Ajker Patrika

ভাগনার বিদ্রোহ: পুতিনের শাসনামলে বড় আঘাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভাগনার বিদ্রোহ: পুতিনের শাসনামলে বড় আঘাত

ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনা গ্রুপ ভাগনারের বিদ্রোহে ভুগলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দশকের শাসনামলে এমন বিদ্রোহের মুখোমুখি হননি সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী রুশ নেতা। যদিও ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের ৩৬ ঘণ্টার এই বিদ্রোহ জ্বলে ওঠার আগেই নিভে গেছে। 

প্রিগোঝিন গত শনিবার দাবি করেছিলেন, রোস্তভ শহরের দক্ষিণাঞ্চলীয় সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তাঁর বাহিনী। এরপর মস্কোর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ভাড়াটে সেনারা। পরে মধ্যরাতে তার টেলিগ্রাম চ্যানেলের বার্তা থেকে জানা গেল, রক্তপাত এড়াতে বিদ্রোহের অবসান হয়েছে। পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে দাঁড়ায় ভাগনার। সেই সঙ্গে গ্রুপটির প্রধান প্রিগোঝিন বেলারুশে চলে যাবেন বলেও জানান। 

২৩ বছর হলো ক্ষমতায় পুতিন। এই ২৩ বছরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্রোহ বেড়ে ওঠার আগেই ঝরে গেলেও এর পরিণতি কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। 

কেন ভাগনারের বিদ্রোহ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ভাগনার মুখ্য ভূমিকা রেখে আসছে। তারা অসংখ্য ইউক্রেনীয় অঞ্চল দখলে রুশ বাহিনীকে সহায়তা করেছে। তবে গ্রুপটির মালিক প্রিগোঝিনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ রয়েছে। তিনি বেশ কয়েকবার রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্জেই শোইগু এবং সেনাবাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি জেরাসিমভের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি বারবার এই দুজনকে অযোগ্য এবং ইউক্রেনে যুদ্ধরত ভাগনার ইউনিটকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করার অভিযোগ করেছেন। 

গত ৫ মে প্রিগোঝিন গোলাবারুদ-সংকটে ইউক্রেনের বাখমুত থেকে সেনা প্রত্যাহারের হুমকি দেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে। হুমকি দিয়ে এক ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি নিহত ভাগনার সেনাদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ চাইছেন। 

প্রিগোঝিনের দাবি, গত শুক্রবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনী একটি ভাগনার ক্যাম্পে হামলা করে তাঁদের অনেক লোককে হত্যা করে। তিনি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর বাহিনী রাস্তা অবরোধ এবং বিমানসহ যেকোনো প্রতিরোধকে ধ্বংস করবে। এরপর ভাগনার সেনারা রোস্তভ-অন-দনের সেনা হেডকোয়ার্টার দখল করে নেন এবং কিছু সেনা মস্কোর দিকে অগ্রসর হন। 

প্রিগোঝিনের ভবিষ্যৎ 
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে এবং ভাগনারের যোদ্ধারা বিদ্রোহের জন্য কোনো আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হবেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, ভাড়াটে দলটির প্রধানের জন্য বিপদ শেষ হয়নি। 

মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর মাইক লিয়ন্স (অব.) বলেছেন, ‘ভাগনার একটি স্বাধীন ফাইটিং কোম্পানি। তাদের ভালো সুবিধা দেওয়া হতো, আলাদা পোশাক ছিল তাদের। আমি মনে করি না যে, তাঁরা খুব সহজে রুশ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হবেন। সেখান থেকে তাঁদের ফেরত পাঠানো হবে। তাই আমি মনে করি, একটি সমস্যা হতে চলেছে।’ 

মাইক লিয়ন্স আরও বলেন, ‘হয়তো কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন। কেউ কেউ আবার সমস্যা করার চেষ্টা করবেন, ইউক্রেনকে তাঁরা তথ্য সরবরাহ করবে। কারণ তাঁরা প্রিগোঝিনের প্রতি অনুগত, দেশের প্রতি নয়, মিশনের প্রতি নয়। আমার মনে হয়, আমরা অনেক কিছু দেখছি। আবার এমন অনেক প্রশ্ন আছে, যার উত্তর এখনো নেই।’ এদিকে আরেক অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল পিটার জাওয়াক বলেছেন, এটা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে দুটি অস্তিত্বের লড়াই চলছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত