Ajker Patrika

বোতলবন্দী চিঠি এল ৯৫ বছর পর

আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ১৪: ৫৪
বোতলবন্দী চিঠি এল ৯৫ বছর পর

‘করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিও/আঙুলের মিহিন সেলাই/ভুল বানানেও লিখো প্রিয়...।’ আহা চিঠি এক আবেগের আধার। পোস্ট অফিসের দিকে বা ডাকপিয়নের চলার পথটির দিকে অপলক চেয়ে থাকার কাল যদিও বিগত এখন। কিন্তু চিঠি কতটা আবেগ ধরে, তার চিহ্ন মহাদেব সাহার এই কবিতাতেই রয়েছে। আর এই চিঠি যদি আসে কোনো এক অজানা দূর থেকে, আসে কোনো এক সুদূর অতীত থেকে তবে তো কথাই নেই। প্রাপক ও প্রেরকের মধ্যে সম্বন্ধহীন এমনই এক চিঠি এসে পৌঁছেছে জেনিফার ডোকারের হাতে। প্রায় শত বছর আগের এই চিঠি পেয়ে জেনিফার কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছেন। 

ভাবুন, আজ থেকে ৯৫ বছর আগে কৈশোরে থাকা কেউ নিজের জন্মদিনে নিজেকেই একটি উপহার দিল। এই উপহার আর কিছুই নয় বোতলবন্দী একটি চিঠি। সাধারণত কোনো অচেনা–অজানা স্থানে হারিয়ে গেলে, বিশেষত সাগরে বা সাগরপারে পথ হারালে বোতলে করে চিঠি পাঠানোটা অতি পুরোনো এক রেওয়াজ। এর উদ্দেশ্য থাকে—যদি কেউ এই চিঠি খুঁজে পেয়ে তাকে উদ্ধার করে। অথবা নিদেনপক্ষে তার এই হারিয়ে যাওয়ার খবর বা বিপদে পড়ার খবরটি তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। 

ভাবুন, কোনো এক কিশোর নিজের জন্মদিনে নিজেকেই উপহার দিতে বোতলবন্দী একটি চিঠি ভাসিয়ে দিল নদীতে। আর চেয়ে চেয়ে দেখল এর ভেসে যাওয়া। তার আশা, কোনো একদিন বড় হয়ে এই চিঠি সে আবার ফিরে পাবে। কিন্তু আদতে ব্যাপারটি এমন ঘটেনি। চিঠিটি বোতলে করে ভেসে গেছে নিজের মতো করে। আর সে তার লেখকের কাছে ফিরে আসেনি। তদনগদ এই চিঠি আর কারও হাতেও পড়েনি। চিঠিটি প্রাপক খুঁজে পেতে সময় নিয়েছে পাক্কা ৯৫ বছর। 

আগেই বলা হয়েছে সেই প্রাপকের নাম জেনিফার ডোকার। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নটিক্যাল নর্থ ফ্যামিলি অ্যাডভেঞ্চারসের ক্যাপ্টেন তিনি। গুডনিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সম্প্রতি স্কুবা ডাইভিং করার সময় এই বোতলবন্দী চিঠির দেখা পান জেনিফার। পানির নিচে কিছু মেইনটেন্যান্স কাজ করার সময় বোতলটি তাঁর নজরে আসে। এমনিতে হয়তো আসত না। কিন্তু আজকের দিনের অন্য আর দশটা বোতলের চেয়ে ৯৫ বছর আগের সেই বোতলের আকার একেবারেই আলাদা। আর এই অদ্ভুত দর্শনই বোতলটিকে তাঁর নজরে নিয়ে আসে। শুরুতে এই কারণেই তিনি বোতলটির কাছে যান। কিন্তু পরে ভালো করে পরীক্ষার পর তিনি বুঝতে পারেন, এটি একটি অদ্ভুত দর্শন বোতলের চেয়েও বেশি কিছু। এর ভেতরে রয়েছে কোনো চিঠি বা এমন কিছু। 

বোতলবন্দী চিঠিটি প্রাপক খুঁজে পেয়েছে লেখার ৯৫ বছর পরজেনিফার ও তাঁর সহকর্মীরা বেশ যত্নের সঙ্গে বোতলটি পরীক্ষা করেন। তাঁরা দেখেন, বোতলটিতে থাকা চিঠিটি নয় দশকের পুরোনো। এই এত বছরে এর ভেতরে পানি ঢোকায় চিঠিটি কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো পড়া যায়, যেখানে তারিখ লেখা—নভেম্বর ১৯২৬। আর লেখা রয়েছে এক প্রশ্ন—যিনি এই বোতলটি পাবেন তিনি কি এর ভেতরে থাকা চিঠিটি মিশিগানের জর্জ মোরোর কাছে ফিরিয়ে দেবেন এবং বলবেন যে এটি কোথায় পেলেন তিনি? 

নিশ্চিতভাবেই প্রেরকের দিক থেকে এটি একটি পরীক্ষা ছিল বলা যায়। জেনিফার ও তাঁর দল এই বোতল পাওয়ার পর জর্জ মোরো বা তাঁর পরিবারের লোকদের খোঁজার চেষ্টা করেছেন এখনকার সময়ের মতো করে। তাঁরা ওই চিঠি ও তা প্রাপ্তির ঘটনা লিখে ছবিসহ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, যা ১ লাখের বেশি শেয়ার হয়েছে। ওই পোস্টে কমেন্ট পড়েছে ৬ হাজারের বেশি। 

এতে কাজও হয়েছে। এক উৎসাহী ব্যক্তি মোরোর মেয়ে মিশেল প্রিমুকে খুঁজে বের করেছেন। মিশেল প্রিমু আবার ফেসবুক ব্যবহার করেন না। ফলে তাঁর কাছে ওই ব্যক্তি জেনিফারের ঠিকানা পৌঁছে দিয়েছেন। 

মিশেল প্রিমুর কাছ থেকে জানা গেছে, তাঁর বাবা জর্জ মোরো ১৯৯৫ সালে মারা গেছেন। তিনি তাঁর বাবার হাতের লেখা ঠিক চিনেছেন। জানিয়েছেন, বিভিন্ন গোপন জায়গায় নানা ধরনের নোট লুকিয়ে রেখে সবাইকে চমকে দেওয়াটা তাঁর বাবার স্বভাব ছিল। এ বিষয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তিনি চিঠি ভরা বোতলটি নিয়ে নদীর দিকে এগোচ্ছেন ভাসিয়ে দেবেন বলে। এটি ছিল তাঁর জন্মদিন। এটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যদিও। কিন্তু আমার এমনটাই মনে হচ্ছে। কারণ, নভেম্বর তাঁর জন্ম মাস। 

জেনিফার ডোকার মিশেল প্রিমুকে তাঁর বাবার চিঠিটি ফেরত দিতে চেয়েছিলেন। শুরুতে প্রিমুও রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তা জেনিফারের কাছে রেখে দিতে বলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, পুরো এক রাত আমি চিন্তা করে দেখলাম। মনে হলো—প্রাপকের কাছে চিঠিটি থাকাটাই আমার বাবার ইচ্ছার সঠিক প্রতিফলন হয়। এটাই হয়তো তাঁর ইচ্ছা ছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত