Ajker Patrika

গাজা পরিস্থিতির অসাধারণ অগ্রগতি হচ্ছে, ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর

অনলাইন ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হচ্ছে। আজ বুধবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি মনে করি, গাজা পরিস্থিতির অসাধারণ অগ্রগতি হচ্ছে। আমি মনে করি, ইরানের ওপর যে হামলা আমরা চালিয়েছি, তার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে।’ এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা গাজা পরিস্থিতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়—ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা গাজায় ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির সম্ভাবনা বাড়াবে কি না। এর জবাবে তিনি বলেন, তিনি মনে করেন, এতে ‘সাহায্য হয়েছে কিছুটা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই হামলার আগেই আমরা গাজা নিয়ে একটা চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম।’

এর আগেও বিভিন্ন সময়ে গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাগাড়ম্বর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের শুরুর দিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিকবার অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে বলা হয়েছিল যে, আলোচনা খুব ভালো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। আবারও তিনি হাজির হয়েছে কথার ফুলঝুড়ি নিয়ে। এবার দেখা যাক, ট্রাম্পের এই বাগাড়ম্বর কতটা কাজে দেয়।

এর আগে, গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের স্বজনেরা তাঁদের সরকারকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে জিম্মি প্রিয়জনদের ফেরানোর ব্যবস্থা করতে বলেন। পাশাপাশি দেশটির বিরোধী দলগুলোও একই ধরনে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের মধ্য বামপন্থী ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর যেন গাজায়ও যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হয় তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে গোলান বলেন, ‘এখনই সময় মিশন সম্পূর্ণ করার। সব বন্দীকে ফিরিয়ে আনতে হবে, গাজায় যুদ্ধের ইতি টানতে হবে এবং সেই অভ্যুত্থান একেবারে বন্ধ করতে হবে, যা ইসরায়েলকে দুর্বল, বিভক্ত ও অসহায় করে তুলছে।’

ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে বিরোধীদলীয় নেতা ও ইয়েশ আতিদ পার্টির প্রধান ইয়াইর লাপিদও একই ধরনের আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলকে তিনি বলেন, ‘এবং এখন গাজার পালা। সেখানে কাজ শেষ করার সময় এসেছে। বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে হবে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে।’

তার আগে, একই দিনে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারগুলোর সংগঠন হস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম বলেছে, ‘যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগে গাজাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন অবিলম্বে এমন আলোচনায় বসে, যার মাধ্যমে সব আটক ব্যক্তির মুক্তি নিশ্চিত হবে এবং গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে। যদি তারা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে গাজার যুদ্ধও থামানো সম্ভব।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইরানে সফল (তথাকথিত) অভিযান এবং ইরানি জোটের বিরুদ্ধে একটি জোরালো, ধ্বংসাত্মক আঘাতের পর ইসরায়েল যদি আবার গাজার কর্দমাক্ত পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়ে, তা হবে অকল্পনীয়। এটা সব ধরনের যুক্তি ও ইসরায়েলি স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীত।

সংগঠনটি বিবৃতিতে আরও বলেছে, ইরানে অভিযান শেষ করেও যদি আটক ব্যক্তিদের মুক্তির এই সুযোগ কাজে লাগানো না হয়, তাহলে তা হবে এক বিশাল কূটনৈতিক ব্যর্থতা। এখন এক ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে, আর এই সুযোগ দুই হাতে কাজে লাগানো সরকারের কর্তব্য।

এর আগে গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে আনে। এরই মধ্যে কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। মারাও গেছে বেশ কয়েকজন। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, গাজায় হামাসের হাতে এখনো অন্তত ৫০ জন জিম্মি রয়ে গেছে। যার মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত