Ajker Patrika

ভারতে নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক সরকারি অ্যাপ—গোপনীয়তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ছবি: নিক্কেই এশিয়া
ছবি: নিক্কেই এশিয়া

ভারতে বিক্রি হওয়া সব নতুন স্মার্টফোনে ‘সঞ্চার সাথি’ নামে একটি সরকারি অ্যাপ বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টল করার নির্দেশনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী, অ্যাপটি ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা বা নিষ্ক্রিয় করা যাবে না। ফলে এটিকে অনেকেই নজরদারির ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন। অ্যাপল, ভিভোসহ সব নির্মাতাকে ৯০ দিনের মধ্যে এই শর্ত মানতে হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

ভারত সরকারের টেলিকম বিভাগ দাবি করেছে—‘সঞ্চার সাথি’ মূলত চুরি বা হারানো ফোন ট্র্যাক ও ব্লক করতে এবং ব্যবহারকারীর নামে থাকা ভুয়া মোবাইল সংযোগ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। অ্যাপটি এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছায় ডাউনলোডযোগ্য হলেও নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব নতুন ডিভাইসেই এটি প্রিলোড করতে হবে এর ‘ফাংশনালিটি সীমিত বা নিষ্ক্রিয় করার’ কোনো উপায় না রেখেই। অর্থাৎ কেউ চাইলেই এটি ফোন থেকে ডিলিট করতে পারবে না।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তটি ‘গোপনীয়তায় স্থায়ী হস্তক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছে দেশটির ডিজিটাল অধিকার সংগঠন ‘ইন্টারনেট ফ্রিডম ফাউন্ডেশন’ (আইএফএফ)। সংগঠনটি ঘোষণা করেছে, নির্দেশনা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে যাবে।

এ অবস্থায় জনমনে বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে, যখন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন—ব্যবহারকারীরা নাকি চাইলেই অ্যাপটি ‘সক্রিয় বা মুছে ফেলতে’ পারবেন। তবে তিনি নির্দেশনার সেই অংশটি ব্যাখ্যা করেননি, যেখানে অ্যাপ নিষ্ক্রিয় বা সীমিত করা নিষিদ্ধ বলা আছে। সরকারও নতুন কোনো ঘোষণায় বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছে। বহু ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন—অ্যাপটি ফোনের ক্যামেরা, কল লগ, ফাইল স্টোরেজ ও এসএমএসসহ বিস্তৃত অ্যাকসেস চায়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্টের তরুণ পাঠক বলেন, ‘ইউরোপের ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট ব্যবহারকারীকে অ্যাপ মুছে ফেলার অধিকার দেয়। আর আমরা সেই জায়গা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি।’

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্মাতা কোম্পানিগুলো প্রকাশ্যে অবস্থান না নিলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অ্যাপল ও চীনা ব্র্যান্ডগুলো শিল্প সংগঠনের মাধ্যমে নীরবে ভারত সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। ভারতে ভিভো, অপ্পো ও শাওমি মিলেই বাজারের অর্ধেকের বেশি দখলে রেখেছে। অন্যদিকে অ্যাপল ইতিমধ্যে অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের মুখে রয়েছে, যা তাদের জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করেছে।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, অ্যাপল এই নির্দেশনা মানতে আগ্রহী নয়। তবে কোম্পানিটি এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়াতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...