Ajker Patrika

ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে রুশ বিমান বিধ্বস্ত: যেসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি

আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ০৬
ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে রুশ বিমান বিধ্বস্ত: যেসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি

গোলাগুলি করে যেমন যুদ্ধ হয়, তেমনি হয় তথ্য নিয়েও। বর্তমান বিশ্বে দুই ধরনের যুদ্ধই চলছে। এর মধ্যে কোন তথ্য সত্য, কোনটি মিথ্যা—তা নির্ধারণ করা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে যায়। গতকাল বুধবার রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে এই তালিকায় একটি সংযোজন হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষের করা দাবির পরও মিলছে না কিছু প্রশ্নের উত্তর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এমন কিছু বিষয়। বলা হয়েছে, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে রাশিয়ার। এমনকি, ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনও একটি মিথ্যা দাবির ভিত্তিতেই শুরু করেছিল মস্কো। বলা হয়েছিল, নাৎসিদের শাসনব্যবস্থায় ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীরা গণহত্যার শিকার হতে পারে।

তার অর্থ এই নয় যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ক্রেমলিনের প্রতিটি শব্দই অসত্য। বৈশ্বিক রাজনীতিতে যেকোনো পক্ষেরই দাবি ও অভিযোগ সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

গতকাল যেমন রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে রুশ ইউশিন আইএল-৭৬ সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আরআইএ। বলা হয়েছিল, বিমানটিতে ৬৫ জন ইউক্রেনীয় সেনা ছিলেন। যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাদের ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন। আরোহীদের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য দেয়নি আরআইএ।

কিন্তু এই খবরকে নিশ্চিত করেনি কিয়েভ। আর রাশিয়াও তাদের দাবির সপক্ষে এখনো কোনো প্রমাণ দেখায়নি। ক্রেমলিনের দাবির পরপরই রুশ সংসদ সদস্য আন্দ্রেই কার্তাপোলভ বলেন, ইউক্রেন তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বিমানটিকে ভূপাতিত করেছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্র বা জার্মানির তৈরি।

কার্তাপোলভের দাবির অর্থ হচ্ছে, পশ্চিমাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়েছে সেই রুশ বিমান। অর্থাৎ, ৬৫ যুদ্ধবন্দীর নিহত হওয়ার দায় ইউক্রেনের দিকেই যায়। কিন্তু রুশ সংসদ সদস্য তার এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

ইউক্রেন তখনো মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকায় নীরবতাকে অনিবার্যভাবে পূরণ করেছে রুশ কোলাহল। তাদের দাবি, ইউক্রেন পরিকল্পিতভাবেই তাদের সেনাদের হত্যা করেছে।

কিয়েভে শোনা গেছে, বন্দিবিনিময়ের পরিকল্পনা ছিল বুধবারেই। কিন্তু কিয়েভ সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তথ্য খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়। কিন্তু কিয়েভ নিশ্চিত করে কিছুই বলেনি। তাতে ইউক্রেনের হিসেবে ভুল করার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এর আগে, ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম ইউক্রেনস্কা প্রাভদা সশস্ত্র বাহিনীর একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছিল, রুশ বিমানটি এস৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করছিল। সে হিসেবে বিমান বিধ্বস্ত করাকে সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পরে প্রতিবেদনটি মুছে ফেলে সংশোধনীতে ইউক্রেনস্কা প্রাভদা বলে, তারা খবরের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।

আজ বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের দুটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া গেছে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ এবং ইউক্রেনীয় মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের বিবৃতি দুটিতে বলা হয়, বিমানটিকে তারা বিধ্বস্ত করেও থাকতে পারে। কিন্তু কেউই সরাসরি এ কথা বলেনি। বিমানে কারা ছিল সে সম্পর্কে কিয়েভ না জানলেও তারা নিশ্চিত করেছে, বন্দিবিনিময়ের কথা থাকলেও গতকাল তা ঘটেনি।

বিবৃতি দুটিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া প্রায়ই বলে, কোন রুটের কোন বিমানে বন্দিবিনিময় করা হবে। কিন্তু সেসবের বেশির ভাগই মিথ্যা। কেবল বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা এসব বলে থাকে। বুধবার বন্দিবিনিময়ের কোনো তথ্যই দেয়নি রাশিয়া।

তা ছাড়া, রাশিয়া সম্প্রতি বেলগোরোদ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে। গতকাল যেটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সেই মডেলের বিমানগুলোতে করেই সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া।

তাই উভয় পক্ষ থেকে অনেক দাবি করা হলেও কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি। বিমানে কারা ছিল, কিয়েভ এ-সম্পর্কে কী জানে বা কিয়েভের কোন কর্মকর্তারা সব জানার পরও মুখ খুলছেন না—এসব প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত