Ajker Patrika

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পের যত দৌড়ঝাঁপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার এবার যেন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটি পাওয়ার জন্য যেভাবে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন, সেভাবে ইতিহাসে আর কোনো প্রার্থী প্রচারণা বা লবিং করেননি।

ট্রাম্প নিজেই প্রকাশ্যে বলেছেন, যদি তাঁকে নোবেল না দেওয়া হয়, তবে সেটি হবে ‘একটি বড় অপমান’। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাঁর এই নজিরবিহীন প্রচেষ্টা খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না, যখন নরওয়ের নোবেল কমিটি আগামীকাল শুক্রবার এ বছরের শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে।

বিশেষজ্ঞদের যুক্তি হলো—পুরস্কারটি দেওয়া হয় আগের বছরের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে, অথচ ২০২৪ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হলেও তখনো ক্ষমতা গ্রহণ করেননি।

অসলোভিত্তিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, ‘কমিটির ওপর এমন চাপ দেওয়া কিংবা বলা—‘আমিই যোগ্য প্রার্থী’—এটা মোটেও শান্তিপূর্ণ আচরণ নয়।’

নরওয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, আগেও লবিং হয়েছে, তবে এত প্রকাশ্যে নয়। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়া ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট কিম দে-জুংয়ের পক্ষে অত্যন্ত কৌশলী প্রচারণা চালিয়েছিল।

তবুও ট্রাম্প থামেননি। তাঁর বক্তব্যে অহংকারের ছাপ স্পষ্ট—‘আমি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি, তবু তারা আমাকে নোবেল দেবে না। দুঃখজনক, আমি এটি প্রাপ্য।’

নরওয়ের সরকারের ওপর চাপ

ট্রাম্প এমনকি নরওয়ের সরকারকেও চাপ দিয়েছেন। তিনি নরওয়ের অর্থমন্ত্রী ও সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গের সঙ্গে এক ফোনালাপে বিষয়টি তোলেন। তবে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইডে বলেছেন, নোবেল কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, সরকার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

অসলোতে অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কমিটি হয়তো এমন কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে বেছে নিতে পারে, যাকে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের বিরোধী বলে মনে হবে না।

গাজা যুদ্ধের মধ্যস্থতায় ট্রাম্পের ভূমিকা

ট্রাম্পের সমালোচকেরাও স্বীকার করেন, তাঁর গাজা যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নোবেল আলোচনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনে তিনি ঘোষণা দেন—ইসরায়েল ও হামাস তাঁর মধ্যস্থতায় একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির পরিকল্পনায় একমত হয়েছে।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, অনেকে ট্রাম্পের কথা গুরুত্ব দেন না, কিন্তু গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে সেটি বড় সাফল্য হবে।

নোবেল প্রার্থিতায় ইসরায়েল ও রিপাবলিকানদের সমর্থন

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নোবেল কমিটির কাছে ট্রাম্পের পক্ষে চিঠি দিয়েছেন। গাজায় বন্দীদের পরিবারের সংগঠনও বলেছে, ট্রাম্প ‘অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন’।

ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, শুক্রবারের ঘোষণার আগেই গাজা যুদ্ধের সমঝোতা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প, যাতে সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলা যায়।

ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ ২০০৯ সালের সিদ্ধান্ত নিয়ে, যখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বারাক ওবামা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ‘অসাধারণ প্রচেষ্টার’ জন্য শান্তি পুরস্কার পান—তখন তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে যোগদানের কয়েক মাসও হয়নি।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমার নাম যদি ওবামা হতো, তাহলে ১০ সেকেন্ডেই নোবেল পেতাম।’

রিপাবলিকানদের লবিং

কমপক্ষে পাঁচজন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের মনোনয়ন পাঠিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ব্রায়ান মাস্ট বলেন, ‘আমি শুধু আফসোস করছি—প্রস্তাবটা প্রথম আমি দিতে পারিনি।’

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প এসব মনোনয়ন সম্পর্কে অবগত। মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বহুবার নোবেল পাওয়ার যোগ্য। তিনি প্রকৃত ‘শান্তিদূত’ (Peacemaker-in-Chief)। তবে তিনি স্বীকৃতির জন্য নয়, জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করেন।

অন্যান্য প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য ফলাফল

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেন, যদি ট্রাম্প চীনকে সামরিক আগ্রাসন থেকে বিরত রাখতে পারেন, তাহলে তিনি ‘অবশ্যই নোবেল বিজয়ী হওয়ার যোগ্য’।

অসলোতে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, যদি ট্রাম্প পুরস্কার না পান, তবে তিনি নরওয়ের বিরুদ্ধে শুল্ক বা অন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। বিষয়টি আরও জটিল করেছে নরওয়ের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, তারা ইসরায়েলে ব্যবহৃত মার্কিন কোম্পানি ক্যাটারপিলারের শেয়ার বিক্রি করেছে।

এ কারণে কেউ কেউ মনে করছেন, কমিটি হয়তো এমন কাউকে বেছে নিতে পারে, যিনি ‘ট্রাম্পকে শান্ত রাখবেন’। যেমন সুদানের মানবিক সংগঠন ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস। তবে অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, চাপের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া হিসেবে কমিটি হয়তো ট্রাম্পকে বিরক্ত করবে—এমন কাউকে বেছে নেবে—যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) বা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ)।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম বদলে ‘যুদ্ধ মন্ত্রণালয়’ রেখেছেন, তাঁর হাতে শান্তি পুরস্কার দেওয়া একটি অদ্ভুত বার্তা দেবে।

তারপরও সবাই স্বীকার করেন—‘আমরা এখন ট্রাম্পের পৃথিবীতে বাস করছি। নোবেল নিয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তিনিই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত