Ajker Patrika

কেরালায় দলিত কিশোরীকে ৫ বছর ধরে ধর্ষণ করে ৬০ জন

আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ২০
কলকাতায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার পর প্রতিবাদে আহমেদাবাদে মোমবাতি জ্বালায় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। ছবি: এএফপি
কলকাতায় ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা করার পর প্রতিবাদে আহমেদাবাদে মোমবাতি জ্বালায় মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। ছবি: এএফপি

ভারতের কেরালা রাজ্যের দলিত সম্প্রদায়ের ১৮ বছরের এক তরুণী পাঁচ বছর ধরে যৌন নির্যাতন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তত ৬০ জন পুরুষ তাঁকে পৃথকভাবে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। অভিযোগ অনুসারে, প্রতিবেশী এক পুরুষ তাঁকে যৌন নির্যাতন ও এর ভিডিও ধারণ করেন এবং সেই ভিডিও ব্যবহার করে তাঁকে অন্য পুরুষদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে কিশোর থেকে শুরু করে ৪০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষও আছে।

ঘটনার সূত্রপাত পাঁচ বছর আগে, যখন মেয়েটির বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। সে সময় ওই কিশোরীর এক প্রতিবেশী যুবক তাঁকে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করেন। কিশোরীর অভিযোগ, সেই ভিডিও ব্যবহার করে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করা হয় এবং পরে গ্রামের অন্যান্য পুরুষ ও ছেলেরা তাঁকে নির্যাতন করেন।

মেয়েটির বয়স এখন ১৮ বছর। তিনি কেরালার একটি কলেজের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি একজন ইন্সপেক্টর কলেজ পরিদর্শনে গেলে তাঁর কাছেই বিষয়টি তুলে ধরেন মেয়েটি। ইন্সপেক্টরের কাছে মেয়েটি জানিয়েছেন, কিছু অভিযুক্ত একা তাঁকে নির্যাতন করেছে, আবার অনেকে সংঘবদ্ধভাবে তাঁকে ধর্ষণ করেছে। এমনকি কয়েকজন তাঁকে গ্রামের বাইরে নিয়ে গিয়েও নির্যাতন করেছে।

এ ঘটনায় কেরালা পুলিশ এখন পর্যন্ত ৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মেয়েটির সহপাঠী, আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং অপরিচিত পুরুষও আছেন। পুলিশের মতে, অন্তত তিনজন নির্যাতক মেয়েটিকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একজন হুমকি দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে জানান, তবে তাঁকে হত্যা করা হবে।

বেগম নামে কেরালা পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক অজিতা বেগম বলেন, ‘সবাই একজোট হয়ে ধর্ষণ করেছে, এমনটা বলা যাচ্ছে না।’ পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্তদের বেশির ভাগই মেয়েটির সঙ্গে তাঁর বাবার ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। পুলিশ আরও জানিয়েছে, আসামিদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন জাতিগত দিক থেকে উচ্চবর্ণ বা গোত্রের। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই আসামিরা ভারতীয় আইন অনুসারে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারেন।

উপ-মহাপরিদর্শক অজিতা বেগম জানান, মেয়েটিকে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মেয়েটির পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এ ঘটনা তদন্তে সর্বোচ্চ পরিমাণে লোকবল মাঠে নামিয়েছে। তবে মামলাটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হওয়ার জন্য কয়েক বছর লাগতে পারে।

দলিতরা ভারতের হিন্দু জাতিগত কাঠামোর নিম্নস্তরে এবং প্রায়শই নির্যাতনের শিকার হয়। জাতিগত বৈষম্য ও দারিদ্র্যের কারণে তাদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন। আশঙ্কার বিষয় হলো, এ ঘটনায় স্থানীয় অনেক নারীই অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছেন এবং মেয়েটির পোশাক ও জীবনযাপন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এমনকি তারা মেয়েটির বেঁচে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলিত অধিকারকর্মী ও সমাজনীতির গবেষক সিনথিয়া স্টিফেন বলেন, জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও ভারতের ২৬ কোটিরও বেশি দলিত জনগণ নির্যাতন এখনো চলছে। যারা নির্যাতন করে তাদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে।

সিনথিয়া স্টিফেন বলেন, ‘যখন দলিত নারীদের নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে, তখন সাধারণত দেশব্যাপী প্রতিবাদ কম হয়। কারণ, উঁচু বর্ণের লোকজন মনে করে, এই মেয়ে আমাদের মধ্যকার কেউ নয়।’

দলিতরা সাধারণত কলোনি নামক নির্ধারিত এলাকায় বাস করেন। এই এলাকা খুবই সংকীর্ণ এবং কঠোর জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। কারণ, ভারতের ঐতিহাসিক আইনগুলোর কারণে দলিতরা ভূমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত। এই কলোনির নারীদের কোনো গোপনীয়তা নেই। সেই সম্পদে কোনো অধিকার তাদের নির্যাতিত হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড জেন্ডার জাস্টিসের অধ্যাপক মধুমিতা পাণ্ডে বলেন, এ ধরনের কলোনির মতো ‘নিবিড় সম্প্রদায়’ প্রকৃতির কারণে কিশোরীটির নির্যাতন যখন প্রথম ঘটে, তখনই সামনে আসতে পারেনি। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা প্রায়ই নির্যাতিতার বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশী কেউ হয়।

এ ঘটনা ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও জাতিগত বৈষম্যের এক ভয়াবহ উদাহরণ। মেয়েটির সাহসী পদক্ষেপ এবং পুলিশের তদন্ত আশা জাগাচ্ছে যে, এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে, দলিত নারীদের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত