
ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

ঢাকা: ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। আগামীকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। তবে নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, ভারতের নির্বাচনে যা হচ্ছে, তা শুধু একটি অঞ্চলের অতীত পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এর অনেকটাই নির্ভর করে সাংগঠনিক সুবিধাদির ওপর। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য সুনেত্রা চৌধুরীর নেওয়া এ সাক্ষাৎকারের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
অমর্ত্য সেন: আমি এখন যেখানে (হার্ভার্ড) থাকি, তার থেকে কলকাতার সময়ের বিস্তর ফারাক। তাই যতটা সম্ভব, এই নির্বাচনগুলোর দিকে নজর রাখছি।
এ নির্বাচনে বাংলার আত্মা নিয়ে লড়াই হচ্ছে। প্রতিটি দল নিজেদের বাংলার প্রকৃত প্রতিনিধি বলে দাবি করছে। এই নির্বাচনী লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
অমর্ত্য সেন: হ্যাঁ, এক ভীষণ লড়াই চলছে। কেন্দ্র সরকার যখন কোনো একটি রাজ্যের নির্বাচনের ওপর এত অস্বাভাবিক মাত্রার গুরুত্বারোপ করে, তখন এ নিয়ে ব্যাপক মাত্রার আগ্রহ তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এর জন্য বাড়তি উপলক্ষের আর প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, এও অস্বাভাবিক নয় যে, স্থানীয় বাঙালিরা এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে। এই দুটি বিষয় একসঙ্গে একে যুদ্ধের রূপ দিয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসেই বিরল।
বাংলার নির্বাচনে সহিংসতা ঘটে কেন? নির্বাচন কমিশনও (ইসি) আট ধাপেই সহিংসতা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।
অমর্ত্য সেন: বাংলা বেশি সহিংস—এমন কিছু এর পেছনে নেই বলেই মনে হয়। আমার মনে হয়, ইসি বিভাজন টানতে চাইছে। নির্বাচনের ঘটনাগুলোর দিকে যদি তাকান, তবে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব খুব অল্পই পালন করছেন এবং নির্বাচনের কাজে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। এর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকার সুস্পষ্টভাবে সব ধরনের কাজে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করছে, যা এক বা দুদিনে নির্বাচন হলে সম্ভব হতো না। এখন ইসি এই কারণেই এভাবে (নির্বাচন) করছে কিনা, তা আমি জানি না। আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা, তাতে বাংলার বহু মানুষ নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করছেন। এমনকি (চতুর্থ ধাপে ভোট গ্রহণের সময়) গোলাগুলিতেও চার বাঙালি নিহত হলো, যাদের সবাই মুসলমান। আমি সে গল্পের ভেতরে যাচ্ছি না। কিন্তু একে শুধু বাংলার শান্তির ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না বা এর অনুপস্থিতি হিসেবেও নয়, যা আট ধাপের নির্বাচনে বাংলায় ঝুঁকি তৈরি করেছে। বরং প্রায় একই বিস্তৃতির অঞ্চলে এক বা দুদিনের মধ্যে এটি (গোলাগুলি) ঘটেছে। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, যা আমাদের আলোচনা করা দরকার।
আমি জানি না, বাংলায় নির্বাচনের সময় এর চেয়ে বেশি রক্ত ঝরার ঐতিহ্য রয়েছে কিনা। যদি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময়ের কথা ভাবেন, তবে বাংলায় বহু বছর ধরে বহু লড়াই হয়েছে। পলাশির যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তন হয়েছিল। সেখানে বাংলার শেষ নবাব সিরাজ–উদ–দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়েছিল। এর পর ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ব্রিটিশদের তাড়ানোর চেষ্টা থেকে বহু লড়াই হয়েছে, যার মূল ছিল বাংলায়। ফলে ঐতিহাসিক একটা প্রবণতা অবশ্যই আছে।
বাংলা ভাগ হয়েছিল হিন্দু ও মুসলিম বিবেচনায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে খুব বড় বিভাজন ছিল না। বিপরীত দিক থেকে, যদি দশম শতকে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির গোড়ার দিকে তাকানো যায়, তবে হিন্দু–মুসলিমের ঐক্যের দেখাই মিলবে। মূল দুই মহাকাব্য রামায়ন ও মহাভারত অনুবাদের মূল উদ্যোগটি এসেছিল মুসলমান রাজার দিক থেকে, যিনি মহাকাব্যের খুব ভক্ত ছিলেন। সময়ে সময়ে হিন্দু–মুসলিম ঐক্যের ঐতিহ্যের দেখাই মিলবে। ব্রিটিশরা হিন্দু–মুসলিমদের বিভাজিত করতে উদ্গ্রিব ছিল। একে মোটাদাগে ভাগ করে শাসন করার নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের দিকে তাকালে সেই নীতিরই নবরূপায়ণ চোখে পড়বে। এই আইন মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয় নয়। কারণ, এতে হিন্দুদের যে অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা তাদের দেওয়া হয়নি। এটি শুধু মুসলিমদেরই নয়, অনেক হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থা রাখে।
শেষব্দি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাংলা ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এর যেকোনো ব্যাত্যয়ের বিরোধিতা আসে, যেখানে পুলিশ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ঘটনায় যখন শুধু মুসলিমই গুলিবিদ্ধ হয়, বা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাওয়া কোনো বড় দলের নেতা যখন বলেন, ‘আমরা চাই না মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক।’
কেন নয়? এটি সব ধরনের প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসে। তাই উত্তেজনার পেছনে অনেক কারণ আছে, যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। এই ভাবনা বাংলার সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক বড় বিষয়। আমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু তারপরই তো কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি (নজরুল) যে ম্যাগাজিনে লিখতেন, তার মাস্টহেডে (পত্রিকার প্রথম পাতায় নাম যেখানে লেখা থাকে) ১৫ শতকের যে কবিতার পঙ্ক্তি লেখা থাকত, তা হচ্ছে—সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই। ধর্মনিরপেক্ষতার ইস্যুটি বরাবরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন এই নির্বাচনগুলোর লড়াইয়ের ময়দানে হাজির রয়েছে।
কোনো সন্দেহ নেই বিজেপি মেরুকরণকে ব্যবহার করছে। কিন্তু নির্বাচন কৌশলি প্রশান্ত কিশোর বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস মুসলিমদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে। আর এখন হিন্দুরা এমন এক দলকে ভোট দিতে চাইছে, যারা তাদের স্বার্থের দিকে তাকাবে। এর সঙ্গে কি আপনি একমত?
অমর্ত্য সেন: একে অনুমাননির্ভর ইতিহাস বলা যায়। বাংলা দীর্ঘদিন ধরেই বিভাজিত ময়দান। ব্রিটিশরা ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন একে ভাগ করল এবং চাইল যে, মুসলিমরা আলাদা হোক, তখন তাদের প্রত্যাশা ছিল—বাংলার মুসলিমরা একে সমর্থন করবে, যেহেতু তারা এমন একটি অংশ পাবে, যেখানে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। কিন্তু বাঙালিরা কী করল? বাঙালিরা, হিন্দু, মুসলিম—দুই–ই এর বিরোধিতা করল। বাংলার ঐক্য সম্পর্কিত একটি কবিতা—আমার সোনার বাংলা, পরে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হলো। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্যকে সত্য মেনে যদি ধরা হয়, বাংলায় দরিদ্র হিন্দুর তুলনায় দরিদ্র মুসলিমের সংখ্যা বেশি ছিল, তবে ন্যায্যতার প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা জরুরি। ন্যায্যতার বিবেচনায় পিরামিডের প্রান্তে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করাটা জরুরি। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বরাবরই এই প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। একটি অঞ্চলে কারা দরিদ্র এবং তাদের জন্য কী করা প্রয়োজন, সেদিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন মতুয়া, নমশূদ্র, নিম্ন শ্রেণির হিন্দু বা বাংলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো করেই মুসলিমদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন পড়েছে। এ ক্ষেত্রে একই কারণ কাজ করেছে।
তাই আমার মনে হয়, এই মুসলিম বিষয়ক আলোচনা অনেক হয়েছে। এবার হিন্দুদের উচিত এটা উপলব্ধি করা যে, এটি হিন্দুত্ববাদী ধারণায় উজ্জীবিত একটি দলের প্রচারকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন যে–ই এ কথা বলুক, তিনি ভুল করছেন। কারণ, আপনাকে মানুষের দিকে তাকাতে হবে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সুবিধাহীন শ্রেণি হিসেবে। ভারত সরকার নিজেই মুসলিমদের সুবিধাবঞ্চিত করেছে, যাতে ভারতের বাইরে আপনি নির্যাতিত হলেও একজন হিন্দুর মতো করে ভারতে আপনি আশ্রয় চাইতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনাকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে হবে।
আপনি নিম্নবর্গ ও নিম্ন শ্রেণির হিন্দুদের কথা বললেন। তাদের বিজেপি নিজেদের ভোটার বলে মনে করে। ২০১৯ সালে উত্তর প্রদেশে নির্বাচনে তারা তাদেরই ভোট দিয়েছে। এর ব্যাখ্যা কী?
অমর্ত্য সেন: এটা খুবই মজার প্রশ্ন। একটি অঞ্চলের ন্যায্যতার ইতিহাস একটি নির্বাচনে কী ঘটবে তা নির্ধারণ করে না। এটি সাংগঠনিক সুবিধার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। বাংলা বা উত্তর প্রদেশের বদলে কেরালার দিকে তাকালে মজার বিষয় পাওয়া যাবে। ভারতের যেকোনো জায়গার তুলনায় কেরালায় অস্পৃষ্যতার সংকট, জাত বিচার অনেক বেশি। তারপরও শক্ত সংগঠনের কারণে (এ ক্ষেত্রে বামদের) এই পরিস্থিতি সময়ের সঙ্গে রাতারাতি বদলে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি বলেই এটি সম্ভব হয়েছিল, যারা সব জাতির কাছ থেকে ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে এই জাতি সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক সংগঠনগুলো যে ভূমিকা নিতে পারে, তাকে আমাদের অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
হিন্দুত্ববাদ খুবই গতিশীল একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। আমি তাদের সঙ্গে একমত না হতেই পারি। কিন্তু তাদের সাংগঠনিক অনেক কিছুকে আমার সম্মান জানাতেই হবে। সব নির্বাচনে না হলেও তারা সফল। কিছু আদিবাসী অধ্যূষিত এলাকায়, বিশেষত ত্রিপুরার মতো এলাকায় বিজেপি আধিপত্য বিরাজ করতে পারত। আমাদের এই সাংগঠনিক দিকটির দিকে তাকাতে হবে। এই কারণে আপনার প্রশ্ন করা উচিত যে, বাংলা যদি এতটাই ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তবে একটি হিন্দু দল জিতুক বা না জিতুক কী করে এতটা সম্ভাবনা তৈরি করল? সংগঠনের কারণেই। আমার মনে হয় না এমন আর কোনো নির্বাচন আমরা দেখেছি, যেখানে কেন্দ্র থেকে এতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘুরে ঘুরে আসছেন এখানে। শুধু তাই নয়, বিপুল অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বিজেপির হাতে খরচা করার মতো বিস্তর অর্থ আছে, আর তারা এর ভালো ব্যবহারও করছে। ফলে আমার মনে হয় এর দিকে এভাবেই তাকানো উচিত। আমাদের কিছুই করার নেই—এমন আশাহত কথা বলবার কিছু নেই। আপনি যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সম–ন্যায্যতার নীতিতে অটল থাকেন, তবে আপনার এর জন্য কাজ করা উচিত। এমনভাবে কাজ করা উচিত, যাতে এর দ্বারা হিন্দু, মুসলিম, দলিত বা যারা দলিত নয়, সবাই উদ্বেলিত হয়।
রাজ্য সরকার কোনো গুরুতর ভূল করেছে বলে মনে করেন কি?
অমর্ত্য সেন: হতে পারে অনেক আছে। আমি আলাদা করে গবেষণা করিনি। অনেক অর্জনও আছে। দরিদ্র হলেও গুজরাটের কৃষকদের চেয়ে বাংলার কৃষকদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা এখনো অনেক ভালো। সরবরাহ সম্পর্কিত কিছু বিষয় থাকলেও বণ্টনের বিষয়টি বেশ ভালো। এমন অনেক কিছু আছে। অনেক ভুলও হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ভারতে যেভাবে কৃষকদের সঙ্গে আচরণ করা হয়, তার কথা বলা যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কেন্দ্র সরকারের বিবেচনা থেকে কৃষকেরা একেবারে হারিয়ে গেছে। কেন্দ্রে সরকার গঠনের জন্য এখনো তাদের দরকার। ফলে এটি এতটা সরল নয়। কারণ ভুল শনাক্ত করা খুব সহজ। কিন্তু যখন আমরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে বসি, তখন আমাদের সত্যের অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বোধও থাকতে হবে। যাকে এই মুহূর্তে একটি উত্তর বলে মনে হচ্ছে, তা উত্তর নাও হতে পারে।

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
১০ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
১০ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
১০ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
১০ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
১০ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
১০ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে চলমান নির্বাচন নিয়ে তোলপাড়ের শেষ নেই। মোট আট ধাপের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয় পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে নানা মহলে নানা কথা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
১৬ এপ্রিল ২০২১
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
১০ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
১০ ঘণ্টা আগে