Ajker Patrika

টিপু সুলতানের পরিবার থেকে ব্রিটিশ গুপ্তচর, নূরের মুখ ফরাসি ডাকটিকিটে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নূর ইনায়াত খান। ছবি: সংগৃহীত
নূর ইনায়াত খান। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে অবদান রাখা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ গুপ্তচর নূর ইনায়াত খানকে সম্মান জানাতে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ফ্রান্স সরকার। ১৮ শতকের মাইসোরের শাসক টিপু সুলতানের বংশধর নূর ইনায়াত খানই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনো নারী যিনি ফ্রান্সে এমন সম্মান পেলেন।

ফরাসি ডাক বিভাগ লা পোস্তে এ মাসে যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে ‘ফিগারস অব দ্য রেজিস্ট্যান্স’ নামের যে সিরিজের ডাকটিকিট প্রকাশ করে। যাদের নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, নূর তাদেরই একজন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেছে নেওয়া হয় এই বীর নারী ও পুরুষদের।

নূর ইনায়াত খানের জীবনের ওপর লিখিত ‘স্পাই প্রিন্সেস: দ্য লাইফ অব নূর ইনায়াত খান’—বইয়ের লন্ডনভিত্তিক লেখিকা শ্রাবণী বসু বলেন, ‘এই বিশেষ সময়ে ফ্রান্স নূর ইনায়াত খানকে সম্মান জানিয়েছে জেনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্যারিসে বড় হয়েছেন, যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডে গিয়ে যোগ দিয়েছেন যুদ্ধ প্রচেষ্টায়। এখন তাঁর মুখ ডাকটিকিটে দেখা যাবে, এটি সত্যিই ঐতিহাসিক।’

প্রতিটি ডাকটিকিটে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো ছবির ভিত্তিতে তৈরি নকশা। নূরের ডাকটিকিটে দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ উইমেন্স অক্সিলিয়ারি এয়ার ফোর্সের (ডব্লিউএএফ) ইউনিফর্মে তাঁর প্রতিকৃতি। শ্রাবণী বসু আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে ব্রিটেন তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল। এখন ব্রিটেন ও ফ্রান্স—দুই দেশেই তাঁর নামে ডাকটিকিট ছাপা হয়েছে। ভারতেরও উচিত তাঁর পূর্বপুরুষের দেশ হিসেবে নূরের নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা।’

নূর-উন-নিসা ইনায়াত খান ১৯১৪ সালে রাশিয়ার মস্কোতে জন্ম নেন। তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয় সুফি সাধক, মা আমেরিকান। শিশু বয়সে তাঁর পরিবার লন্ডনে চলে আসে। পরে নূর বড় হন প্যারিসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স পতনের পর নূরের পরিবার ইংল্যান্ডে পালিয়ে যায়, আর নূর যোগ দেন ডব্লিউএএএফ-এ।

১৯৪৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নূর ইনায়াত খানকে নিয়োগ দেওয়া হয় ব্রিটিশ বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল অপারেশনস এক্সিকিউটিভে (এসওই)। এ সংস্থার দায়িত্ব ছিল গুপ্তচরবৃত্তি, ধ্বংসাত্মক অভিযান ও জার্মান অধিকৃত অঞ্চলে তথ্য সংগ্রহ।

নূর ১৯৪৩ সালের জুনে জার্মান অধিকৃত ফ্রান্সে পাঠানো প্রথম নারী রেডিও অপারেটর হিসেবে সেখানে কাজ শুরু করেন। একই বছর তিনি নাৎসিদের হাতে ধরা পড়েন। পরে তাঁকে দাখাউ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়, যেখানে ভয়াবহ নির্যাতনের পর ১৯৪৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে তাঁকে হত্যা করা হয়।

তাঁর অসামান্য সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে নূর ইনায়াত খান পেয়েছেন ফরাসি রেজিস্ট্যান্স মেডেল, ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ক্রোয়া দ্য গেরে এবং ১৯৪৯ সালে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে মরণোত্তর জর্জ ক্রস।

ফ্রান্সের সর্বশেষ এই ডাকটিকিট সিরিজ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসি প্রতিরোধ আন্দোলনে অবদান রাখা নূরদেরই স্মরণ করছে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘এই মানুষগুলোই “না” বলেছিল। তারা জড়িয়েছিল গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে, উদ্ধার মিশনে, ধ্বংসাত্মক অভিযানে...নিজের জীবন বাজি রেখে তারা দেশের সম্মান রক্ষা করেছে এবং তাকে বিজয়ের পক্ষে দাঁড় করিয়েছে।’

এই সিরিজের ডাকটিকিটে আছেন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ‘ফ্রঁস লিবেরে’ প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জাঁ-পিয়ের লেভি এবং ব্রিটিশ-ফরাসি এসওই এজেন্ট ভায়োলেট স্যাবো, যিনি র‍্যাভেন্সব্রুক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...