Ajker Patrika

রিপাবলিকান নেতা ম্যাসিকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চান টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কেনটাকির কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। ছবি: সংগৃহীত
কেনটাকির কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি ও টুইটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। ছবি: সংগৃহীত

কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান টুইটারের (বর্তমানে এক্স) সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ব্লক-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) জ্যাক ডরসি। এই অপ্রত্যাশিত সমর্থন প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে এই বিলিয়নিয়ারের ক্রমবর্ধমান ‘অ্যান্টি-এস্টাবলিশমেন্ট’ বা প্রথাবিরোধী রাজনীতির প্রতি ঝোঁক। কাঁপিয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

গত রোববার রাতে জ্যাক ডরসি এক্স-এ ছয় শব্দের একটি বার্তা পোস্ট করেন, ‘@RepThomasMassie for president. ’ (প্রেসিডেন্ট পদের জন্য থমাস ম্যাসিকে সমর্থন করি।)

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ পায় পোস্টটি। রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে লিবারটারিয়ান, ট্রাম্প সমর্থক এবং প্রগতিশীলদের বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ম্যাসিকে প্রেসিডেন্ট পদে ডরসির সমর্থন করার পোস্টটি ৩০ লাখেরও বেশি ভিউ পেয়েছে।

স্বতন্ত্র অবস্থান এবং দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে ঘন ঘন বিরোধিতার জন্য পরিচিত রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ম্যাসিরও নজরে পড়ে এই সমর্থন এবং তিনি দ্রুতই ডরসির সমর্থনের প্রতিক্রিয়া জানান।

ম্যাসি লেখেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (POTUS) প্রার্থী হব বলে মনে হয় না, তবে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ@jack।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘তবে খুশি হব যদি আমরা কংগ্রেসে আরও চার-পাঁচজন পাই, যারা কেবল তাদের দল যা বলে তা-ই সবসময় করে না।’

সিলিকন ভ্যালির এক বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা এবং কেনটাকির গ্রাম থেকে উঠে আসা এক প্রকৌশলী-রাজনীতিকের অপ্রত্যাশিত জোটকে সামনে নিয়ে আসে এই সংক্ষিপ্ত কথোপকথনটি। মুহূর্তেই দিনের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর একটিতে পরিণত হয় এই সমর্থন।

৫৪ বছর বয়সী ম্যাসি কেনটাকির চতুর্থ কংগ্রেশনাল জেলা প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ওয়াশিংটনের সবচেয়ে স্বতন্ত্রচেতা রাজনীতিকদের একজন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এআইটি) থেকে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সেন্সএবল টেকনোলজিস নামে একটি স্টার্টআপের যাত্রা শুরু করেন। এই কোম্পানি এমন একটি হ্যাপটিক ডিভাইস তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা স্পর্শের অনুভূতিতে ভার্চুয়াল বস্তু অনুভব করতে পারতেন।

নিজের অঙ্গরাজ্যে ফিরে ম্যাসি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চালিত একটি অফ-গ্রিড বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপরই স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ২০১২ সালে একটি বিশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে কংগ্রেসে প্রবেশ করেন ম্যাসি।

এরপর থেকে তিনি প্রতিনিধি পরিষদের পরিবহন ও বিচারবিষয়ক কমিটিতে কাজ করেছেন এবং প্রায়ই বড় ব্যয় পরিকল্পনা ও দ্বিদলীয় বিলের বিপক্ষে ভোট দেন। এসব প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী বা আর্থিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মনে করেন তিনি।

নিজ দল, এমনকি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও মতবিরোধে জড়িয়েছেন তিনি। ভিন্নমত পোষণের এই অভ্যাস ম্যাসিকে রিপাবলিকান ককাসে একইসঙ্গে প্রশংসিত এবং একঘরে করেছে।

ম্যাসিকে সমর্থন জানানো ৪৮ বছর বয়সী ডরসিও প্রযুক্তি জগতে একই ধরনের স্বতন্ত্রতার পথ অনুসরণ করেছেন।

২০০৬ সালে টুইটার সহপ্রতিষ্ঠা করেন ডরসি। ২০২১ সালে সিইও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সরকার এবং কর্পোরেট দুই ক্ষেত্রেই বিকেন্দ্রীকরণ, বাকস্বাধীনতার অধিকার এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে বারবার কথা বলেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে বেশ কিছু প্রথাবিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন ডরসি, যাদের মধ্যে রয়েছেন—ডেমোক্র্যাট থেকে স্বতন্ত্র পরিচয় বেছে নেওয়া রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র; সাবেক ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী অ্যান্ড্রু ইয়াং এবং বর্তমান জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড।

সবশেষে রিপাবলিকান ম্যাসিকে সমর্থন ডরসির লিবারটারিয়ান ও স্বতন্ত্রচিন্তার দিকে ঝুঁকে পড়াকেই প্রকাশ্যে এনেছে। ডরসি বারবারই কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা কাঠামোর বিপক্ষে কথা বলেছেন, সেটা হোক সিলিকন ভ্যালি বা ওয়াশিংটন।

বিটকয়েনে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছেন এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং বিকেন্দ্রীভূত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রকল্প ব্লুস্কাই-এও বড় অঙ্কের অর্থায়ন করেছেন ডরসি। ব্লুস্কাইয়ে বিনিয়োগকে তিনি ‘ব্যবহারকারীদের কাছে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়ার’ উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিরোধীদের রক্ত ঝরিয়ে তানজানিয়াতে ফের ক্ষমতায় সামিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নির্বাচনে ৩২ মিলিয়ন ব্যালটের ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সামিয়া। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচনে ৩২ মিলিয়ন ব্যালটের ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সামিয়া। ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় নির্বাচনপরবর্তী অস্থিরতার মধ্যেই খবর এলো ক্ষমতায় বহাল থাকছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। নির্বাচন কমিশনের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বুধবারের নির্বাচনে ৩২ মিলিয়ন ব্যালটের ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সামিয়া। অর্থাৎ প্রায় সব ভোটই তাঁর পক্ষে গেছে।

এদিকে নির্বাচনের স্বচ্ছতার অভাব ও ব্যাপক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাদের দাবি, নির্বাচনপরবর্তী অস্থিরতায় শত শত মানুষ নিহত এবং আরও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে ফলাফল ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যাকবস মওয়ামবেগেলে বলেন, ‘চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রার্থী সামিয়া সুলুহু হাসান তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে ঘোষণা করছি।’

তানজানিয়ার আধা-স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপপুঞ্জ জাঞ্জিবারে নিজস্ব সরকার ও নেতা নির্বাচিত হয়। সেখানেও সিসিএম প্রার্থী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট হুসেইন মউইনি প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

জাঞ্জিবারে বিরোধীরা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছে বলে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে।

বুধবার নির্বাচন হলেও গতকাল শুক্রবারও বাণিজ্যিক রাজধানী দার এস সালামসহ তানজানিয়ার বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল। সেনাবাহিনী প্রধানের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সড়কে নেমে সামিয়া সুলুহু হাসানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ ও ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয় তরুণ প্রতিবাদকারীরা, যারা নির্বাচনের ফলাফলকে অন্যায্য ও অগণতান্ত্রিক বলে নিন্দা করেন।

তাদের অভিযোগ, সরকার গণতন্ত্রকে খর্ব করছে। প্রধান বিরোধী নেতাদের একজন জেলে বন্দি এবং আরেকজনকে প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চাদেমা দলের মুখপাত্র জন কিতোকা বলেন, দার এস সালামে প্রায় ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং মওয়ানজায় নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে তানজানিয়ায় অবস্থানরত এক কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, অন্তত ৫০০ জনের মৃত্যুর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

এই সহিংসতাকে ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে চিহ্নিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী অত্যন্ত দ্রুত ও দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।’

এই নির্বাচনে মূলত দুইজন প্রধান বিরোধী প্রার্থী ছিলেন তুনদু লিসু ও লুহাগা এমপিনা। এর মধ্যে লিসু রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আটক রয়েছেন যদিও তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে এসি-টি ওয়াজালেন্দো দলের এমপিনাকে আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

এছাড়া আরও ১৬টি ছোট দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিল, যাদের ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন নেই।

সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম শুরু থেকেই দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে এবং স্বাধীনতার পর থেকে কখনোই কোনো নির্বাচনে হারেনি।

নির্বাচনের আগে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সরকারের দমন-পীড়নের নিন্দা করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিরোধী দলের নেতাদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ‘ভয়াবহতার ঢেউ’-এর কথা উল্লেখ করে।

সরকার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে এবং কর্মকর্তারা নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে জানিয়েছিলেন।

২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পরে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন সামিয়া সুলুহু হাসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে ফিলিস্তিনের এই স্থানটিতে আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি: এএফপি
২০২২ সালে ফিলিস্তিনের এই স্থানটিতে আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্ত থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কর্নেল স্টিভ গ্যাভাবিক্স চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর তদন্তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল যে, আল-জাজিরার এই সাংবাদিককে একজন ইসরায়েলি সেনা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ গুলি করে হত্যা করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘জেটিও নিউজ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কর্নেল স্টিভ গ্যাভাবিক্স অভিযোগ করেন, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সন্তুষ্ট করতে এই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুর্বল করে দেয়।

২০২২ সালের মে মাসে যখন অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি হামলার সময় আবু আকলেহ নিহত হন। তখন গ্যাভাবিক্স ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য নিযুক্ত মার্কিন নিরাপত্তা সমন্বয়কের কার্যালয়ের (ইউএসএসসি) চিফ অব স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এফবিআই যখন এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন মার্কিন সরকারের পক্ষে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্যাভাবিক্সের ওপর।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তাঁর অনুসন্ধান যুক্তিসংগত সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ করেছে যে আকলেহকে হত্যা ছিল ‘ইচ্ছাকৃত’।

গ্যাভাবিক্সের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সৈন্যরা স্পষ্টভাবে অবগত ছিল যে ওই এলাকায় সাংবাদিকেরা উপস্থিত আছেন। এমনকি, নিহত আকলেহর পরনে থাকা নীল রঙের ‘প্রেস’ ভেস্টটি তারা দেখতেও সক্ষম ছিল। সাবেক এই কর্নেল আরও বলেন, যে নির্ভুলতার সঙ্গে গুলি আবু আকলেহর মাথায় আঘাত করেছিল, তা কোনো এলোপাতাড়ি গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ঘটেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তদন্তে দাবি করা হয়েছিল, তাদের সেনার গুলিতে আকলেহ সম্ভবত নিহত হয়েছেন, তবে তিনি ইচ্ছাকৃত লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন স্বাধীন তদন্তে বারবারই উঠে এসেছে, আবু আকলেহ এবং তাঁর সহকর্মীদের সাংবাদিক হিসেবে শনাক্ত করা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করা হয়েছিল।

গ্যাভাবিক্স জানান, তিনি হত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি সে সময় ইউএসএসসি যোগাযোগ কার্যালয়ের প্রধান জেনারেল মাইকেল ফেঞ্জেলের কাছে পেশ করেন। জেনারেল ফেঞ্জেল অবশ্য ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ইয়েহুদা ফক্সের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন, একজন ইসরায়েলি সেনা ভুল করে গুলি চালিয়েছেন এবং এটিকে ‘দুঃখজনক পরিস্থিতি’ বলে উল্লেখ করেন।

ফেঞ্জেলের এই পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্যাভাবিক্স খুব হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইউএসএসসি-তে কাজ করার সময় তিনি দেখেছেন, ‘সুবিধা সব সময়ই ইসরায়েলিদের দিকে যায়।’

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্যাভাবিক্স বলেন, তিনি এবং তাঁর তিনজন সাবেক সহকর্মী পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বিবৃতিতে আরও কড়া ভাষা যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জেনারেল ফেঞ্জেল তা বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, এমন আচরণে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ‘হতবাক’ হয়েছিলেন। বিষয়টি এখনো তাঁর বিবেকে আঘাত করে চলেছে।

তবে জেনারেল ফেঞ্জেল দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু

ভারতের মন্দিরে পদদলনের ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে কাসিবুগগা ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

একাদশী উপলক্ষে মন্দিরটিতে তীর্থযাত্রীদের ভিড় ছিল। আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে কাসিবুগগা সাব-ডিভিশন ইনচার্জ ডিএসপি লক্ষ্মণ রাও জানান।

কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা যায়, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষে মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হয়েছিলেন। এই দিনে উপবাস করে ভগবান বিষ্ণুকে প্রার্থনা ও পূজা অর্পণ করেন তারা।

পুলিশ জানায়ে, ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মন্দির প্রাঙ্গণের কাছে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক ভক্ত এগোতে থাকলে ভিড়ের চাপে পড়ে অনেকে লুটিয়ে পড়েন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক নারী পূজার থালা হাতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কা করছেন এবং নিজেদের বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে শুরু করে দিয়েছেন। এরপর এই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং পদদলনের ঘটনা ঘটে।

পরে মন্দিরের প্রাঙ্গণে একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। শোক জানিয়ে এ ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

নাইডু বলেন, ‘শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবাগ্গাতে ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে পদদলিত হওয়ার ঘটনাটি গভীর আঘাত দিয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভক্তদের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।’

স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদেরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী নারা লোকেশও এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, তিনি ‘গভীরভাবে স্তম্ভিত’।

লোকেশ বলেন, ‘এই একাদশীর দিনে আমাদের গভীর শোক গ্রাস করেছে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। পদদলিত হয়ে যারা আহত হয়েছেন, সরকার তাদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে।’

নারা লোকেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণেই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সরকার পরিবর্তন: অজিত দোভাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৫
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। ছবি: সংগৃহীত

শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জনগণের অসন্তোষের কারণেই প্রতিবেশী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের মতো কয়েকটি দেশে শাসক পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল।

গতকাল শুক্রবার ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সুশাসনের অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অজিত দোভাল জোর দিয়ে বলেন, জাতি গঠন এবং দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শাসনের ভূমিকা কেন্দ্রীয়। সুশাসনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে একটি দেশ তার জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং সেই সঙ্গে সাধারণ জনগণের ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হয়।

দোভাল স্পষ্ট করে বলেন, ‘একটি জাতির ক্ষমতা তার শাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তার কার্য সম্পাদন করে এবং জাতি গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিরা হলেন তাঁরাই, যারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করেন, শক্তিশালী করেন ও যত্ন নেন।’

অজিত দোভাল সুশাসনের ক্ষেত্রে উদ্ভূত নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরে জানান, সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট রাখা এখন রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, ‘সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি, এবং তাই রাষ্ট্র এই মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

দুর্বল শাসনব্যবস্থা কী ধরনের মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করে দোভাল সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে শাসন পরিবর্তনের বিপদ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুর্বল শাসন যেকোনো শাসন পরিবর্তনের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’

এই প্রসঙ্গে তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ টেনে আনেন। দোভাল উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের মতো কয়েকটি দেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি (নন-ইনস্টিটিউশনাল মেথড) উপায়ে শাসন পরিবর্তন হয়েছে, যার মূলে ছিল শাসনের দুর্বলতা এবং জনগণের অসন্তোষ। এই উদাহরণগুলো দেখায়, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং চরম পরিস্থিতি এড়াতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা কতটা জরুরি।

উল্লেখ্য, শাসন পরিবর্তনের অপ্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি বলতে সাধারণত সামরিক হস্তক্ষেপ, গণ-আন্দোলন বা অন্যান্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে বোঝায়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসন মডেলের উচ্চ প্রশংসা করেন দোভাল। তাঁর মতে, ভারত বর্তমানে ‘কক্ষপথ পরিবর্তন’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন শুধু এক ধরনের শাসনব্যবস্থা, সরকার এবং সামাজিক কাঠামোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থানকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।

সূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত