জিনাতুন নুর
পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।
এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।
পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।
ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।
আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ
পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন বিশ্বের খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মযাজক পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে আজ শনিবার রোমের রাস্তায় ও ভ্যাটিকান সিটিতে আনুমানিক ৪ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারাও পোপ ফ্রান্সিসকে বিদায় জানাতে ভ্যাটিকানে মিলিত হয়েছিলেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর রোমের সড়ক বেয়ে এক বিষণ্ণ শোকযাত্রাসহ পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ শতাব্দীর রোমান গির্জা সান্তা মারিয়া ম্যাজিওর বাসিলিকায়। শত বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি প্রথা ভেঙে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অর্থাৎ ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের বাইরে সমাহিত হলেন। সাধারণত পোপদের ভ্যাটিকান সিটির ভেতরে সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার নিচেই সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু ফ্রান্সিস নিজেই চেয়েছিলেন, যেন তাঁকে শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত সেন্ট মেরি মেজর নামে পরিচিত 'বাসিলিকা দি সান্তা মারিয়া ম্যাজিওরে' ‘অনাড়ম্বর’ কবরে সমাহিত করা হয়।
২০১৩ সালে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত নিজ দেশ আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস অঞ্চলের আর্চ বিশপ ছিলেন। তাঁর জন্য শোক জানাতে আর্জেন্টিনা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চার্চ, ক্যাথেড্রাল ও উন্মুক্ত স্থানে ভিড় করেন ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীরা।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে যথার্থই বলেছেন, ফ্রান্সিস মানুষের মধ্যে ‘দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন’। তিনি এমন একজন ছিলেন, যিনি সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছেন। আর তাইতো কোনো অন্য কোনো পোপকে শেষ বিদায় জানাতে এতো মানুষের জমায়েত হয়নি। ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী ও প্রান্তিক— সবাই সমবেত হয়েছিলেন। এখন পরবর্তী পোপ বা ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান কে হবেন, সবার নজর থাকবে সেদিকে।
ইতালির রাজধানী রোমের ভেতরেই আরেকটি ব্যতিক্রমী রাষ্ট্র এই ভ্যাটিকান সিটি। এটি ক্যাথলিকতন্ত্রের সর্বোচ্চ প্রতীক, যা একইসঙ্গে বিশ্বের খ্রিস্টানদের গীর্জা ও রাষ্ট্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। এই রাষ্ট্রের প্রধান হলেন পোপ, তিনি গীর্জারও প্রধান। ভ্যাটিকান সিটি যেমন বিশ্বের অন্যতম ছোট রাষ্ট্র, তেমনি এটি প্রাচীন ধর্মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রগুলোর মধ্যে সর্বশেষ। রাজতন্ত্র ও যাজকতন্ত্র একাকার হয়েও ধর্ম ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার ভারসাম্যের অনন্য উদাহরণ এটি। ভ্যাটিক্যান সিটির রাজনৈতিক কাঠামো কীভাবে কাজ করে এবং পোপ কীভাবে নির্বাচিত হন, তাঁর ভূমিকা কী— এসব বিষয় জানতে ও জানাতেই আজকের এই নিবন্ধ।
এজার ভাটিকানুস ও পোপীয় রাষ্ট্র
ভ্যাটিকান সিটিতে চিরকালই পোপের শাসন ছিল না। এক সময় এই ক্ষুদ্র রাষ্ট্রটির নামও ভ্যাটিকান ছিল না। আগে এই অঞ্চলকে এজার ভ্যাটিকানুস বলা হত। ভ্যাটিকান অবেলিস্ক (স্মৃতিস্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত রোম সম্রাট নিরুর সার্কাস ছিল এখানকার আকর্ষণ। সেটাই ভ্যাটিকানের আধুনিক নগর রাষ্ট্রে একমাত্র অবশেষ।
যে এলাকাটিকে এখন সেন্ট পিটার্স স্কোয়ার বলা হয়, সেখানে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য সেন্ট পিটার্সকে ক্রূশবিদ্ধ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্রাট কন্সটান্টিনের সময় রোম খ্রিষ্টধর্মে রূপান্তরিত হলে সেন্ট পিটার্সের কথিত সমাধিস্থলের ওপর ৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট পিটার্স র্গিজা গড়ে তোলা হয়। এই গির্জাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পোপতন্ত্রের রাষ্ট্র, পোপীয় রাষ্ট্রের প্রধান হন পোপ। তিনি একইসঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয় শাসক।
৭৫৬ থেকে ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের বিশাল অংশজুড়ে ছিল এই পোপীয় রাষ্ট্র। প্রায় এক হাজার বছর ধরে রোমের বিপরীত দিকে এক রাজপ্রাসাদ ছিল পোপের বাসভবন ও কর্মস্থল। চতুর্দশ শতকে কিছু সময়ের জন্য ফ্রান্সের অ্যাভিনন থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হতো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে নবগঠিত ইতালীয় সাম্রাজ্য পোপীয় রাষ্ট্রকে দখল করে নেয় এবং ইতালীর নতুন রাজা পোপের শাসন খর্ব করে।
এভাবেই প্রায় ৬০ বছর ধরে ভ্যাটিকানের চার দেয়ালের মাঝে আটকে ছিল পোপতন্ত্র। তবে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। লাতেরান চুক্তির মাধ্যমে ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি ভ্যাটিকান সিটিকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর পোপতন্ত্র বিবর্তিত হলেও নগররাষ্ট্রটির শাসন হোলি সি বা পোপের অধীনেই রয়েছে। নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে ভ্যাটিকানের যে গোড়াপত্তন শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন
ভ্যাটিকানের নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পোপ নামে পরিচিত রোমের বিশপের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। এই নগর রাষ্ট্র ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তির শাসন হলেও হোলি সি কোনোভাবেই তার সমতুল্য নয়। সরকার, কার্ডিনাল, বিশপ ও পোপ নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানের পদবী হোলি সি। রাষ্ট্র ছাড়াও হোলি সি টিকে থাকতে পারে। এটিই একমাত্র সত্ত্বা যা ক্যাথলিক চার্চের সহস্রাব্দের বেশি সময়ের শাসনকাল ধরে টিকে ছিল।
ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্র এমন এলাকা, যেখানে বসে হোলি সি প্রজাদের শাসন করতে পারে। আর প্রজা মানে সকল ক্যাথলিক ধর্মানুসারী। ভ্যাটিকানের প্রশাসন ও হোলি সি-উভয় ক্ষেত্রেই পোপের নিরূঙ্কুশ ক্ষমতা। তবে সকল রাজতন্ত্রের মতো পোপ প্রশাসনের সব বিষয়ে নাক গলান না। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনের জন্য সরকারের অন্যান্য সদস্যদের হাতেও ক্ষমতা অর্পণ করেন।
নির্বাহী ক্ষমতা, আইনসভা ও বিচারিক ক্ষমতার চর্চা ভ্যাটিকান সরকারে কিছু প্রতিষ্ঠানের হাতেই। তবে তাত্ত্বিকভাবে হলেও এসব প্রতিষ্ঠানকে প্রধান যাজক বা পোপের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। যদিও পোপের প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি শাখার প্রধান ব্যাক্তিদের সঙ্গে আরও বেশ কিছু সদস্য কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
পোপ ও ভ্যাটিকানের নির্বাহী শাখা
ভ্যাটিকানের নিরূঙ্কুশ রাজা ও ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন পোপ। বেশ কিছু নির্বাহী ক্ষমতা গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট বা ভ্যাটিকান সরকারের প্রধানের কাছেও অর্পণ করা হয়। ভ্যাটিকানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী পোপ। কিন্তু তিনি রোমান কিউরিয়া হিসেবে পরিচিত ক্যাথলিক গীর্জা বা হোলি সির গভর্নিং বডি মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন।
১৯৫২ সালে ভ্যাটিকান সিটির গর্ভনর পদের নাম বদলে ভ্যাটিকান গভর্নরটের প্রেসিডেন্ট নাম দেওয়া হয়। পোপের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী শাখার এই শীর্ষ নেতার হাতেই ভ্যাটিকান নগর-রাষ্ট্রের পরিচালনার ভার। তিনি পন্টিফিক্যাল বা যাজকীয় কমিশনেরও প্রধান। এই কমিশন ভ্যাটিকানের প্রধান আইন প্রণয়নকারী সংস্থা।
গভর্নরটের প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেন পোপ। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে এই পদে আছেন সিস্টার রাফায়েলা পেত্রিনি। ভ্যাটিকানের ইতিহাসে এই পদে তিনিই প্রথম নারী। সরাসরি ভ্যাটিকান বা হোলি সির সঙ্গে সম্পর্কিত হোক বা না হোক-পোপ ও প্রেসিডেন্ট উভয়েরই রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে উভয় দিকের নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই সেখানে সিদ্ধান্ত হয়।
পোপ পদাধিকারবলে ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের প্রধান হলেও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে রাজা নন, নির্বাচিত রাজা। মৃত্যু কিংবা অবসরের আগ পর্যন্ত পোপের পদ বহাল থাকে। কলেজ অব কার্ডিনালস বা পাপাল কনক্লেভ নামের ইলেক্টরাল বডি বা নির্বাচকমন্ডলী নতুন পোপ নির্বাচন করে থাকে। বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চের পাদরীদের নিয়ে গঠিত এই ইলেক্টোরাল বডি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বে ২৬৩ জন কার্ডিনাল পাদরী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১২৪ জন কার্ডিনাল ইলেক্টর। তাঁরাই কনক্লেভে বা পোপ নির্বাচনের সভায় অংশ নিতে পারেন।
পোপ নির্বাচিত করার জন্য কার্ডিনালরা ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলে বসেন। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সিস্টিন চ্যাপেলে আটকে রাখা হয়। বাইরে থেকে সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের চিমনির ধোঁয়া দেখে নির্বাচন শেষ হয়েছে বোঝা যায়। ব্যালট পেপার পুড়িয়ে চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। যখন নতুন পোপ নির্বাচিত হয়, তখন সাদা ধোঁয়া , তার আগ পর্যন্ত চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে। ব্যালট পেপার পোড়ানোর কাজটি সকাল ও রাতে দুইবার করে করা হয়।
ভ্যাটিকানের আইন ব্যবস্থা
এককক্ষবিশিষ্ট পন্টিফিক্যাল কমিশন ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য আইন প্রণয়ন করে থাকে। সাতজন কার্ডিনালের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিশন ভ্যাটিকান সিটি ও হলি সির জন্য নতুন আইন ও নীতির প্রস্তাব করে। কমিশনের প্রতিটি পদ পাঁচ বছর মেয়াদী হয়। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ পন্টিফিক্যাল কমিশনের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধানের পাশাপাশি আইনসভার প্রধান হিসেবেও কাজ করেন।
নতুন আইন পাশ হলে সেটাকে সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট বা পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমোদিত হতে হয়। সেক্রেটারিয়েট অব স্টেট হলো রোমান কিউরিয়ার প্রধান অঙ্গ। এটি হলি সির পক্ষে সকল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কাজ করে।
এই সেক্রেটারিয়েটের প্রধান একজন কার্ডিনাল, তাকে সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ডিকাস্ট্রি বা কিউরিয়ার সুনির্দিষ্ট তিনটি শাখা পরিচালনা করেন। এর মধ্যে আছে সাধারণ বিভাগ, পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিভাগ ও কূটনৈতিক কর্মী বিভাগ। বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্র পারোলিন ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভ্যাটিকান নগর রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য সব আইন সেক্রেটারিয়েট অব স্টেটকে অনুমোদন করতে হয়। কারণ ক্যাথলিক গির্জার আইন এই রাষ্ট্রেরও আইন।
ভ্যাটিকান সিটির প্রশাসন পরিচালনার জন্য মৌলিক আইন আছে। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই দেওয়ানি আইন জারি করার পাশাপাশি ভ্যাটিকানের নতুন আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সকল আইন বাতিল করেন। ১৮৮৯ সালের ইতালীয় মৌলিক আইনের উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভ্যাটিকান সিটির দন্ডবিধি আইন ও দেওয়ানি আইন কার্যকর ছিল। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনতে এবং অর্থ পাচার ও যৌন র্নিযাতনের মতো অপরাধের আধুনিক শাস্তি অন্তর্ভূক্ত করতে পোপ ফ্রান্সিস এসে আইন সংশোধন করেন।
আগে প্যাস্টর বোনাস নামে পরিচিত ঐশী সংবিধান অনুযায়ী রোমান কিউরিয়া ও ক্যাথলিক চার্চের শাসন পরিচালিত হয়। পোপকে বিশ্বব্যাপী র্চাচ পরিচালনায় সাহায্য করতে এই সংবিধান অনুযায়ী বিধি ও আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০২২ সালে সেটি পরিবর্তন করে প্রেডিকেট ইভাঞ্জেলিয়ামকে (প্রিচ দ্য গসপেল) ভ্যাটিকানের ঐশী সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এছাড়াও ২০০৮ সালের পর ভ্যাটিকান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইতালীয় সরকারের আইন গ্রহণ করেনি। বরং ইতালিতে যখনই নতুন কোনো আইন প্রর্বতিত হয় তখন ভ্যাটিকান এটি র্পযালোচনা করে এবং র্চাচের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যর্পূণ হলেই তা গ্রহণ করে। না হলে ভ্যাটিকান সে আইন বাস্তবায়ন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার রাখে।
ভ্যাটিকানের বিচার ব্যবস্থা
ভ্যাটিকানের আইন প্রয়োগ করে বিচার বিভাগ। একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন বিচারপতি নিয়ে ভ্যাটিকানের ট্রাইবুনালটি গঠিত। পোপ ফ্রান্সিস ২০২০ সালে একজন বিচারপতির সংখ্যা বাড়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাছাই করা অধ্যাপক ও বিচার বিভাগীয় র্কমর্কতারা ট্রাইবুনালের সদস্য হন। পোপ তাঁদের বাছাই করে নিয়োগ দিলেও তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
২০২০ সালের পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কারের ফলে বিচারে সহায়তার জন্য রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তার পদ সৃষ্টি করা হয়। ভ্যাটিকানের অন্যান্য বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল ও আইন কর্মকর্তার জবাবদিহিতা শুধুমাত্র পোপের কাছে সীমাবদ্ধ।
এই আইন ভ্যাটিকানের বিচার আরও সহজ ও শক্তিশালী করে। এর ফলে আর্থিক ও ফৌজদারি অপরাধ আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। এই ধরনের অপরাধের বিচার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিধি ও পদ্ধতি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে মানসম্মত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও আছে।
ভ্যাটিকানের আইনপ্রয়োগ করে নগর-রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী জেন্ডামেরি। এটি বেসামরিক বাহিনী হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স আর উচ্চতার বাধ্যবাধকতা আছে। এই বাহিনীর সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করতে হয়। প্রায় ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ছোট বাহিনী অন্য যেকোনো দেশের সাধারণ পুলিশ বহিনীর মতোই কাজ করে। পাশাপাশি এরাই ভ্যাটিকানের সিমান্ত রক্ষা করে।
ভ্যাটিকানে অপরাধের হার কম। শুধু ভ্যাটিকান সিটিতে কারাগারের সংখ্যাও কম। তাই লাতেরান চুক্তির শর্তাবলী অনুসারে ভ্যাটিকানের অপরাধীদের ইতালির কারাগারে রাখা হয়।
এক নজরে ভ্যাটিকান রাজনৈতিক কাঠামো
নিয়ম অনুযায়ী ভ্যাটিকান সিটি নামে ছোট রাষ্ট্রের শাসক পোপ হলেন নির্বাচিত রাজা। এর সরকারের অভ্যন্তরীণ আরও বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো এটিকে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে টিকিয়ে রেখেছে— যেমন ভ্যাটিকান সিটি (রাষ্ট্র) ও হোলি সির (চার্চ) স্বতন্ত্র অস্তিত্ব।
ভ্যাটিকান বিশ্বব্যাপী চার্চের সরকার হিসেবে কাজ করলেও এটি এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা, বিচার বিভাগ ও বৈদেশিক সম্পর্ক।
মোটের উপর একটি ধর্মীয় ক্ষুদ্ররাষ্ট্র কীভাবে পরিচালিত হয় ভ্যাটিকান হচ্ছে তার চমৎকার কেস স্টাডি। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সাথে মিশ্রিত ধর্মীয় রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার অতীত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় ঐশ্বরিক ও অনন্য এক চিত্র তুলে ধরে।
লেখক: ইতিহাসে স্নাতকোত্তর, ইডেন কলেজ
কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি গত মার্চে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর মাধ্যমে তিনি সেই বিরল গোষ্ঠীতে যোগ দেন, যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান থাকার পর দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কার্নি ছাড়াও আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাবেক গভর্নর নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়
১ ঘণ্টা আগেনেদারল্যান্ডসের রটারডামে একটি জাদুঘরে আমেরিকান শিল্পী মার্ক রথকোর আঁকা একটি চিত্রকর্ম নষ্ট করেছে এক শিশু। চিত্রকর্মটির বর্তমান মূল্য কয়েকটি কোটা পাউন্ড!
১ ঘণ্টা আগেবিভ্রাটের কারণে ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয় জনজীবন। স্পেনের মাদ্রিদে শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০০টি লিফট আটকে পড়ে। আটকে পড়াদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট এবং অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শহরজুড়ে প্রায় ১৬৭টি জরুরি সেবা দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রাটে
১ ঘণ্টা আগেকানাডার জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে দলটি। এ নিয়ে দলটি টানা চতুর্থবার জিতল। বিপরীতে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পলিয়েভর হার স্বীকার করে নিয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগে