Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তহত্যা চেষ্টায় অভিযুক্ত ভারতীয়, দিল্লি সফরে এফবিআই প্রধান

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০: ৩০
যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তহত্যা চেষ্টায় অভিযুক্ত ভারতীয়, দিল্লি সফরে এফবিআই প্রধান

যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে শিখ অধিকারকর্মীকে হত্যার জন্য খুনি ভাড়া করার অপরাধে একজন ভারতীয়কে অভিযুক্ত করেছেন সে দেশের কৌঁসুলিরা। গত ২৯ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত জুনে চেক প্রজাতন্ত্রে ওই ভারতীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। কানাডায় খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা খুন হওয়ার পরপরই এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে কানাডার সঙ্গে টানাপোড়েন চলছে ভারতের। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এমন ঘটনা ভারতকে নতুন করে চাপে ফেলেছে। 

এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি সফরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধান ক্রিস্টোফার রে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্ক দৃঢ় এবং অংশীদারত্ব আরও গভীর করার লক্ষ্যেই তাঁর সপ্তাহব্যাপী ভারত সফর। 

মাত্র সপ্তাহ দু-এক আগেই ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমেরিকার মাটিতেই মার্কিন নাগরিককে হত্যার উদ্দেশ্যে খুনি ভাড়া করার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর হত্যার লক্ষ্য ছিলেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুন। 

নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত শিখ রাজনৈতিক নেতা পান্নুনকে হত্যা করতে ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্ত (৫২) এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ভাড়াটে খুনি ভেবে ১ লাখ ডলার (১ কোটি ১০ লাখ ২১ হাজার টাকার বেশি) দেন। মার্কিন কৌঁসুলিরা এর সপক্ষে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন। 

এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদ্বীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর সংযোগ থাকার অভিযোগ ওঠার এক মাসের কিছু সময় পর। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ভারত। এর জেরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত পত্রিকার কূটনীতিবিষয়ক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার সম্পাদকীয়তে বলেন, অভিযোগের এই পর্যায়ে এসে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর কালো ছায়া ঘনিয়ে এসেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগের কারণে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—এতে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? 

পান্নুন হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। তবে অভিযোগ অস্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগপত্রে উল্লেখিত দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে একটি উচ্চস্তরের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভারত। অথচ কানাডার অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে দিল্লি। 

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগটি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘মার্কিন আদালতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় ভারতীয় এক কর্মকর্তাকেও যুক্ত করা হয়েছে। এটি উদ্বেগের বিষয়।’ 

নিজ্জারের মতো পান্নুনও পাঞ্জাব প্রদেশ নিয়ে একটি পৃথক শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেন। ভারতে এই আন্দোলন নিষিদ্ধ। এ নিয়ে ভারতের অনেক রক্তও ঝরেছে। খালিস্তানপন্থী নেতারা এখন বাক্‌স্বাধীনতার চর্চা আছে এমন বিভিন্ন দেশে প্রকাশ্যেই খালিস্তান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ভারতের জন্য বিষয়টি বেশ সংবেদনশীল। চার দশক আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করেন তাঁরই শিখ দেহরক্ষী। এর আগে শিখদের পবিত্র স্থান স্বর্ণমন্দিরে আশ্রয় নেওয়া বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উচ্ছেদ করতে সেনা অভিযান চালিয়েছিলেন ইন্দিরা। ব্লু স্টার নামে পরিচিত ওই অভিযানে মন্দিরের বেশির ভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে যায় এবং শত শত শিখ নিহত হয়। 

ইন্দিরা হত্যার পর ভারতে দাঙ্গা হয় এবং প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়। সরকারি হিসাবমতে, নিহতের বেশির ভাগই ছিলেন শিখ। ভারত ভাগের পর সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলোর একটি ছিল এটি। তখন থেকেই খালিস্তান আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার। 

তবে এখনো পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতা চায় বিদেশে অবস্থিত কয়েকটি শিখ সংগঠন। তাদের মতে, খালিস্তান আন্দোলনকে অন্যায়ভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত করছে ভারত সরকার। দেশের বাইরে খালিস্তানপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া আগের মতোই কঠোর। 

নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্শ পান্ত বলেন, ‘১৯৮০-র দশকে খালিস্তান আন্দোলন নিয়ে ভারত বেশ কঠিন সময় পার করেছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাই ভারত এ বিষয়গুলো বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।’ 

ভারত সরকারের ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী পান্নুন। তিনি নিজ্জারের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। নিজ্জারও ভারতে সন্ত্রাস সম্পর্কিত অপরাধের জন্য পুলিশের তালিকায় ছিলেন। 

স্পষ্টভাষী পান্নুন ভারতে ডজনখানেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত। ভারত সরকার পান্নুনের নেতৃত্বে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ নিষিদ্ধ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত