Ajker Patrika

দেশ ছাড়তে চান শিক্ষিত পাকিস্তানিদের অনেকে

ডয়চে ভেলে
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১২: ২৩
দেশ ছাড়তে চান শিক্ষিত পাকিস্তানিদের অনেকে

শিক্ষিত পাকিস্তানিদের অনেকেই দেশ চাড়তে চাইছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

একটি ডিজিটাল মার্কেটিং স্টার্টআপে কাজ করেন সানা হাশিম। আরও অনেকের মতো তিনি বিদেশে গিয়ে আরও ভালো চাকরি করতে চান। কিন্তু পরিবারকে ছেড়ে যাওয়া কঠিন। ২৯ বছর বয়সী এই নারী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলাম। ইন্টারভিউতে ডাকও পেয়েছি। কিন্তু চাকরি হয়ে গেলেও যে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে পারব তা নয়। বাবা-মাকে কে দেখবে?’ 

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার পাকিস্তানি দেশের বাইরে চলে গেছেন। এই সংখ্যা গত বছর প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত বছর বিদেশে যাওয়াদের মধ্যে ৯২ হাজার ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ ও হিসাবরক্ষক আছেন। কেউ গেছেন পশ্চিমের দেশগুলোতে, কেউবা মধ্যপ্রাচ্যে—বিশেষ করে সৌদি আরব বা আরব আমিরাতে। 

২০২৩ সালে এই সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রথম তিন মাসেই প্রায় দুই লাখ পাকিস্তানি দেশ ছেড়েছেন। 

মূল্যস্ফীতির কবলে আয়
আইটি স্পেশালিস্ট নৌমান শাহ গত বছর সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছেন। তিনি ডয়েচে ভেলেকে বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে তার আর পাকিস্তানে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ‘যা আয় করছিলাম তাতে সংসার চলছিল না। তাই সৌদি আরবে খুব ভালো চাকরির সুযোগ পেয়ে চলে আসি’, বলেন নৌমান। 

অনেক বছর ধরেই পাকিস্তানে কর্মসংস্থানের অভাব, স্বল্প বেতন ও ক্যারিয়ার বড় করার সুযোগ কম। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তানি রুপির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে। পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থা আইএমএফের ঋণও জোগাড় করতে পারছে না। আমদানি খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। 

বিদেশে পড়া শিক্ষার্থীরাও দুশ্চিন্তায়
বিদেশে পড়তে আসা পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরাও পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। আগে বাইরে পড়া অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফিরে চাকরিতে যোগ দিতেন। এখনকার পরিস্থিতিতে সে হারও কমেছে। তাঁরা বিদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ খুঁজছেন। ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমার পড়ার খরচ দিতে গিয়ে আমার বাবা-মা খুবই সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু যখন আমি অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট পেয়ে যাব, তখন পরিস্থিতি বদলে যাবে’, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানি শিক্ষার্থী উজালা তারিক বলেন। 

ভবিষ্যতের ভাবনা
দেশটির স্বাস্থ্য খাতেও মেধা পাচারের বিষয়টি চোখে পড়ার মতো। ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। ফলে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে এর প্রভাব পড়ছে। ‘আমাদের বেশ কয়েকজন উঁচু মানের চিকিৎসক যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁদের কি দায়ী করা যায়? সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনও খুব কম’, বললেন, করাচির স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আফশীন আকবর। 

দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার জন্য সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভও বেড়েছে ৷ তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে কোনো উদ্যোগ কার্যকর হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত