Ajker Patrika

ইতিহাসের এই দিনে /নাদির শাহর দিল্লি দখল, হত্যাযজ্ঞ ও লুটের শুরু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

১৭৩৯ সালের ২০ মার্চ ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এ দিন পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারতে আগ্রাসন চালিয়ে মোগল সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লি দখল করে নেন। নাদির শাহ ১৭৩৬ থেকে ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পারস্য শাসন করেন। তিনি ছিলেন আফশারিদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ও ইরানের শাহ।

পারস্যে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন করে নিজের শাসন দৃঢ় করছিলেন। সময়টা ছিল ১৭৩৭ সাল। তখন তাঁর নজর পড়ে আফগানিস্তানের খিলজি এলাকার দিকে। ওই বছর তিনি খিলজি দখলে আগ্রাসন শুরু করেন। এই অভিযানে কান্দাহারের কাছে একটি শহর দখল করে নাদিরাবাদ নাম দেন তিনি। সেখানে দুর্গ স্থাপন করে খিলজিতে অভিযান চালান তিনি। খুব দ্রুতই আফগান খিলজিদের নেতা শাহ হুসেইন হোতাককে পরাজিত করে কান্দাহার দখল করেন নাদির শাহ।

এরপর ১৭৩৮ সালের ২১ মে নাদিরাবাদ থেকে কাবুলের পথে অগ্রসর হন নাদির শাহ। ১১ জুন তিনি গজনি পৌঁছান এবং পারস্য-মোগল সীমান্ত অতিক্রম করেন। মোগলদের তিনি জানান, ভারতের প্রতি তাঁর কোনো বৈরী মনোভাব নেই, তিনি শুধু আফগান বিদ্রোহীদের খুঁজছেন।

ভারতীয় ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ বলেন, মোগলদের অধীনে কিছু শাসক নিজেদের স্বাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিলেন। তাঁরা নাদির শাহকে ভারত আক্রমণে প্ররোচিত করেন। পারস্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ লরেন্স লকহার্টের মতে, নাদির শাহ বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি ভারতের সম্পদ লুট করে তাঁর সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন। কারণ, বিগত কয়েক বছরের ক্রমাগত যুদ্ধ পারস্যকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

অষ্টাদশ শতকের শুরুতে মোগল সাম্রাজ্য একাধিক রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়। ১৭০৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারত বিভক্ত হতে থাকে। পরবর্তী সম্রাট মুহাম্মাদ শাহর প্রতি নামমাত্র আনুগত্য প্রকাশ করলেও একাধিক রাজা ভেতরে ভেতরে মোগলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এ ছাড়া প্রথম বাজিরাওয়ের নেতৃত্বে মারাঠা সাম্রাজ্যের উত্থান মোগলদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। মারাঠারা ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে মুসলিম শাসনের অপরিহার্যতার প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মোগল শাসনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে থাকে।

অর্থনৈতিকভাবে ভারত তখনও বিশালাকারের সমৃদ্ধ কৃষিভিত্তিক ছিল। কিন্তু ক্রমাগত বিভক্তির কারণে শক্তি হারিয়ে আর্থিক সংকটে থাকা বিজেতার জন্য অত্যন্ত লোভনীয় শিকারে পরিণত হয়।

নাদির শাহ মোগল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে গজনির দক্ষিণে কারাবাগে অবস্থান নেন। তাঁর ছেলে নাসরুল্লাহ খানকে তিনি গোরবন্দ ও বামিয়ান এলাকার আফগানদের ওপর আক্রমণের জন্য পাঠান। নাদিরের আগমনের খবর শুনে গজনির গভর্নর পালিয়ে গেলে শহরের ধনী ও ধর্মীয় নেতারা উপঢৌকনসহ আত্মসমর্পণ করেন।

এরপর নাদির শাহ কাবুলের দিকে অগ্রসর হন। শহরের কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি শান্তিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে চাইলেও শারজা খান প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১০ জুন কাবুলে পৌঁছে নাদির শাহর বাহিনী শহরের সৈন্যদের আক্রমণের মুখে পড়ে। কিন্তু পরদিন নাদিরের বাহিনী কাবুল অবরুদ্ধ করে। তাঁদের আক্রমণে এক সপ্তাহ পর ১৯ জুন শহরের দুর্গের একটি অংশ ধসে পড়লে কাবুল আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

এরপর নাদির শাহ দিল্লির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৭৩৯ সালে কারনালের যুদ্ধে মোগল বাহিনীকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করেন। সম্রাট মুহাম্মদ শাহ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন এবং নাদির শাহর সঙ্গে দিল্লিতে প্রবেশ করেন। সেদিন ছিল ২০ মার্চ। নাদির শাহর হাতে শহরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। লাল কেল্লায় এক নারী রক্ষী নাদির শাহকে হত্যা করেছে বলে ২১ মার্চ রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে উত্তেজিত জনতা আফশারিদ বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার সৈন্যকে হত্যা করে।

২২ মার্চ সকালে নাদির শাহ দিল্লির সুনেহরি মসজিদে বসে তরবারি উঁচিয়ে সৈন্যদের দিল্লিতে গণহত্যার (কতল-এ-আম) নির্দেশ দেন। এর পরপরই দিল্লির নিরস্ত্র জনগণের ওপর আফশারিদ সেনারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। চাঁদনি চক, দরিবার, ফতেহপুরি, হাউজ কাজি, লাহোরি গেটসহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় নির্বিচারে হত্যা করা হয় সাধারণ মানুষকে।

ধর্ষণসহ অন্যান্য অবমাননার ভয়ে মুসলমানেরা আত্মহত্যা করেন বা একে অন্যকে হত্যা করেন। সমকালীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ যেমন ‘তারিখ-ই-হিন্দি’, ‘বায়ান-ই-ওয়াকাই’ ও ‘তাজকিরা’তে এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। মোগলদের ব্যাপক অনুরোধের পর হত্যাযজ্ঞ বন্ধের নির্দেশ দেন নাদির শাহ।

ইরানে ফিরে যাওয়ার সময় দিল্লি থেকে বিপুল সম্পদ লুট করে নিয়ে যান নাদির শাহ, যার মধ্যে ছিল কোহিনূর হীরা ও ময়ূর সিংহাসন। এ ঘটনার পর মোগল সাম্রাজ্য নামমাত্র টিকে ছিল। শিগগির আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে বিভক্তি ব্রিটিশদের ভারত দখলের পথ সুগম করে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হন ডা. উমর, তিন দিন পর লালকেল্লায় বোমা হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লালকেল্লা বোমা হামলায় জড়িত ডা. উমর নবি। ছবি: সংগৃহীত
লালকেল্লা বোমা হামলায় জড়িত ডা. উমর নবি। ছবি: সংগৃহীত

নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হন ডা. উমর নবি। শত চেষ্টা করেও পরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। এর তিন দিন পর দিল্লির লালকেল্লার কাছে এক আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। এখন এই হামলার মূল সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসছে তাঁরই নাম।

পুলিশ ডা. আদিল ও ডা. মুজাম্মিলকে গ্রেপ্তারের পরপরই উমর জানতে পারেন তাঁকে খোঁজা হচ্ছে। ওই দুই চিকিৎসকের জিজ্ঞাসাবাদের পরই হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার হয়, যার মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও রয়েছে।

জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার কয়াল গ্রামের মানুষ জানতে পেরেছে, ৩৩ বছর বয়সী চিকিৎসক উমরই সন্দেহভাজন আত্মঘাতী হামলাকারী। এর পর থেকেই স্তব্ধ হয়ে আছেন ডা. নবির পরিবারের সদস্যরা। তাঁর ভাবি মুজাম্মিল বলেন, ‘শুক্রবার নবি আমাদের ফোন করে বলেছিল, পরীক্ষার কাজে ব্যস্ত আছে, তিন দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে। আমরা তাঁকে পড়াশোনা করাতে অনেক কষ্ট করেছি। সে কোনো দিন রাজনীতি বা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এটা বিশ্বাস করা অসম্ভব।’

দিল্লির বোমা হামলায় ১২ জন নিহত ও প্রায় দুই ডজন মানুষ আহত হওয়ার পর জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ চিরুনি অভিযানে নামে।

কয়াল গ্রামে ডা. নবির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তাঁর মা ও দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। সূত্র জানিয়েছে, আত্মঘাতী হামলাকারীর ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য উমরের মায়ের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ তাঁর বাবাকেও পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে ডিএনএ পরীক্ষার উদ্দেশ্যে। মানসিক অবস্থার কারণে গতকাল তাঁকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

আলফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডা. নবির সহকর্মী ও বন্ধু ডা. সাজাদ বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে আছেন। পুলিশ তাঁকে কেবল উমরের বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে নাকি তিনিও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এ ছাড়া কয়েল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের সাম্বুরা গ্রামে পুলিশ আমির ও উমর রশিদ নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। পেশায় প্লাম্বার (নলমিস্ত্রি) আমিরকে এ ঘটনার মূল হোতা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ, তাঁর একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তাঁকে একটি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে, যা এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

আমিরের পরিবার বলছে, সে কখনো জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে যায়নি, তাই ফরিদাবাদের কোনো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠে না।

পরিবার জানায়, সোমবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং তৎক্ষণাৎ আমির ও উমরকে আটক করে। এখন পর্যন্ত পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তারা আসলেই কোনো সন্ত্রাসী ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল কি না।

এ ঘটনাগুলোর সূত্রপাত সোমবার পুলিশ অভিযান শুরু করার পর, যেখানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার হয়।

অক্টোবর ১৯ তারিখে শ্রীনগরের নওগামে জইশ-ই-মোহাম্মদের পোস্টার পাওয়ার পর থেকেই পুলিশ এই মামলা নিয়ে কাজ শুরু করে। স্থানীয় থানার সূক্ষ্ম তদন্তে এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের চিত্র সামনে আসে, যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ডা. আদিল।

তাঁকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁর কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে আনন্তনাগের এক হাসপাতালের আলমারি থেকে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার হয়। তার পর জিজ্ঞাসাবাদেই আরেক চিকিৎসক, আলফালাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. মুজাম্মিল আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুজাম্মিলের জবানবন্দির পরই পুলিশ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের হদিস পায়।

গত কয়েক দিনে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে এমন এক ভয়াবহ ‘উচ্চশিক্ষিত প্রথম শ্রেণির পেশাজীবীদের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের’ সন্ধান পেয়েছে, যারা আদর্শগতভাবে চরমপন্থা দ্বারা প্রভাবিত।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লালকেল্লা বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ফুয়েল অয়েল ও ডেটোনেটর ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে, যা ফরিদাবাদে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ উদ্ধারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে তদন্তভার জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) হাতে তুলে দিয়েছে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, নবি সম্ভবত অভিযানের পরিকল্পনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন আদিল আহমদ রাঠারের সঙ্গে। যিনি আনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক সিনিয়র রেসিডেন্ট এবং যাকে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লির পর পাকিস্তানের রাজধানীতে আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ১২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ২৫
ইসলামাবাদে আজ মঙ্গলবার আদালত এলাকায় আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। ছবি: এএফপি
ইসলামাবাদে আজ মঙ্গলবার আদালত এলাকায় আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের জি-১১ এলাকার জেলা ও দায়রা আদালত ভবনের বাইরে এক ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ইসলামাবাদের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে নিহতের তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি ইংরেজি দৈনিক ডন।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এ ঘটনাকে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই হামলাকে দেশের জন্য একটি ‘জেগে ওঠার বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের অবস্থায় আছি। যারা মনে করেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চল ও বেলুচিস্তানের দূরবর্তী এলাকায় কেবল এই যুদ্ধ লড়ছে, তাদের জন্য ইসলামাবাদের জেলা আদালতে আজকের এই আত্মঘাতী হামলাটি হলো জাগ্রত হওয়ার বার্তা।’

খাজা আসিফ আরও যোগ করেন, এই পরিস্থিতিতে কাবুলের শাসকদের সঙ্গে সফল আলোচনার জন্য বেশি আশা রাখা অর্থহীন হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ঘটনার ভিডিওগুলোতে নিরাপত্তাবেষ্টনীর পেছনে একটি দগ্ধ গাড়ির ধ্বংসাবশেষ থেকে আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে উঠতে দেখা যায়।

হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবী রুস্তম মালিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি যখন আমার গাড়ি পার্ক করে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছিলাম...ঠিক তখনই গেটে একটি বিকট শব্দ শুনতে পেলাম।’ বিস্ফোরণের পর সেখানে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

মালিক বলেন, ‘আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ প্রাঙ্গণের ভেতরে ছুটছিলেন। আমি গেটের ওপর দুটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল।’ বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশে থাকা গাড়িগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে এক ট্রাফিক সিগন্যালে একটি ধীরগতির গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সাদা রঙের হুন্দাই আই-২০ গাড়িটিতে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে ৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকাটি ছিল রাজধানীর ব্যস্ততম জায়গাগুলোর একটি। এ ঘটনায় এখনো কোনো গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। ভারত সরকার সরাসরি কোনো পক্ষকে দায়ী করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করতে পারেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ১৮
ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করার কথা ভাবছেন বলে জানা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০ কোটি ডলারের মানহানি মামলা করার হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সূত্রগুলো। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে হামলার আগমুহূর্তে ট্রাম্প সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন—এমন ভুল ধারণা তৈরি করার মতো তাঁর ভাষণ সম্পাদনা করায় বিবিসি গতকাল সোমবার ক্ষমা চাওয়ার পর বিষয়টি সামনে এল।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে—ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। ঘটনাটি ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হওয়ায় গত রোববার বিবিসির শীর্ষ দুই কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, ব্রিটিশ এই সম্প্রচার সংস্থাকে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে ২০২৪ সালের ওই ডকুমেন্টারি প্রত্যাহার ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য। এটি প্রচারিত হয়েছিল ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এর আগে মার্কিন গণমাধ্যমকে চুপ করাতে মামলা করার অভিযোগ উঠেছিল। তবে সাম্প্রতিক এই বিতর্ক আবারও আলোচনায় এনেছে বিবিসিকে। দীর্ঘদিন ধরে সংবাদমাধ্যমটিকে অনেকে ভালোবাসেন, আবার অনেকে পক্ষপাতের অভিযোগেও অভিযুক্ত করেন।

ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী দলের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, বিবিসিকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি এএফপিকে বলেন, বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে ও প্রতারণার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃত করেছে, যাতে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবেন, যারা মিথ্যা, প্রতারণা ও ভুয়া খবর ছড়ায়।

এ বিষয়ে বিবিসির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা চিঠিটি পর্যালোচনা করব এবং যথা সময়ে সরাসরি জবাব দেব।’

এদিকে, বিবিসির চেয়ারম্যান সামির শাহ ব্রিটিশ এমপিদের উদ্দেশে পাঠানো এক চিঠিতে স্বীকার করেছেন, ট্রাম্পের বক্তব্যের সম্পাদনা এমন ধারণা সৃষ্টি করেছে যেন তিনি সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বিবিসি এই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা চায়।’ এ সময় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, পুরো বিষয়টিকে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তদারকি ব্যবস্থায় সংস্কার আনা হবে।

গত রোববার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও নিউজ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেন। ট্রাম্প সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবিসির সাংবাদিকদের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ও ‘অসৎ’ বলে আখ্যা দেন। তাঁর প্রেস সচিব বিবিসিকে বলেন, শতভাগ ভুয়া খবর প্রচারকারী।

তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ভুয়া তথ্যের যুগে বিবিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাস ধরে রাখতে হলে বিবিসির দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি এবং ভুল হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লি গাড়ি বিস্ফোরণে জড়িতদের রেহাই নেই, মোদির কড়া হুঁশিয়ারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৪
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

নয়াদিল্লির লালকেল্লার কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই ঘটনার ষড়যন্ত্রকারীরা রেহাই পাবে না। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার ওই বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। মোদি বলেন, ‘আমাদের সংস্থাগুলো এই ষড়যন্ত্রের মূলে পৌঁছাবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, কেউই রেহাই পাবে না। সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে হাজির হয়েছি। গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লিতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, তা পুরো দেশকে মর্মাহত করেছে। নিহতদের পরিবারের শোক আমি বুঝতে পারছি। পুরো দেশ আজ তাদের পাশে।’

এর আগে গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে দিল্লির লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে এক ট্রাফিক সিগন্যালে একটি ধীরগতির গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সাদা রঙের হুন্দাই আই-২০ গাড়িটিতে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এতে ৯ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। আশপাশের বেশ কয়েকটি গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকা ছিল রাজধানীর ব্যস্ততম জায়গাগুলোর একটি।

সূত্র জানায়, গাড়িটির মালিক ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা উমর মোহাম্মদ। তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। উমর পেশায় চিকিৎসক। তবে তিনি টেলিগ্রাম অ্যাপে সক্রিয় ‘এক উগ্রপন্থী চিকিৎসক দলের’ সদস্য ছিলেন। ওই দলটির সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।

বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রতিবেশী রাজ্য হরিয়ানার ফরিদাবাদ পুলিশ এক কাশ্মীরি চিকিৎসকের ভাড়া করা দুটি ঘর থেকে ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক ও দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, ওই চিকিৎসকের নাম মুজাম্মিল শাকিল। তাঁর সঙ্গে আরেক কাশ্মীরি চিকিৎসক আদিল আহমদ রাথারসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তারা জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের সঙ্গে যুক্ত একটি ‘হোয়াইট-কলার টেরর মডিউলের’ সদস্য। এই নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ছিল কাশ্মীর, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশজুড়ে।

উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলোর মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট ও সালফার। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দিল্লির লাল কেল্লা সংলগ্ন বিস্ফোরণের সঙ্গেও এই ‘হোয়াইট-কলার মডিউলের’ যোগ পাওয়া গেছে। উমরও ওই নেটওয়ার্কের সদস্য ছিলেন বলে ধারণা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।

এর আগে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর মোদি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। হামলার দুই দিন পর বিহারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের কাছে বলতে চাই—ভারত প্রতিটি জঙ্গি, তাদের সহযোগী ও মদদদাতাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে।’

মোদি আরও বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের তাড়া করব। ভারতের মনোবল ভাঙা যাবে না। সন্ত্রাসবাদের কোনো পরিণতি ছাড়া যাবে না। বিচার নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। গোটা দেশ এই অঙ্গীকারে একতাবদ্ধ, আর মানবতার পক্ষের সবাই আমাদের সঙ্গে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাসা থেকে গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গের তরুণী ‘যুব মহিলা লীগের সদস্য’

চার জেলায় কর্মী নেবে সিটি ব্যাংক, আবেদন শেষ ১৬ নভেম্বর

ঘুষ হিসেবে নেওয়া টাকা ভাগাভাগিতে ফাঁকি দেন না তিনি

বিএনপির ফাঁকা রাখা ঢাকার আসনে এনসিপির মনোনয়নপত্র নিলেন তাসনিম জারা

ভারতীয় গণমাধ্যমে বলিউডের ‘হি-ম্যান’ ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুর খবর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত