Ajker Patrika

লাখ ডলার ভিসা ফি কি কর্মরতদেরও দিতে হবে, যা জানাল হোয়াইট হাউস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত

গত শুক্রবার এক আদেশে উচ্চ-দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার ভিসা ফি নির্ধারণ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই আদেশে বলা হয়, উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসার বার্ষিক ফি ২১৫ ডলার (৩০ হাজার ৫০০ টাকার কিছু বেশি) থেকে বেড়ে হবে ১ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ২১ হাজার টাকারও বেশি। এই আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত বিদেশিদের, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতের কর্মীদের মধ্যে তোলপাড় লেগে যায়। অনেকে এরই মধ্যে বিমানের টিকিটও বুকিং দিতে শুরু করে দেন। এই হুলুস্থুল পরিস্থিতির মধ্যে নতুন এক ঘোষণা নিয়ে আসে স্বস্তি।

গতকাল শনিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নতুন এক ঘোষণায় জানান, ১ লাখ ডলারের এই ফি কেবল নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এককালীন নেওয়া হবে।

এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ফি বাড়ানোর বিষয়টি ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছিলেন, এই অর্থ প্রতিবছর পরিশোধ করতে হবে এবং তা নতুন ভিসা-প্রার্থীর পাশাপাশি নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

তার পরই এ নিয়ে হট্টগোল লেগে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত যেসব ভিনদেশি দেশটির বাইরে ছিলেন তাঁরা দেশটিতে ফিরতে তোড়জোড় শুরু করে দেন। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেভিটের পোস্ট তাঁদের স্বস্তি এনে দেয়।

ক্যারোলিন লেভিট লিখেছেন, ‘এটি বার্ষিক ফি নয়। এটি এককালীন ফি, যা কেবল নতুন ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। নবায়ন কিংবা বর্তমান ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে নয়।’

তিনি আরও জানান, কার্যনির্বাহী আদেশটি স্থানীয় সময় রোববার রাত ১২টা ১ মিনিটে (মার্কিন পূর্বাঞ্চলীয় সময়) বা গ্রিনিচ মান সময় ভোর ৪টা ১ মিনিটে কার্যকর হবে। এ হিসেবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে শনিবার রাত ৯টা ১ মিনিট থেকে তা প্রযোজ্য হবে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এই স্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলো বিদেশি কর্মীদের বিষয়ে এর প্রভাব বুঝতে হিমশিম খাচ্ছিল। এমনকি কয়েকটি কোম্পানি তাদের কর্মীদের দেশ ছাড়তে নিষেধও করেছিল বলে জানা গেছে।

সানফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু মানুষ যাঁরা শুক্রবার দেশ ছাড়ার জন্য বিমানে ছিলেন, তাঁরা পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না এই ভয়ে বিমান থেকে নেমে যান।

লেভিট বলেন, ‘যারা ইতিমধ্যে এইচ-১বি ভিসাধারী এবং বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকে ১ লাখ ডলার ফি নেওয়া হবে না। এইচ-১বি ভিসাধারীরা স্বাভাবিক নিয়মেই দেশ ছেড়ে যেতে এবং পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন।’

এইচ-১বি ভিসার আওতায় কোম্পানিগুলো বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের যেমন—বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কম্পিউটার প্রোগ্রামারদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার জন্য স্পনসর করতে পারে। শুরুতে এই ভিসার মেয়াদ তিন বছর হলেও তা বাড়িয়ে ছয় বছর পর্যন্ত করা যায়।

বিশেষ করে মার্কিন প্রযুক্তি খাতে এ ধরনের ভিসার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৪ লাখ এইচ-১বি ভিসা অনুমোদিত হয়েছিল, যার দুই-তৃতীয়াংশই ছিল নবায়ন।

সমালোচকদের দাবি, এই প্রোগ্রাম বিদেশি কর্মীদের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে, যারা প্রায় ৬০ হাজার ডলার বার্ষিক বেতনে কাজ করতে ইচ্ছুক। সাধারণত মার্কিন প্রযুক্তি কর্মীদের ১ লাখ ডলারের বেশি বেতনের চেয়ে এই পরিমাণ অনেক কম।

ঐতিহাসিকভাবে এইচ-১বি ভিসা লটারির মাধ্যমে দেওয়া হয়। চলতি বছর আমাজন ১০ হাজারের বেশি ভিসা নিয়ে শীর্ষে ছিল, এরপর ছিল টাটা কনসালটেন্সি, মাইক্রোসফট, অ্যাপল ও গুগল। এ ছাড়া উইপ্রো, ইনফোসিস, এইচসিএল টেকনোলজিস ও টিসিএসের মতো ভারতীয় সংস্থাগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশি কর্মী সরবরাহ করে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও এইচ-১বি ভিসায় ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত