Ajker Patrika

এক দিনে ৪০০ ফিলিস্তিনি হত্যা

  • কট্টরপন্থীদের সমর্থন ও দুর্নীতির বিচার থামাতে গাজায় আবারও হামলা চালালেন নেতানিয়াহু।
  • গাজায় হামলায় পূর্ণ সমর্থন রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
  • গাজায় হামাস সরকারের প্রধান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বেশ কয়েক নেতা নিহত।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের এক দিনের হামলায় ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মরদেহ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে কম্বলে। গতকাল ফিলিস্তিনের গাজার আল-আহলি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের এক দিনের হামলায় ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মরদেহ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে কম্বলে। গতকাল ফিলিস্তিনের গাজার আল-আহলি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতাল। এই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি, দুটি, তিনটি নয়; অনেক লাশের সারি। হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন স্থানে কম্বলে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে লাশ। গাজার আরেক এলাকা আল নাসের হাসপাতালের মর্গের পাশে দেখা গেল আরেক চিত্র। সেখানে জানাজা পড়ানো হচ্ছে। তবে একজনের নয়। একসঙ্গে পাঁচজনের জানাজা হচ্ছে সেখানে।

এসব দৃশ্যই গতকাল মঙ্গলবারের। যুদ্ধবিরতি ভেঙে হঠাৎ গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় নারী ও শিশুসহ চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে গাজায় হামাস সরকারের নেতারাও রয়েছেন। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য ইসরায়েল দোষ চাপিয়েছে হামাসের ওপর। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুর্নীতির বিচার থেকে বাঁচতে এবং পার্লামেন্টে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে এই হামলা চালিয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতে নিহত হয়েছিল ১ হাজারের বেশি ইসরায়েলি। আর দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে বন্দী করেছিল হামাস। এর পাল্টা হিসেবে সেদিনই হামলা শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই যুদ্ধ হামাসের বিরুদ্ধে। তাদের গাজা থেকে সমূলে উৎপাটন করা হবে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সেই হামলা এখনো চলছে। তবে আইডিএফের হামলায় শুধু হামাসের যোদ্ধারা মারা যাচ্ছেন, এমনটা নয়। যুদ্ধ শুরুর পর ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর অধিকাংশই নারী ও শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক।

যে কারণে হামলা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ জানুয়ারিতে দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সম্মত হয়। ১৯ জানুয়ারি থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত সোমবার দিবাগত রাতে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বেশ কিছু কারণে ইসরায়েল হামলা শুরু করেছে। একটি কারণ হিসেবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা চাইছে হামাসের হাতে বন্দী সব ইসরায়েলিকে ছেড়ে দিতে হবে। এই শর্ত না মানায় আইডিএফ হামলা শুরু করেছে। তবে হামাস ইসরায়েলের এই দাবি খারিজ করেছে। তারা বলছে, এখন যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে ঢোকার কথা। এই ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার কথা। তবে আইডিএফ এই নিয়ন্ত্রণ ছাড়বে না বলে হামলা শুরু করেছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া এবং আইডিএফ সদস্যদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার পর নতুন করে যোদ্ধা নিয়োগ দেওয়া শুরু করে হামাস। তবে ইসরায়েল চাইছে না, হামাস তার শক্তি ফেরত পাক।

যুদ্ধবিরতি ভাঙার আরেকটি কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের এই অভিযান বা নতুন করে হামলা শুরুর পেছনে ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আর এ কারণেই হামলা শুরু করেছে আইডিএফ।

এর বাইরে নেতানিয়াহুর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টিও রয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টে ভোট হবে। এই ভোটে কট্টর ডানপন্থীদের সমর্থন পেতে হামলা শুরু করেছেন তিনি। অন্য দিকে আরেক কারণ হলো দুর্নীতির অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিচার চলছে। গতকাল মঙ্গলবার এই মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল নেতানিয়াহুর। এই মামলায় সাজা হলে তাঁকে জেলে যেতে হবে। তবে হামলা চালানোর পর এই বিচারে অংশ নিচ্ছেন না নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধ নতুন করে শুরু হওয়ায় তিনি আদালতে হাজির হননি।

হামাস নেতারা নিহত

আইডিএফ জানিয়েছিল, তারা হামাসের অবস্থান লক্ষ করে হামলা চালিয়েছে। হামলার পর হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলায় গাজায় তাদের সরকারের প্রধান এসাম আল-দালিস মারা গেছেন। এ ছাড়া সেখানকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আবু ওয়াতফা এবং গাজার নিরাপত্তা বিভাগের মহারিচালক আবু সুলতান নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির পর আশ্রয় শিবির থেকে নিজ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছিল গাজাবাসী। গতকাল আইডিএফের হামলা শুরুর পর আবারও আশ্রয়শিবিরে ফিরে যাচ্ছে তারা। গতকাল বার্তা সংস্থা এএফপির একাধিক ছবিতে দেখা যায়, নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আবারও আশ্রয়শিবিরের দিকে রওনা হয়েছে অনেকে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো এই হামলা নিয়ে নীবর রয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত