Ajker Patrika

গাজায় নিহত ২৩২, স্থল অভিযানে যাচ্ছে ইসরায়েল, জাতিসংঘের জরুরি বৈঠক কাল

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েল হামলায় স্বজন হারিয়ে ফিলিস্তিনির কান্না। ছবি: এএফপি
ইসরায়েল হামলায় স্বজন হারিয়ে ফিলিস্তিনির কান্না। ছবি: এএফপি

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। আজ মঙ্গলবার সকালে উপত্যকাজুড়ে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে তারা। সবশেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত ২৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত আরও অনেকে। ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজায় এটিই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা।

আজ মঙ্গলবার গাজা কর্তৃপক্ষের গণমাধ্যম দপ্তরের বরাত দিয়ে হতাহতের তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল-জাজিরা।

এরই মধ্যে ইসরায়েল গাজায় স্থল অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে। হোয়াইট হাউস থেকেও হামাস, হুতি ও ইরানের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল বুধবার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

এই হামলার ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। ক্যারোলিন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট। তিনি সাফ জানিয়েছে দিয়েছেন হামাস, হুতি বা ইরানসহ যারাই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবাদের শিকার করতে চাইবে—তাদের মূল্য দিতে হবে এবং পরিণতি হবে ভয়াবহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘হুতি, হিজবুল্লাহ, হামাস, ইরান এবং ইরান–সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। কারণ ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরম মিত্র ইসরায়েলের পক্ষ নিতে ভীত নন তিনি।’

হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর আলাপ ব্যর্থ হওয়ার পরই হামলা শুরু করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘হামাস যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জিম্মিদের ফেরত দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেকারণেই আবার হামলা শুরু করা হলো।’

বিবৃতিতে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’ বিবৃতিতে জানানো হয়, গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই হামলার পরিকল্পনা প্রস্তাব করে। পরে, রাজনৈতিক নেতাদের অনুমোদনের পরই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

গত ১ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পর থেকেই একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল মধ্যস্থতাকারীরা। হামাস প্রাথমিক খসড়া অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন চায়, অন্যদিকে ইসরায়েল চায় প্রথম ধাপই আরও কিছুদিন বাড়ানো হোক।

ইসরায়েলের চাহিদামতোই, কায়রো বৈঠকে যুদ্ধবিরতি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন প্রতিনিধিরা। প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, বর্ধিত ওই সময়ে হামাস নিজেদের হাতে জিম্মিদের মুক্তি দেবে, পাশাপাশি ইসরায়েলও মুক্তি দেবে তাদের কারাগারে আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের। কিন্তু মার্কিন প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাখ্যান করে হামাস। এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, গাজায় পুনরায় যুদ্ধ শুরুর পরিকল্পনা নেতানিয়াহু অনেক আগেই করে রেখেছিলেন। শুধু ভালো একটা সুযোগের অপেক্ষা করছিলেন। প্রথমত নিজের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যই এখন যুদ্ধ টিকিয়ে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য। তা ছাড়া, ফিলিস্তিনে দখলদারি প্রতিষ্ঠার পুরোনো খায়েশ তো রয়েছেই। এরই মধ্যে ইসরায়েলের নতুন আর্মি চিফ বলেছেন, ‘২০২৫ সাল হতে যাচ্ছে যুদ্ধে বছর’।

এরই মধ্যে গাজায় স্থল অভিযান শুরুরও ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। বলেছে, তারা বেশ কয়েকটি জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ পর্যন্ত এ হামলা অব্যাহত থাকবে এবং তা শুধু বিমান হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

আগামীকাল বুধবার গাজা পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে জাতিসংঘে ইসরায়েলি দূত ড্যানি ড্যানন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘শত্রুদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না। আমি খুব পরিষ্কার করে বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাসের হাতে থাকা শেষ জিম্মিটিও মুক্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ ইসরায়েল থামবে না। (জাতিসংঘ) নিরাপত্তা পরিষদেরও আমি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলব— যদি তারা যুদ্ধ বন্ধ করতে চায় তাহলে হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, গাজায় এমন মাত্রার হামলা চালাবে ইসরায়েলি সেনারা যা হামাস কল্পনাও করতে পারছে না। গাজায় ‘জাহান্নামের দরজা’ খুলে দেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, তেহরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত