Ajker Patrika

পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ০১
পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। অথচ দেশের অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে পাসপোর্টের ক্ষমতার কোনো সামঞ্জস্য নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ভারতের পাসপোর্টের দুর্বলতা আবারও প্রকট হয়েছে। ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই সূচকে ভারত গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে।

ভারতীয় নাগরিকদের জন্য পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভিসা প্রাপ্তি এখনো একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল ভারতের ‘সফট পাওয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিশ্বের মোট ১৯৯টি পাসপোর্টের মধ্যে ভারতের বর্তমান অবস্থান ৮৫তম। এটি হতাশাজনক বলছেন পর্যবেক্ষকেরা। এর বিপরীতে রুয়ান্ডা (৭৮তম), ঘানা (৭৪তম) এবং আজারবাইজানের (৭২তম) মতো ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশগুলো সূচকে এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা মাত্র ৫৭টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা পান, যা আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার নাগরিকদের সমান।

অবশ্য গত দশকেও পাসপোর্ট সূচকে ভারত ৮০-এর ঘরেই ওঠানামা করেছে, এমনকি ২০২১ সালে ৯০-এর ঘরে নেমে গিয়েছিল। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ভারতের জন্য এটি মোটেও সম্মানজনক নয়। এশিয়ার এই দেশগুলোর পাসপোর্ট বরাবরই সূচকের শীর্ষস্থানে থাকে।

গত বছরের মতো চলতি বছরও সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা নিয়ে সূচকের শীর্ষে অবস্থান করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়, ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা আছে ১৯০টি দেশে। ১৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে জাপানের অবস্থান তৃতীয়।

যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা মাত্র ৩৮টি। উত্তর কোরিয়ার অবস্থানও একই।

পাসপোর্টের ক্ষমতা কেবল একটি ভ্রমণ নথি নয়; এটি একটি দেশের ‘সফট পাওয়ার’ এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। একটি দুর্বল পাসপোর্ট নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসা, উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত সুযোগ সীমিত করে। এর ফলে ভিসা খরচ বাড়ে এবং ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময় তৈরি হয়।

বিগত এক দশকে ভারতে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়লেও, র‍্যাঙ্ক কেন পিছিয়েছে?

২০১৪ সালে ভারতে যখন প্রথম নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ ছিল ৫২টি দেশে এবং র‍্যাঙ্ক ছিল ৭৬তম। এর এক বছর পরই বড় ধাক্কা খায় ভারতীয় ভিসা, অবস্থান একলাফে ৮৫-তে নেমে যায়। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে একটু উন্নতি হয়, ৮০তম স্থানে ওঠে। এরপর ২০২৫ সালে আবার নেমে ৮৫তম স্থানে চলে গেছে। এই সময় ভারতীয়দের ভিসামুক্ত ভ্রমণ গন্তব্য ২০১৫ সালের ৫২ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬০ এবং ২০২৪ সালে ৬২টি হয়েছে। স্পষ্টত ২০২৫ সালে ভিসা গন্তব্য ৫৭টিতে ঠেকলেও তা ২০১৫ সালের (৫২) তুলনায় বেশি। এরপরও পাসপোর্ট সূচকে ৮৫-তে নেমে যাওয়ার কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে তীব্র প্রতিযোগিতা। বৈশ্বিক গড় ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ২০০৬ সালের ৫৮ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ১০৯ হয়েছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের অন্যান্য দেশ দ্রুতগতিতে তাদের নাগরিকদের জন্য নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দৌড়ে ভারত পিছিয়ে পড়েছে।

যেখানে গত এক দশকে চীন তাদের ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২ করেছে, যার ফলে তাদের র‍্যাঙ্ক ৯৪ থেকে ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এই উদাহরণ স্পষ্ট করে, কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে র‍্যাঙ্ক দ্রুত উন্নত করা সম্ভব।

র‍্যাঙ্ক পতনের নেপথ্যে রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও নিরাপত্তাও বড় কারণ। সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা এই র‍্যাঙ্ক পতনের পেছনে একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণ তুলে ধরেছেন।

মালহোত্রার মতে, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে আঘাত করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো ভিসা নীতি কঠোর করে। পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান-পতন ভারতের স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

মালহোত্রা উল্লেখ করেন, অনেক দেশই বর্তমানে অভিবাসন নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। ভারত থেকে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে যাওয়া বা ভিসার মেয়াদ শেষেও থেকে যাওয়ার হার বেশি হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সুনামের ওপর প্রভাব ফেলছে।

হেনলি বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে বিভিন্ন দেশের অবস্থান:

এ ছাড়া পাসপোর্টের নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং জটিল পদ্ধতিকেও এই পতনের জন্য দায়ী করেছেন মালহোত্রা। তিনি বলেন, পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন পদ্ধতিও ভিসামুক্ত প্রবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালে শুধু দিল্লি পুলিশই ভিসা এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতের ধীরগতির ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং জটিল অভিবাসন পদ্ধতিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্ব রাজনীতিতে ‘আইসোলেশন’ বা বিচ্ছিন্নতার প্রবণতার কারণে সূচকে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ১২তম স্থানে নেমে এসেছে। যেখানে আগের বছরও শীর্ষ ১০-এ ছিল।

এদিকে পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ভারত সম্প্রতি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। এতে ছোট একটি চিপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যা জালিয়াতি রোধে অত্যন্ত কার্যকর হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মত হলো, শুধু প্রযুক্তিগত উন্নতিই যথেষ্ট নয়। ভারতীয়দের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব বাড়াতে হলে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং দ্রুত নতুন নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাসপোর্টের র‍্যাঙ্ক উন্নত করতে সরকারের এই বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’ খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদী বিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’ এবং ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী এবং দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহতদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টার স্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল এবং একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদী মুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এ অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত