জীবনে দেখা যায়, একজন তিক্ততা পোষণকারী আত্মীয় বা প্রতিবেশীকে আন্তরিকতার সঙ্গে একটি উপহার দিলে তার পাষাণ হৃদয়ে পরিবর্তন আসে এবং সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এটি প্রমাণ করে যে হাদিয়া মানুষের ভেতরের নেতিবাচক অনুভূতিকে ইতিবাচক রূপে রূপান্তরিত করতে পারে।

হাদিয়া গ্রহণ ও প্রদান করা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি প্রিয় অভ্যাস ছিল। তিনি উপহার গ্রহণ করতেন এবং বিনিময়ে কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এটি ছিল তাঁর উচ্চ নৈতিকতার প্রমাণ।

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং এর প্রতিদান দিতেন।’ (সহিহ্ বুখারি)

সামান্য ও নগণ্য হাদিয়াও তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন যে উপহারের মূল্য নয়, বরং আন্তরিকতাই আসল। হাদিয়া আদান-প্রদান শুধু একটি সামাজিক প্রথা নয়, এটি একটি ইবাদত এবং নবুওয়াতের শিক্ষা। এটি এমন এক মানবিক কৌশল, যা মানুষের হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করে বিদ্বেষ দূর করে ভালোবাসা ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করে।

আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সম্পর্কগুলোকে সুন্দর ও মজবুত করার জন্য হাদিয়ার এই ঐশী মাধ্যমটিকে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য। হাদিয়ার মূল্য নয়, বরং এর পেছনে থাকা আন্তরিকতাই পারে যেকোনো মানুষের অন্তর পরিবর্তন করে সম্পর্ককে স্থায়ী ও মধুর করতে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আরও ক্ষমতাধর হচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির, দুর্বল হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট

উত্তরায় শিক্ষকের ডাস্টারের আঘাতে ছাত্র রক্তাক্ত, বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ

মুহূর্তেই উধাও ৬ হাজার কোটি টাকা—৫ ইসলামী ধারার ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

চট্টগ্রামে যুবদল কর্মী নিহত: মেয়রের ক্ষোভ ঝাড়া সেই ওসিকে বদলি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত