Ajker Patrika

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ১-২ বছর পিছিয়েছে, ট্রাম্পের বিপরীত দাবি পেন্টাগনের

অনলাইন ডেস্ক
পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ১-২ বছর পিছিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ১-২ বছর পিছিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির বিপরীত। তিনি বলেছিলেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়ে গেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শন পার্নেল জানান, ওয়াশিংটনের চালানো হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ‘ধ্বংস’ হয়েছে। তিনি এ হামলাকে ‘সাহসী অভিযান’ বলে অভিহিত করেন। পার্নেল বলেন, ‘আমরা অন্তত এক থেকে দুই বছর তাদের কর্মসূচি পেছাতে সক্ষম হয়েছি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও এমনটাই বলা হয়েছে।’

গত ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে বাংকার বাস্টার বোমা হামলার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, যা ইতিহাসে কেউ দেখেনি।’

তবে গত মাসে গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, বরং কয়েক মাসের জন্য কর্মসূচি পিছিয়েছে মাত্র। ইরান নিজেও এ নিয়ে খুব বেশি কিছু জানায়নি। দেশটির কয়েকজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ট্রাম্প এই হামলার প্রভাব ‘বাড়িয়ে দেখাচ্ছেন।’

এখন পর্যন্ত হামলার পরিণতি নিয়ে কোনো স্বাধীন মূল্যায়ন হয়নি। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণেও পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না, বিশেষ করে ইরানের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ফোরদোতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের অবস্থান এবং বর্তমান অবস্থা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।

ইরানের পারমাণবিক সংস্থা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, হামলার পর কোনো তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ তারা পায়নি, যা সাধারণত এমন হামলার পর দেখা যায়। তবে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সংরক্ষণের জন্য থাকা কন্টেইনারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে।

গ্রোসি সিবিএস নিউজকে বলেন, ‘আমরা জানি না, ওই সব পদার্থ কোথায় রয়েছে, কিংবা ১২ দিনের ওই সংঘাতের সময় এর কোনো অংশ ধ্বংস হয়েছে কি না।’

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, মার্কিন হামলার আগেই ফোরদো থেকে ট্রাক বের হয়ে যাচ্ছে। গ্রোসি আরও বলেন, ইরান খুব দ্রুতই, ‘কয়েক মাসের মধ্যেই’ আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হলো পারমাণবিক জ্বালানির জন্য ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া।

হামলার আগে পর্যন্ত আইএইএ—এর পর্যবেক্ষণের আওতায় ছিল ইরানের ওই সব পারমাণবিক কেন্দ্র। তবে এখন দেশটির কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নজরদারির বাইরে চলে গেছে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইরানের পার্লামেন্ট একটি আইন পাস করে, যার মাধ্যমে আইএইএ—এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হয়। ইরানের দাবি, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।

উল্লেখ্য, জেনেভা কনভেনশনে বলা হয়েছে, যেকোনো ধরনের ‘বিপজ্জনক স্থাপনায়’ যেমন বাঁধ, ডাইক এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা নিষিদ্ধ। যুদ্ধ শুরুর আগে গত ১৩ জুন তেহরান দাবি করে, তারা ইসরায়েলের কিছু নথি পেয়েছে, যা থেকে জানা গেছে, আইএইএ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্য ইসরায়েলকে সরবরাহ করছে। যদিও সংস্থাটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বুধবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন আবার আইএইএকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য যে, ইরান আইএইএ—এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে, যখন এখনো তাদের সামনে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

এর আগে, গত ১৩ জুন ইসরায়েল কোনো সরাসরি উসকানি ছাড়াই ইরানে বড় ধরনের হামলা চালায়। তারা দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টাকে ঠেকাতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে। ইরান অবশ্য বরাবরই পরমাণু বোমা তৈরির অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের কাছে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যুদ্ধে ইসরায়েলের বিমান হামলায় শত শত ইরানি বেসামরিক নাগরিক, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও তাদের পরিবার এবং শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা নিহত হন। জবাবে ইরান ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে ইসরায়েলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয় এবং ২৯ জন নিহত হন।

যুদ্ধ শুরুর ১০ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে সহযোগিতা করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। এর পাল্টায় ইরান কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। দুই দেশের কর্মকর্তারা এ যুদ্ধের পর নিজেদের ‘ঐতিহাসিক বিজয়ী’ বলে দাবি করেছেন।

ইসরায়েলও বলছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে তেহরান বলছে, তারা ইসরায়েলের লক্ষ্য ব্যর্থ করে দিয়েছে। সরকার, পারমাণবিক কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সবই অক্ষত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত