Ajker Patrika

লস অ্যাঞ্জেলসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন নিয়ে ট্রাম্পের মুখোমুখি গভর্নর

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলসে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রোববার ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম সেনা মোতায়েনকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন।

গভর্নর নিউসাম বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে লস অ্যাঞ্জেলসে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ‘বেআইনি’। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তিনি ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তাঁর অভিযোগ, ‘ট্রাম্প সংকট সৃষ্টি করছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছেন।’ এক্সে পোস্ট করে গভর্নর লেখেন, ‘এটা কোনো প্রেসিডেন্টের কাজ নয়, বরং এক নায়কের কাজ।’

তবে হোয়াইট হাউস গভর্নরের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ‘কেন, কোন পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে, সবাই জানে। সবাই সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখেছে।’ ট্রাম্প নিজে এক্সে লিখেছেন, ‘এই দাঙ্গাবাজদের ছাড় দেওয়া যাবে না... মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন!’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার পুলিশ অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আগের রাতেও গ্রেপ্তার হয়েছিল ২৯ জন। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশের ভাষ্য, কয়েকটি সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ, এসব স্থানের বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে কংক্রিটের টুকরা, বোতল ও অন্যান্য বস্তু ছুড়ে মেরেছে।

রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ছবি: এএফপি
রোববার লস অ্যাঞ্জেলেসে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ছবি: এএফপি

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, অ্যালফাবেটের স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ওয়েমোর কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা ঘোড়ায় চড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন। কিছু বিক্ষোভকারী লস অ্যাঞ্জেলসের প্রধান সড়ক ১০১ ফ্রিওয়ে অবরোধ করে রাখে।

শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীরা ম্যাক্সিকান পতাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে ব্যানার হাতে জড়ো হয়েছে। সমাজতন্ত্র ও মুক্তি পার্টির (Party for Socialism and Liberation) লস অ্যাঞ্জেলেস শাখা সিটি হলের বাইরে বিকেলের দিকে একটি সমাবেশের আয়োজন করে।

ইউএস নর্দার্ন কমান্ড জানিয়েছে, ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা বর্তমানে ফেডারেল ভবন ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় নিয়োজিত। লস অ্যাঞ্জেলস এলাকায় তিনটি স্থানে প্রায় ৩০০ জন গার্ড সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। তাঁদের কাজ সীমিত—শুধু সরকারি কর্মচারী ও সম্পত্তির সুরক্ষা।

ওয়েমো গাড়ি ভাঙছেন একজন বিক্ষোভকারী। ছবি: এএফপি
ওয়েমো গাড়ি ভাঙছেন একজন বিক্ষোভকারী। ছবি: এএফপি

ট্রাম্প সেনা মোতায়েনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন মার্কিন কোডের ১০ নম্বর ধারা ব্যবহার করে। কিন্তু ওই ধারা বলছে, এভাবে সেনা মোতায়েন রাজ্যের গভর্নরের মাধ্যমে হওয়া উচিত। ফলে এটি আইনগতভাবে বৈধ কি না—তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ বলেন, সহিংসতা অব্যাহত থাকলে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প পেন্ডলেটনের ৫০০ মেরিন সেনা ‘হাই অ্যালার্টে’ রাখা হয়েছে। এদিকে, পাথর নিক্ষেপ করে এক ফেডারেল কর্মকর্তাকে আহত করার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এফবিআই।

ট্রাম্প অভিবাসন ইস্যুতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আইসিইর জন্য। তবে অনেকেই অভিযোগ করছেন, এই অভিযান শুধু অবৈধদের নয়, আইনত বসবাসকারী অনেককেও টার্গেট করছে, যার ফলে বিচারিক লড়াই চলছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।

শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের হাতে ম্যাক্সিকান পতাকা দেখা গেছে। ছবি: এএফপি
শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের হাতে ম্যাক্সিকান পতাকা দেখা গেছে। ছবি: এএফপি

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন অভিযান ও সেনা মোতায়েনের কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা অভিযান ও সহিংসতা দিয়ে নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরেই গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর পর থেকেই অভিযান জোরদার হয়েছে। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আইসিই ইতিমধ্যে এক লাখের বেশি অভিবাসীকে আটক করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) অভিযান ঘিরে লস অ্যাঞ্জেলসে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আইসিই হলো সেই ফেডারেল সংস্থা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত