Ajker Patrika

শবে কদর রাতে সন্তানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন সৌদি বাবা

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২০: ০১
শবে কদর রাতে সন্তানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন সৌদি বাবা

সৌদি আরবের নাগরিক আতি আল-মালিকি মক্কায় বসবাস করেন। সম্প্রতি তাঁর ছেলে আবদুল্লাহকে হত্যা করেছিলেন এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় সৌদি বিচারব্যবস্থায় ওই হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছিল। কিন্তু দণ্ড কার্যকরের কয়েক দিন আগেই সেই খুনিকে ক্ষমা করে দিলেন আতি আল-মালিকি। 

এ বিষয়ে আজ রোববার গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কথা ছিল আবদুল্লাহর খুনি শাহর দিফাল্লাহ আল হারিথির। কিন্তু গতকাল শনিবার শবে কদর রাতে কোনো প্রতিদান ছাড়াই ওই খুনিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন আবদুল্লাহর বাবা আতি আল-মালিকি। 

মুসা আল-মালিকি নামে এক সৌদি নাগরিক আতি আল-মালিকির ‘ক্ষমা ঘোষণার’ মুহূর্তটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করেছেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, রমজান মাসের পবিত্রতম রাতে হারিথিকে ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন দুঃখ ভারাক্রান্ত সন্তান হারানো বাবা। ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্রই উপস্থিত অনেকে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খান। 

ক্ষমা ঘোষণার সময় আতি আল-মালিকির চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। তাঁরা মালিকির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছিলেন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিলেন। 

মহিমান্বিত রাতের এই ঘটনাটি এখন সৌদি আরবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সবাই আতি আল-মালিকির ক্ষমাকে অনেক বড় ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। 

সৌদি আরবে পরিকল্পিত হত্যার জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে সাধারণত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা চাইলে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিংবা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। বেশির ভাগ ক্ষমা ঘোষণার ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পর্কিত থাকে। তবে কোনো প্রতিদান ছাড়াই ক্ষমা করে দিয়েছেন আতি আল-মালিকি। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমা করে দেওয়ায় শিগগির মুক্তি পাবেন আবদুল্লাহর খুনি শাহর দিফাল্লাহ আল হারিথি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদাবাদ ইউনিভার্সিটির রুমে বসে দিল্লি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা, ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ হয়েছিল। ছবি: পিটিআই
গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ হয়েছিল। ছবি: পিটিআই

রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি। সম্প্রতি লালকেল্লায় ঘটে যাওয়া গাড়ি বিস্ফোরণের পরিকল্পনার ‘কেন্দ্র’ হিসেবে দেখা হচ্ছে স্থানটিকে। এ ছাড়া বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্ত এখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই চার চিকিৎসককে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে, যাঁদের পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাঁদের সঙ্গে এই চিকিৎসকদের কোনো সংযোগ নেই।

গত সোমবার লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ধীরগতিতে চলতে থাকা একটি হুন্ডাই আই-২০ গাড়ি বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গাড়িটির চালক হিসেবে ডা. উমর মুহাম্মদকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এর আগে ওই দিনই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ হরিয়ানা আর উত্তর প্রদেশ থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের মধ্যে তিন চিকিৎসক ছিলেন।

তদন্তকারী ও পুলিশের সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মুজাম্মিল শাকিল, আদিল ও শহীদ সাঈদ নামের ওই তিন চিকিৎসক ডা. উমরের সঙ্গে আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন আর তাঁদের পরিকল্পনার কেন্দ্র ছিল ৭০ একরজুড়ে বিস্তৃত আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের ১৩ নম্বর কক্ষটি ছিল ডা. মুজাম্মিলের, সেখানেই সবাই মিলিত হতেন। পুলিশ সন্দেহ করছে, এই কক্ষেই দিল্লি ও উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

জানা গেছে, এই চার চিকিৎসক দিল্লিজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্য ২০ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহ করেছিলেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯২ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন অর্থাৎ আগামী ৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ন (এনসিআর) বা রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

তহবিল থেকে পুরো অর্থ ডা. উমরকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয়েছিল। পরে গুরুগ্রাম, নুহ ও অন্যান্য নিকটবর্তী বাজার থেকে ৩ লাখ টাকায় কেনা হয় প্রায় ২৬ কুইন্টাল (২৬০০ কেজি) এনপিকে (নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম) সার। এই সার আইইডি (বোমা) তৈরির জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা প্রথমে বোমা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি থেকে রাসায়নিক পাচারের পরিকল্পনা করে। ল্যাবটি মুজাম্মিলের কক্ষ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে। ডা. উমর ও শাহীন উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি সদস্য ছিলেন, তাঁরা রাসায়নিকের ব্যবস্থা করেন। এরপর তা ফরিদাবাদের ধৌজ ও তাগা গ্রামের ভাড়া করা স্থানে মজুত করা হয়।

ডা. মুজাম্মিলের কক্ষটি এখন সিলগালা করা হয়েছে। সেখান থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও পেন ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া কোড শব্দ ও এনক্রিপ্টেড বার্তাভর্তি দুটি ডায়েরি পাওয়া গেছে।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ব্যবহৃত কক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব উভয় স্থান থেকেই রাসায়নিকের অবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। পুলিশের সন্দেহ, ল্যাব থেকে পাচার করা রাসায়নিকগুলো অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে অক্সিডাইজার মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দিল্লি বিস্ফোরণে এএনএফও (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও জ্বালানি তেল মিশ্রিত একটি বিস্ফোরক যৌগ) ব্যবহৃত হয়েছিল। এর আগে ফরিদাবাদের অভিযানেও পুলিশ ৩৫০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটসহ ২ হাজার কেজির বেশি বিস্ফোরক উদ্ধার করেছিল।

পুলিশ এখনো ডা. উমরকে আটক করতে পারেনি। তবে ডা. মুজাম্মিল শাকিল, আদিল ও শহীদ সাঈদ বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লি বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লালকেল্লার কাছে ওই বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২০ জন আহত হন। ছবি: এএফপি
লালকেল্লার কাছে ওই বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২০ জন আহত হন। ছবি: এএফপি

রাজধানী দিল্লিতে সাম্প্রতিক ঘটা গাড়ি বিস্ফোরণকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। গত সোমবার শহরের ঐতিহাসিক লালকেল্লার কাছে ওই বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত ও ২০ জন আহত হন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার গভীর রাতে (স্থানীয় সময়) নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা এ হামলার নিন্দা করেছে। মন্ত্রিসভা বলেছে, এটি ‘ভারতবিরোধী শক্তিগুলো’ দ্বারা সংঘটিত একটি কাপুরুষোচিত কাজ।

তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এ বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কারও নাম প্রকাশ করেনি বা কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি।

গতকালের বৈঠকে মন্ত্রিসভা বলেছে, ভারতবিরোধী শক্তি দ্বারা সংঘটিত এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ আরও একটি জঘন্য সন্ত্রাসী ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিচ্ছে, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধী, তাদের সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করা হোক এবং অবিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

মন্ত্রিসভা আরও বলেছে, সরকার নির্দোষ মানুষের প্রাণহানির কারণ হওয়া এই জঘন্য ও কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা জানাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স নীতি সব সময় অটল থাকবে।

গত সোমবার দিল্লির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান লালকেল্লার নিকটবর্তী একটি মেট্রো স্টেশনের কাছে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।

দিল্লি পুলিশের কমিশনার সতীশ গোলচা সাংবাদিকদের জানান, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের ১ নম্বর গেটের কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। গাড়িটি ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে ছিল। এর ফলে কাছাকাছি থাকা গাড়িগুলোরও ক্ষতি হয়।

দিল্লি পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, হুন্ডাই আই-২০ মডেলের একটি গাড়িতে এই বিস্ফোরণ ঘটেছিল। বিস্ফোরণের সময় গাড়িটি ধীরে ধীরে চলছিল এবং তাতে তিনজন আরোহী ছিলেন।

বিস্ফোরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি পুলিশ আশপাশের এলাকায় হাই অ্যালার্ট বা উচ্চ সতর্কতা জারি করে।

সোমবার ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানান, পুলিশ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিস্ফোরণের তদন্ত করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করব। তদন্তের ফলাফল আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরব।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী বিস্ফোরণের ঘটনাকে ‘অত্যন্ত হৃদয়বিদারক’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রসঙ্গত, লালকেল্লা সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ভারতের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এটি পরিদর্শনে আসেন। প্রতিবছর ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ এই স্থান থেকেই দিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিম্নকক্ষেও পাস পাকিস্তান সংবিধানের বিতর্কিত সংশোধনী, ইমরান খানের দলের বর্জন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পাকিস্তানের পার্লামেন্ট দেশটির সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী পাস করেছে। এই বিতর্কিত সংশোধনী দেশটির সেনাপ্রধানের ক্ষমতা আরও বাড়াবে এবং তাঁকে আজীবন আইনি দায়মুক্তি দেবে। একই সঙ্গে এটি সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতাও সীমিত করবে। সমালোচকেরা একে ‘গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তথা জাতীয় পরিষদে বিলটি পাস হয়েছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির—যিনি দেশটির ডি–ফ্যাক্টো শাসক হিসেবে পরিচিত—এই ২৭ তম সংশোধনীর প্রধান উপকারভোগী।

বিলটি এখন সামান্য পরিবর্তনের জন্য সিনেটে ফেরত পাঠানো হবে। এর আগে উচ্চকক্ষ সিনেট গত সোমবার এটি অনুমোদন করে। এরপর প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এতে স্বাক্ষর করলে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবিধানের অংশ হয়ে যাবে।

এই সংশোধনীর অধীনে এ বছর শুরুর দিকে পাঁচ তারকাবিশিষ্ট জেনারেল হিসেবে মনোনীত হওয়া সেনাপ্রধান আসিম মুনির অভূতপূর্ব ক্ষমতা অর্জন করবেন। তাঁকে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস—নামে নতুন একটি পদে উন্নীত করা হবে। এর ফলে তিনি কেবল সেনাবাহিনীই নয়, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি তাঁকে আজীবন ফৌজদারি বিচারের হাত থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাঙ্কট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ‘The Army and Democracy: Military Politics in Pakistan’—বইয়ের লেখক আকিল শাহ বলেছেন, মুনির ‘সাংবিধানিকভাবে অভূতপূর্ব এক সুরক্ষিত পদ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজে ও ভবিষ্যতের সেনাপ্রধানদের ক্ষমতায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।’ তিনি বলেন, সংশোধনীতে দেওয়া দায়মুক্তি ‘নাগরিক কর্তৃত্বের নীতিকে উপহাসে পরিণত করেছে, কারণ এটি তাকে সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছে।’

এই সংশোধনী সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যপরিধিও ব্যাপকভাবে খর্ব করেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে এই প্রতিষ্ঠানটিই এত দিন নির্বাহী ক্ষমতার একমাত্র নিয়ামক হিসেবে টিকে ছিল। সংশোধনী অনুযায়ী—সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বে একটি নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠন করা হবে, যার বিচারপতিদের মনোনয়ন দেবে নির্বাহী বিভাগ। সমালোচকেরা বলছেন, এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অবশিষ্ট প্রতীকটিও ভেঙে পড়বে। বিচারপতিদের বদলি বা স্থানান্তর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও এখন থেকে এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে, ফলে বিচার বিভাগে জবাবদিহির ধারণা পুরোপুরি বিলুপ্ত হবে।

সাংবিধানিক আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এই সংশোধনী ‘পাকিস্তানের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণাটিকেই ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে দেশটি কার্যত আজীবন একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে।’ বিরোধীরা বলছেন, এই আইন সামরিক শাসনকে সংবিধানে স্থায়ী রূপ দিচ্ছে এবং পাকিস্তানকে পূর্ণ কর্তৃত্ববাদে ঠেলে দিচ্ছে।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান কয়েক দশক সরাসরি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। সে সময় জেনারেলরা সংবিধান স্থগিত করে দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে জেনারেল পারভেজ মুশাররফের পতনের পর দেশটি এক ভঙ্গুর গণতন্ত্রে রূপ নেয়—যেখানে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারই মুখে নেতৃত্ব দেয়, কিন্তু পর্দার আড়ালে সেনাবাহিনীই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেনাবাহিনী আবারও দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মাধ্যমে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা আরও ক্ষমতাবান হচ্ছেন। ২০২২ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর আসিম মুনির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কার্যত রাষ্ট্রপ্রধানের মতো সফর করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুটি বৈঠক করেছেন, যেখানে ট্রাম্প তাঁকে ‘আমার প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সরকারি জোটের নেতা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা এই সংশোধনীকে ন্যায়বিচার ও সেনাবাহিনীর ‘আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি’র উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

অতীতে সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাব নিয়ে সিনেট ও জাতীয় পরিষদে সপ্তাহজুড়ে বিতর্ক হতো। কিন্তু এবার তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই কক্ষেই পাস হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, দুর্বল জোট সরকারের অসহায়ত্ব এবং মুনিরের অপ্রতিরোধ্য প্রভাবেরই প্রমাণ এটি। বুধবার কেবল চারজন সংসদ সদস্য বিলটির বিরোধিতা করেন।

পাকিস্তানের বৃহত্তম বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই ভোট বর্জন করেছে। যদিও জনসমর্থনে দলটি এখনো শক্তিশালী, কিন্তু মুনির সেনাপ্রধান হওয়ার পর থেকে তাদের রাজনৈতিক শক্তি ও প্রভাব প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। দলের নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন এবং তার মুক্তির সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

বহুদলীয় বিরোধী জোট তেহরিক-ই-তাহাফুজ-ই-আইন-ই-পাকিস্তান (টিটিএপি) অভিযোগ করেছে যে, সরকার ‘সংবিধানের ভিত্তি নড়িয়ে দিয়েছে।’ এক যৌথ চিঠিতে শতাধিক আইনজীবী ও অধিকারকর্মী এই সংশোধনীকে ‘সংবিধান বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ‘আইনজীবী সমাজ, বিচার বিভাগ এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো অর্থবহ আলোচনা বা মতবিনিময় হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষর, ৪৩ দিন পর ফুরাল অচলাবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন অবসানের বিলে সই করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি শাটডাউন বা অচলাবস্থা শেষ করতে একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে, মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদ খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি পুনরায় চালু করা, কয়েক লক্ষ ফেডারেল কর্মচারীর বেতন প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারি ব্যয় নির্বাহে জরুরি এক বিলে সম্মতি দেয়।

রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস ২২২-২০৯ ভোটে বিলটি পাস করে। ট্রাম্পের সমর্থনেই মূলত তাঁর দল ঐক্যবদ্ধ ছিল। তবে নিম্নকক্ষের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তীব্র বিরোধিতা করেন। তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন এই কারণে যে—সিনেটে তাদের সহকর্মীদের দীর্ঘ অচলাবস্থা সৃষ্টিকারী অবস্থানও শেষ পর্যন্ত ফেডারেল স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি বাড়ানোর কোনো চুক্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিলটিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষর ৪৩ দিনের এই অচলাবস্থায় কর্মবিরতিতে থাকা ফেডারেল কর্মীদের আজ বৃহস্পতিবার থেকেই কাজে ফেরার সুযোগ দেবে। তবে পুরোপুরি সরকারি কার্যক্রম কত দ্রুত স্বাভাবিক হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

হোয়াইট হাউসে গভীর রাতে আয়োজিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আর কখনো এমন কিছু হতে দিতে পারি না। এটি দেশ চালানোর উপায় হতে পারে না।’ তিনি এ সময় ডেমোক্র্যাটদের কঠোর সমালোচনাও করেন।

যাই হোক, এই আইন আইন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি অর্থায়ন বাড়াবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণে প্রতি বছর প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন সংযোজনের পথ তৈরি করবে।

অচলাবস্থার অবসান যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর পুনরুদ্ধারে আশার আলো জাগিয়েছে, বিশেষ করে থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের বিশাল ভ্রমণ মৌসুম শুরু হতে মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। একই সঙ্গে কোটি পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা পুনরায় চালু হওয়ায় বড়দিনের কেনাকাটার মৌসুমে তাদের ব্যয় করার সক্ষমতাও বাড়তে পারে।

তবে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কিছু তথ্যের ঘাটতি হয়তো আর কখনো পূরণ করা যাবে না। বিশেষ করে অক্টোবর মাসের কর্মসংস্থান ও ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) সম্পর্কিত প্রতিবেদন হয়তো আর প্রকাশই হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত