Ajker Patrika

যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, তারপর পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা, শেষে নিজেই গুলিবিদ্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের গ্রেটার নয়ডায় শ্বশুরবাড়িতে মারধর ও গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যান ২৮ বছর বয়সী নিক্কি ভাটি। পুলিশের হেফাজত থেকে ‘পালানোর চেষ্টা করলে’ তাঁর স্বামী বিপিন ভাটির পায়ে গুলি লাগে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিক্কির মৃত্যু হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। নিক্কির বোন কাঞ্চন, যিনি বিপিনের ভাই রোহিতের স্ত্রী, অভিযোগ করেন, বিপিন ও তাঁর মা দয়া নিক্কির গায়ে আগুন দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঞ্চনের পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, মা ও ছেলে নিক্কিকে মারধর করছেন। অন্য একটি ক্লিপে দেখা যায়, জ্বলন্ত অবস্থায় নিক্কি সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন। বিপিনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাঁর মা দয়া, বাবা সত্যবীর ও ভাই রোহিত পলাতক।

আজ রোববার সকালে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিক্কির বাবা ভিকারি সিং পায়লা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গুলি করে হত্যার দাবি জানান।

ভিকারি সিং পায়লা বলেন, ‘ওরা খুনি, ওদের গুলি করা উচিত, ওদের বাড়ি ভেঙে ফেলা উচিত। আমার মেয়ে পারলার চালিয়ে নিজের ছেলেকে বড় করছিল। ওরা ওকে নির্যাতন করেছে। পুরো পরিবার এ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল। তারাই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে।’

বিপিনের পালানোর চেষ্টা ও পুলিশের গুলি চালানোর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি এসব কথা বলেন।

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা সুধীর কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিক্কিকে পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থের বোতল উদ্ধারের জন্য তারা আজ বিপিনকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি একজন পুলিশ সদস্যের পিস্তল কেড়ে নিয়ে গুলি চালান। পাল্টা গুলিতে তাঁর পায়ে আঘাত লাগে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিপিন বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘আমি কিছুই করিনি। সে নিজেই মারা গেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া তো সব জায়গায় হয়। এটা কোনো বড় ব্যাপার নয়।’

এ ঘটনার পর নিক্কির বাবা বলেন, ‘আমি খুশি। এমন লোকদের গুলি করা বা ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। ওকে বুকে গুলি করা উচিত ছিল। যারা পলাতক আছে, তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত।’

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর নিক্কি ও তাঁর বোন কাঞ্চনের সঙ্গে বিপিন ও রোহিতের বিয়ে হয়।

কাঞ্চন, যিনি নিজের বোনের গায়ে আগুন লাগার দৃশ্য দেখেছেন, এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমাদের বাবা বিয়েতে স্করপিও এসইউভি গাড়ি, রয়্যাল এনফিল্ড বাইক, নগদ টাকা, সোনা—সবকিছুই দিয়েছিলেন। এর বাইরে বিভিন্ন উৎসবে আমাদের বাড়ি থেকে উপহার পাঠানো হতো। আমাদের মা-বাবা দুই মেয়ের জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে খুশি ছিল না। তারা সব সময় সমালোচনা করত। তারা বলত, আমার মা-বাবার দেওয়া পোশাকের দাম মাত্র ২ রুপি।’

নিক্কির বোন আরও বলেন, ‘বিপিন ও রোহিত প্রায়ই রাতে দেরি করে ঘরে ফিরত। আমাদের ফোন ধরত না। আমরা যদি জিজ্ঞেস করতাম, তারা কোথায় ছিল, তাহলে তারা ঝগড়া শুরু করত। তারা অন্য নারীদের সঙ্গে সময় কাটাত। আমরা যখন এর প্রতিবাদ করতাম, তখন তারা আমাদের মারধর করত। আমাদের রাতগুলো কান্না করে কাটত। আমার বোন আর নেই। সে আমার থেকে দুই-তিন বছরের ছোট ছিল। কিন্তু লোকে ভাবত, আমরা যমজ।’

কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা দুই বোন একটি পারলার চালাতাম। শ্বশুরবাড়ির লোকজন এটা পছন্দ করত না। তারা আমাদের সব উপার্জন নিয়ে নিত। এ নিয়ে আমাদের মারধর করা হতো। যদি আমি এ ভিডিও না করতাম, তাহলে কেউ জানত না, আমার বোন কীভাবে মারা গেছে। আমি জল ঢেলে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মাঝপথে অজ্ঞান হয়ে যাই।’

নিক্কি ও বিপিনের ছয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে, যে তার মায়ের ওপর নির্যাতন ও মৃত্যু নিজ চোখে দেখেছে।

মায়ের মৃত্যুর পর ভয়ে কাঁপতে থাকা ছেলেটি বলে, ‘তারা প্রথমে মায়ের গায়ে কিছু একটা দিয়েছিল। তারপর তারা মাকে চড় মারে। এরপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বোঝার ভুলের খেসারত দিচ্ছে ভারত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত